<p>পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল।</p> <p>কাননে কুসুম কলি, সকলি ফুটিল।।</p> <p>রাখাল গরুর পাল, ল’য়ে যায় মাঠে।</p> <p>শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।।</p> <p>মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘পাখি সব করে রব’ কবিতার এই পঙক্তিগুলো মনে করিয়ে দেয় পাখির সঙ্গে আমাদের সুগভীর সম্পর্কের কথা। গ্রামের সকালে ‘টু-ইট, টু-ইট, টু-ইট’ পাখির শব্দে ঘুম ভাঙে সবার। পুকুরপারে হাতমুখ ধুতে গিয়ে চোখে পড়ে কত পাখি। মাছরাঙা এর মধ্যে অন্যতম। মাছরাঙা শুধু একটি পাখি নয়, যেন প্রকৃতির এক জীবন্ত কবিতা। এ জন্যই হয়তো সুকুমার রায় লিখেছিলেন ‘রূপ যদি চাও যাও না কেন মাছরাঙার কাছে, অমন খাসা রঙের বাহার আর কি কারো আছে?’</p> <p>মাছরাঙা যেন রংধনুর ছোঁয়া পেয়েছে। নীল, সবুজ, সাদা, কমলা ও কালোর অসাধারণ মিশেল পাখিটির পালকে।</p> <p>নদীর ধারে বা জলাশয়ের পাশে ছোট গাছের ডালে তীক্ষ দৃষ্টিতে শান্ত হয়ে বসে থাকে মাছরাঙা। দেখে যেন মনে হয় ধ্যানমগ্ন ঋষি। শিকারের অবস্থান বুঝতে পারলেই বিদ্যুতের গতিতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নিখুঁতভাবে শিকার ধরে। শিকার ধরা হয়ে গেলে তা নিয়ে আবারও গাছের ডালে ফিরে আসে। ছোট মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়—সবই আছে পাখিটির খাদ্যতালিকায়। পৃথিবীতে সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছরাঙা আছে। বাংলাদেশে আছে প্রায় ১২ প্রজাতির। নীলকান মাছরাঙা, সাদা বুক মাছরাঙা, লাল মাছরাঙা, ছিট/পাকড়া মাছরাঙা, মেঘ হও মাছরাঙা, সবুজ মাছরাঙা, কালো মাছরাঙা, বাদামি মাছরাঙা, দারুচিনি মাছরাঙা, সাদা গলা মাছরাঙা, বুনো মাছরাঙাসহ কত নাম এদের। সব প্রজাতির মাছরাঙারই দেহের তুলনায় মাথা বড়, লম্বা, ধারালো ও চোখা চঞ্চু, খাটো পা ও খাটো লেজ।</p> <p>মাছরাঙার প্রজননের সময় মার্চ থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ সময়টা এরা জোড়বেঁধে একত্রে থাকে ও জলাশয় বা নদীর তীরে গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করে। গাছের মরা-গুঁড়ির ফোকরেও এদের বাসা দেখা যায়। একটি মা মাছরাঙা সাধারণত চার থেকে ছয়টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৮ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। বাচ্চারা এদের মা-বাবার সঙ্গে আরো ২৪ থেকে ২৫ দিন বাসায় অবস্থান করে।</p> <p>নানা কারণে এখন মাছরাঙার জীবন হুমকির মুখে। নগরায়ণ, জলাশয় ভরাট ও পরিবেশদূষণের কারণে এদের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। এসব দ্রুত বন্ধ করা জরুরি। নইলে মাছরাঙাও একসময় হারিয়ে যাবে পরিবেশ থেকে।</p>