<p>জনগণের রাষ্ট্র তৈরির আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জে মাফিয়া তৈরি হয়েছে। শামীম ওসমান এটা কন্ট্রোল করতেন। পুরো দেশেই এমন ছোট ছোট মাফিয়া তৈরি হয়েছিল। সব মানুষের দেশ বাংলাদেশ হয়নি। লুটেরা, ভূমিদস্যু, পাচারকারী, সালমান রহমান, শামীম ওসমান, বেনজীর ও মতিউরের রাষ্ট্র হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্র হয়নি।’</p> <p>মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি। এদিন সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি করুন’ শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘সরকারকে তার কাজের জন্য সংসদে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, ভোটের নামে শেখ হাসিনা কিভাবে প্রহসন করেছেন। তার পার্লামেন্টে কোনো জবাবদিহি ছিল না। এমপি পাপ্পুর স্ত্রী বললেন, তিনি বাসায় একা থাকেন, তাই পাপ্পু ছয় কোটি টাকা ব্যয় করে তাকেও সংসদ সদস্য (এমপি) বানালেন। সেই পাপ্পু এখন কুয়েতের কারাগারে আছে। </p> <p>তিনি বলেন, আদালতের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। এটা যে চলছে না তার প্রমাণ হচ্ছে, দুজন বিচারককে কান ধরে বের করে দেওয়া হয়েছে। এমন মানুষকে বিচারপতি বানাই, যাদের আবার বের করে দেওয়া যায়।</p> <p>রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার করতে হবে এবং এর সমালোচনাও করতে হবে। শেখ হাসিনার সময়ে প্রশ্ন তোলা যেত না। আমরা দেখেছি, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রশ্ন তোলা এবং চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা দিতে হবে। দোষ হাসিনার না, দোষ খালেদার না। যেই সংবিধান আর রাষ্ট্র কাঠামো বানিয়েছি, তার স্ট্রাকচারটাই হচ্ছে স্বৈরাচারে পরিণত করা। তাই ক্ষমতাকে কিভাবে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স করা যায় তা ভাবতে হবে।’ </p> <p>সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘নাগরিক সমাজের মধ্যে পার্টিবাদ কায়েম করা হয়েছে। এদের দলদাস বানানো হয়েছে। আওয়ামী ভাঙারি লীগ আছে, জাতীয়তাবাদী সাপুড়ে দল আছে। বিয়ের সময় জিজ্ঞাসা করে পাত্র কী করে? উত্তর আসে পাত্র ছাত্রলীগ করে। এভাবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, পিয়ন, সেক্রেটারি দলদাসে পরিণত হয়েছে। আমরা স্বাধীন সাংবাদিকতা দেখিনি। বাস্তবতাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের সম্পাদকরা। সাংবাদিকতার বইয়ের প্রথম লাইন হচ্ছে ‘পৃথিবীর প্রত্যেকটা সরকার মিথ্যা বলে, প্রত্যেকটা সরকার তথ্য লুকাতে চায়। সাংবাদিকের কাজ হচ্ছে সত্য তুলে এনে প্রকাশ করে দেওয়া।’</p> <p>সভায় জেলা সুজনের সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েলের সভাপতিত্বে ও আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি হাজী নুরুদ্দিন, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, গণসংহতির মহানগর সমন্বয়ক নিয়ামুর রশিদ বিপ্লব, গণ অধিকারের জেলা সেক্রেটারি রাহুল আরফিন প্রমুখ।</p>