<p style="text-align:justify">আর মাত্র এক দিন বাকি। তারপরই পূর্ণিমার আলোয় মহারাস উৎসবে মেতে উঠবেন মণিপুরিরা। এই উৎসবকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা। চলছে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য এবং মহারাস নৃত্যের শেষ মহড়া। আগামী শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) হবে মহারাস পূর্ণিমা। </p> <p style="text-align:justify">এ উৎসব সামনে রেখে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুর ও আদমপুর এলাকায় প্রস্তুত হচ্ছেন মণিপুরি নৃত্যশিল্পীরা। প্রতিটি পাড়ায় দলে ভাগ হয়ে প্রশিক্ষকরা তামিল দিচ্ছেন শিল্পীদের। কেউ হবে রাখাল আবার কেউ গোপী। অন্যান্য বছরের মতো এবারো এই উপজেলায় মণিপুরিদের পৃথক দুটি গ্রামে আয়োজন করা হচ্ছে মহারাস উৎসবের।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলার মাধবপুরের জোড়া মান্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ১৮২ তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে প্রাঙ্গণে মেইতেই (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ৩৯ তম মহারাস উৎসব হবে এবার। এই মহারাস উৎসব দেখতে দেশ–বিদেশের কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে এখানে।</p> <p style="text-align:justify">মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন। মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালবেলা গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখাল নৃত্য। রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ। মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে শ্রীকৃষ্ণ বন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ–রাধা ও ৫০ জনের মতো গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়।</p> <p style="text-align:justify">কমলগঞ্জের মাধবপুর মাঝেরগাঁও ও বাদলেগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে আছেন মনিপুরী মহিলারা। তাদের মধ্যখানে নৃত্য করছেন কিশোর ও শিশু ছেলে-মেয়েরা। সপ্তাহখানেক ধরে এখানে রাস উৎসবের মহড়া চলছে। মহড়ায় আসা মণিপুরি ছেলেমেয়েদের রাসনৃত্যর বিভিন্ন কৌশল ও নিয়মকানুন শিখিয়ে দিচ্ছিলেন রাসনৃত্যের প্রশিক্ষকেরা। </p> <p style="text-align:justify">মহড়ায় অংশ নেওয়া অর্থি সিনহা ও মিনীষা সিনহা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই মণিপুরি নৃত্য দেখে বড় হয়েছি। আমাদের এই নৃত্যের চর্চা ছোটবেলা থেকেই। মহারাস উৎসব আমাদের বড় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে অনেক দর্শক থাকেন। রাসধারী আমাদের সবকিছু শিখিয়ে দেন। রাস উৎসবে অংশ নিতে পরিবার থেকে অনেক সাপোর্ট পাই আমরা। এই রাস উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে পারি।</p> <p style="text-align:justify">মহারাস উৎসবের একটি মান্ডপের রাসধারী (প্রশিক্ষক) বিধান চন্দ্র সিংহ বলেন, ‘আমি দুই যুগের কাছাকাছি সময় ধরে রাস উৎসবের রাসধারী হিসেবে আছি। আমাদের গ্রামের মণিপুরি শিশু–কিশোরীদের নিয়ে প্রতিবছরই উৎসবের এক মাস আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। রাস উৎসবে অংশ নেওয়া মণিপুরি ছেলেমেয়েদের অনেকেই নতুন থাকেন। আবার অনেক পুরোনো নৃত্যশিল্পীও থাকেন। আমরা প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির উঠানে মহড়া দিচ্ছি। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছি।</p> <p style="text-align:justify">মাধবপুর মণিপুরি মহারাস লীলা সেবা সংঘের সহ-সভাপতি লক্ষ্মণ সিংহ বলেন, ‘এ বছর আমাদের ১৮২ তম মহারাস লীলার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি শুক্রবার হওয়ায় অনেক মানুষের আগমন হবে বলে আমরা মনে করছি। আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। রাস উৎসবের নিরাপত্তায় আমরা ইউএনও, পুলিশ-কর্মকর্তাসহ সবার সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের মাধবপুরে তিনটি মণ্ডপে পৃথক রাসলীলা হবে। এই রাস উৎসব এক দিনের হলেও আমরা প্রায় এক মাস আগ থেকেই প্রস্তুতি করি।’</p>