<p>বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের পল্লী ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের অধীনে ৭৪তম সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার হোমনা পৌরসভার হরিপুর গ্রামে এই ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী।</p> <p>তিনি নিজের বক্তব্যে বলেন, ২০০৫ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনটি উপজেলায় সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ২৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। অসচ্ছল লক্ষাধিক পরিবারের মধ্যে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে এই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান নিজ জন্মভূমি বাঞ্ছারামপুরে ২০০৫ সালে প্রথম সুদ ও সার্ভিসমুক্ত এই কর্মসূচি শুরু করেন। এখন কুমিল্লার হোমনা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় এই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। আপনারা সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে আবার সেই টাকা শতভাগ ফিরিয়ে দিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আপনারা সবাই উনার পরিবারের সব সদস্যের জন্য দোয়া করবেন যেন এভাবে তারা আপনাদের উপকার করতে পারেন।’</p> <p>বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এফসিএস প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নাসিমুল হাই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন সুদমুক্ত, সার্ভিস চার্জমুক্ত এবং ঋণ দেওয়ার তিন মাস পর মূল টাকার কিস্তি প্রতি সপ্তাহে ৩০০ টাকা করে ৫২ সপ্তাহে আদায় করছে। আর এই আদায়ের হারও শতভাগ। আমাদের বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান মহোদয়—সমাজকে সুদমুক্ত করে মানবকল্যাণে কাজ করাই উনার মূল লক্ষ্য। তাই উনার জন্য সবাই দোয়া করবেন, যাতে আরো অনেক গরিব মানুষের মাঝে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন।’</p> <p>শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে বসুন্ধরা গ্রুপ সুদমুক্ত ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ দিয়ে অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছে। এভাবে ঋণ বিতরণ অব্যাহত রাখলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো মজবুত হবে।’</p> <p>এ সময় বক্তব্য দেন পল্লী ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. মোশাররফ হোসেন ও বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম মাইমুন কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক মো. চান মিয়া, কাউন্সিলর জাকির হোসেন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের অফিসার মো. জামাল উদ্দিন এবং বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান।</p> <p>বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের পল্লী ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের অধীনে ৭৪তম সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণে হোমনা ও নবীনগর উপজেলায় ৩৪৬ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৫১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমবার ৩৮ জনের মধ্যে প্রতিজনকে ১৫ হাজার করে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বার সুবিধাভোগী ৩০৮ জনের মধ্যে প্রতিজনকে ১৫ হাজার করে ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল এমন উপকারভোগীও ছিলেন যারা ঋণ পরিশোধ করে তিন থেকে চারবারও ঋণ নিয়েছেন।</p> <p>এমনই এক উপকারভোগী হোমনা চরেরগাঁওয়ের খোরশেদা বেগম বললেন, ‘আগে আমার স্বামী রূপ মিয়া বদলা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতেন। এখন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। প্রথম তিন মাস কিস্তি দিতে হয় না। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসা করে পুঁজি বাড়ে, আবার সংসারও সুন্দরমতো চলে। তিন মাস পর ৩০০ টাকা করে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে গায়ে লাগে না। আগে অনেক কষ্টে চলতে হতো, এখন ক্ষুদ্র ব্যবসা করে সুন্দরভাবে সংসার চলছে। তাই বসুন্ধরার মালিককে দোয়া করছি আল্লাহপাক যেন দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখেন আর আমার মতো গরিব মানুষকে বিনা লাভে টাকা দিয়ে স্বাবলম্বী করতে পারেন।’</p>