<p>পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটির পরিস্থিতি। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাতে শ্রীনগর হাইওয়েতে মোতায়েন চার রেঞ্জার্সের জওয়ানকে দ্রুতগামী একটা গাড়ি চাপা দেয়। তবে পুলিশের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের হামলায় ওই চারজনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুজন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু পুলিশ এবং সেনা সদস্যও। অন্যদিকে পিটিআই বলছে, তাদের বহু নেতাকর্মীকে আহত করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তবে ইমরান খানের মুক্তি ইস্যুতে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে।</p> <p>পিটিআই নেতাদের দাবি, তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি ‘শান্তিপূর্ণ’, সরকার চাইছে একে সহিংস রূপ দিতে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বহু পিটিআইকর্মী আহত হয়েছেন বলেও তাদের অভিযোগ। এদিকে ইসলামাবাদের ডি-চকের উদ্দেশে রওনা দেওয়া গাড়িবহর মঙ্গলবার সকালে ‘জিরো পয়েন্টে’ গিয়ে পৌঁছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে বারেবারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই অঞ্চল।</p> <p>ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি এবং খাইবারপাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুরের নেতৃত্বে হাজার হাজার পিটিআইকর্মী বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে তারা ইসলামাবাদের ডি-চকের উদ্দেশে রওনা হন।</p> <p>পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে চারদিক। বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইসলামাবাদের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় বিশালায়তন শিপিং কনটেইনার এবং ব্যারিকেড বসিয়ে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ইসলামাবাদজুড়ে ৭০০-র মতো শিপিং কনটেইনার বসানো হয়েছে, উদ্দেশ্য একটাই—পিটিআইকর্মীদের ডি-চকে ঢুকতে বাধা দেওয়া।</p> <p>এদিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভির অভিযোগ, পিটিআইকে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে ‘গোপন নেতৃত্ব’। ডি-চকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মহসিন নাকভি বলেন, ‘পিটিআইয়ের গোপন নেতৃত্বের সামনে বাকি নেতৃত্ব কিছুই করতে পারবে না। পিটিআই নেতৃত্বও রক্তপাত চায় না, কিন্তু পাকিস্তানে গোপন নেতৃত্বের এজেন্ডা চলবে না।’</p> <p>উল্লেখ্য, একাধিক অভিযোগে ইমরান খান এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে আটক রয়েছেন। তার মুক্তির দাবিতে বুশরা বিবি সোমবার পিটিআইয়ের সমর্থকদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার স্বামী মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করতে।</p> <p>কয়েক মাস ধরেই তার মুক্তির দাবি তুলে বিক্ষোভ করছে ইমরান খানের দল। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে থাকার কথা বলে সমর্থকদের প্রতি ‘চূড়ান্ত আহ্বান’ জানিয়েছেন তার স্ত্রী বুশরা বিবি। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘ইমরান খান আমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত আমরা এই যাত্রা থামাব না। আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকব।’</p> <p>বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য ইসলামাবাদের ডি-চকে পৌঁছানো। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ও সুপ্রিম কোর্টের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন রয়েছে। এই চত্বর আবার ডেমোক্রেসি স্কয়ার নামেও পরিচিত এবং প্রায়ই রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেহেতু চৌরাস্তাটি দুটি প্রধান সড়কের ওপর অবস্থিত। তাদের ঠেকাতে রাস্তায় শিপিং কনটেইনার ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে রাজধানীতে পুলিশকর্মীদের নিয়ে আসা হয়েছে, সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।</p> <p>বিক্ষোভ ঠেকাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় চার হাজার। অন্যদিকে পিটিআই নেতাকর্মীদের ঠেকাতে ইসলামাবাদের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জমায়েত। সূত্র : বিবিসি, ডন</p>