<p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন খুলনার সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজের ছাত্র নাঈম শিকদার। ৪ আগস্ট খুলনা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বাড়ির সামনে পুলিশের গুলিতে শরীর ঝাঝরা হয়ে যায় নাঈমের। এরপর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, খালিশপুর উপসম হাসপাতাল, যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সম্প্রতি খুলনায় ফেরেন নাঈম। তিন মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেল নাঈম ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। শরীরের মধ্যে থাকা অসংখ্য বুলেট শুধু এক্স-রে প্লেটেই দেখা যায়। চিকিৎসকরা ওই গুলি আর বের করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সন্তানের অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন নাঈমের বাবা মালেক শিকদার ও মা মোরশেদা বেগম। আড়ালে চোখের পানি মুছতে মুছতে বৃদ্ধ বাবা মালেক শিকদার বললেন, ‘আমার বাবা চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেল।’</p> <p>গত মঙ্গলবার সকালে নগরীর দৌলতপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আঞ্জুমান রোডের ঋষিপাড়ার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যথায় কাতরাচ্ছেন নাঈম। ঘরে মা-বাবা ছাড়া কেউ নেই। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় বোন বিবাহিত আর ছোট ভাই দুলাভাইয়ের বালির জাহাজে কাজ করতে গেছেন। অভাবের সংসারের বড় ছেলে নাঈম পড়াশোনার পাশাপাশি হাল ধরেছিলেন সংসারের। এইচএসসি পড়াকালীনও টিউশন এবং রং মিস্ত্রির হেলপার আর ডিশলাইনের কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জন করে বাবার সহযোগী হন নাঈম। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে নাঈম জানালেন, ৪ আগস্ট বিকেলে নগরীর শিববাড়ী থেকে এক গ্রুপ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আর তারা চলে যান শহরের দিকে। সেখানে মিছিল নিয়ে যাওয়া মাত্রই গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয় তাদের লক্ষ্য করে। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা হ্যান্ডমাইক দিয়ে এক ছাত্রনেতা পুলিশকে গুলি না করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমাদের ওপর গুলি করবেন না।’ এরপর পুলিশ গুলি থামালে তাদের কাছাকাছি চলে গিয়ে আত্মসমর্পণের আহবান জানান ছাত্ররা। কিন্তু কথা বলার এক পর্যায়ে ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। গুলির প্রস্তুতি দেখে তখন নাঈম ঘুরে যাওয়া মাত্রই তার পিঠ লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এরপর আর কিছুই মনে নেই নাঈমের।</p>