<p><strong>মন-মাতানো লাল ও বুটিদার নীল পালকে মোড়া সুদর্শন মাছরাঙা পাখির নিতান্ত সাদামাটা নাম ‘পাতি মাছরাঙা’; ইংরেজিতে ‘কমন কিংফিশার’। কিন্তু গ্রিক ঈশ্বরীর গুরুগম্ভীর নামে এর বৈজ্ঞানিক নামটি হয়েছে ‘অ্যালকেডো আত্তিস’। এর যে উপপ্রজাতিটি ভারতবর্ষে বাস করে, তার নাম ‘অ্যালকেডো আত্তিস বেঙ্গালেন্সিস’; অর্থাৎ ‘বঙ্গভূমির মাছরাঙা আত্তিস’। ইঞ্চি ছয়েক লম্বা, নিভৃতচারী ও নির্বিরোধ এই পাখি বাংলাদেশের লোকালয়ে আজও টিকে আছে</strong></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মাথার ওপরে বিদ্যুতের তারে একজোড়া মাছরাঙা বসে আছে। নিচে একটি নোংরা ডোবায় কিছু মলা, ঢ্যালা আর অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে ছাড়া পাওয়া গাপ্পি মাছ সাঁতরায়। কিন্তু মাছের দিকে আজ মনোযোগ নেই মাছরাঙাদের। শিকারের জন্য ওত পেতে না থেকে ওরা ঘন হয়ে বসেছে মেঘভাঙা রোদে। চঞ্চুর পার্থক্য দেখে বুঝতে পারি, মেয়ে বসেছে বাঁয়ে আর ডানে ছেলেটি। শরৎ ওদের প্রজননকাল। তাই ভোজনের চেয়ে প্রণয়ের আকাঙ্ক্ষা ওদের মনে ডেসার বিদ্যুতের চেয়ে এখন বেশি শক্তিশালী ও বিরতিহীন। নতুন পালকে মাছরাঙাদের লাল বুক আগুনের মতো উজ্জ্বল। এমন দৃশ্য দেখেই বাংলার বিচিত্র চিত্রকল্পের কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন : </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মহাশূন্যে মাছরাঙা আগুনের মতো এসে জ্বলে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রণয়ের টানে দুজনে কাছে বসলেও মাছরাঙা পাখিদের নীড় বাঁধার কোনো সুযোগ কি আছে এ নগরীতে! ডোবা, নালা, বিল কিংবা নদীর খাড়া পারে নরম মাটিতে তিন ফুট লম্বা সুড়ঙ্গ কেটে ওরা বাসা করে। দীর্ঘ সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে তৈরি হয় ডিম রাখার গোলাকার কুঠরি। জটিল সে খননকাজের জন্য হাতিয়ার বলতে ওদের আছে শুধু এক জোড়া চঞ্চু। কিন্তু দালানকোঠা আর রাজপথে ঠাসাঠাসি এ নগরীর মাটি তো এখন পাথর-কঠিন। এখানে কোনো খানা, ডোবা কিংবা ঝিলের পারে চঞ্চু চালিয়ে সুড়ঙ্গ কাটা কি সম্ভব? একেবারে অসম্ভব হয়তো নয়। কংক্রিট ও বিটুমিনের ফাঁকে কোথাও কি একটু নিরাপদ মাটি ওরা খুঁজে পাবে না! নিরন্তর সংগ্রাম করেই তো এ দেশের মাটিতে ওরা আজও টিকে আছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মন-মাতানো লাল ও বুটিদার নীল পালকে মোড়া সুদর্শন এ পাখির নিতান্ত সাদামাটা নাম </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পাতি মাছরাঙা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">, ইংরেজিতে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কমন কিংফিশার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">। কিন্তু গ্রিক ঈশ্বরীর গুরুগম্ভীর নামে এর বৈজ্ঞানিক নামটি হয়েছে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অ্যালকেডো আত্তিস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">। এর যে উপপ্রজাতিটি ভারতবর্ষে বাস করে, তার নাম </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অ্যালকেডো আত্তিস বেঙ্গালেন্সিস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">; অর্থাৎ </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বঙ্গভূমির মাছরাঙা আত্তিস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">। ইঞ্চি ছয়েক লম্বা, নিভৃতচারী ও নির্বিরোধ এই পাখি বাংলাদেশের লোকালয়ে আজও টিকে আছে। সামান্য চারটি চুনোমাছ পেলেই ওর দিন চলে। মূলত মিঠা পানির পাখি হলেও সুন্দরবন ও উপকূলের হালকা নোনা পানিতে ওদের অনায়াস বিচরণ। অতি সামান্য রসদে জীবন চলে বলে ওদের বসতি এশিয়া, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সর্বত্র বিস্তৃত। শীতকালে ইউরোপ থেকে আফ্রিকার উত্তর উপকূলেও ওরা উড়ে যায়।              </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দুঃখের কথা, কোটি বছর ধরে টিকে থাকা এই মাছরাঙাদের দুর্দিন সমাগত। ওদের জন্য স্বাস্থ্যকর জলাশয়ের আকাল আজ চরমে উঠেছে। পানিতে রাসায়নিক দূষণের মাধ্যমে মাছের দেহে যে বিষক্রিয়া হয়েছে তার ফলে পাতি মাছরাঙার মতো জলচর ছোট পাখিগুলো দ্রুত নিপাত হয়ে যাচ্ছে। ওরা আস্ত মাছ গিলে খায় এবং পরে মাছের আইশ ও কাঁটা উগরে ফেলে। এর ফলে মাছের দেহের বিষের পুরোটাই মাছরাঙার পেটে রয়ে যায়। পাতি মাছরাঙার দুর্বল ছানাগুলো মাছ ধরার হাতেখড়ি নিতে পানিতে ঝাঁপ দিলে আর উঠতে পারে না; ডুবে মারা যায়। পাতি মাছরাঙার জীবনকাল ২০ বছর হলেও এখন ২৫ শতাংশ পাখি এক বছরের বেশি বাঁচে না। ভয় হয় একদিন এ দেশের কোনো কবির চোখে আর আগুনের মতো এসে জ্বলবে না এই মাছরাঙা!  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""> </span></span></p> <p> </p> <p> </p>