<p>একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প মঙ্গলবার প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। রাজধানী পোর্ট ভিলায় ভবন ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে বিদেশি দূতাবাসগুলোর একটি ভবনও রয়েছে। এ ছাড়া শহরের রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলে এএফপিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।</p> <p>এদিকে আজ রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃতদহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০০ জন আহত হয়েছে। ভূমিকম্পের আঘাতে ভেঙে পড়া  বাণিজ্যিক ভবন, দূতাবাস এবং একটি হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে থাকা লোকদের সন্ধান করা হচ্ছে।</p> <p>ভানুয়াতুর পুলিশ কমিশনার রবসন ইভরো একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, একটি ধসে পড়া ভবনে আটকে থাকা তিন ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ধারণা ভবনের মধ্যে আরো মানুষ আটকে আছে।’</p> <p>সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ফুটেজে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে যানবাহন পিষ্ট হয়ে গেছে, পোর্ট ভিলার আন্তর্জাতিক শিপিং টার্মিনালের কাছে একটি মহাসড়কজুড়ে পাথর ছড়িয়ে আছে এবং ভূমিধস হয়েছে। জ্বালানি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য সারিবদ্ধ লোকদের ভিড় দেখা যায়। </p> <p>অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক মাইকেল থম্পসন ভানুয়াতুতে তার ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য সহায়তা করছেন। থম্পসন ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেছেন, ‘তিন জনকে জীবিত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একজনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর...।’</p> <p>সরকারি ও জ্বালানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, পানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত রয়েছে। রোগীদের জন্য পোর্ট ভিলার হাসপাতালের বাইরে তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস জানিয়েছে, ভূমিকম্পে পোর্ট ভিলার প্রধান শহরে দশটি ভবনের বড় ধরনের কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। </p> <p>স্বাস্থ্য জরুরি সংস্থা রেসপন্ড গ্লোবালের ভানুয়াতুর একজন জরুরি চিকিৎসক বাসিল লিওডোরো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছেন, দুটি  ধসে পড়া ভবন থেকে উদ্ধারকারীরা মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। মার্কিন, ব্রিটিশ, ফরাসি এবং নিউজিল্যান্ড দূতাবাসসহ রাজধানীতে বিদেশি মিশনের হোস্টিং ভবনের কংক্রিটের স্তম্ভ শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে।</p> <p>সিডনিভিত্তিক ফার্মাসিস্ট নিবহায় নন্দ জানিয়েছেন, পোর্ট ভিলার তার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, তার দোকানের বেশির ভাগ অংশ ‘ধ্বংস হয়ে গেছে’ এবং আশপাশের অন্যান্য ভবনও ‘ধসে পড়েছে’।  নন্দ বলেন, ‘আমরা এখনো অপেক্ষা করছি সবাই অনলাইনে আসুক এবং জানতে পারি যে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর হয়েছে।’</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে ভানুয়াতুর প্রধান দ্বীপ এফাতের উপকূল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ও ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫৭ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে। এর কয়েক মিনিট পরই ৫.৫ মাত্রার একটি আফটারশক আঘাত হানে এবং পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় আরো বেশ কয়েকটি ছোট কম্পন অনুভূত হয়।</p> <p>এদিকে ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এবং ভানুয়াতুর কিছু এলাকায় তিন ফুট পর্যন্ত ঢেউয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। তবে পরে সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভানুয়াতু আমাদের পরিবারের মতো এবং প্রয়োজনে আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকব।’</p> <p>বার্ষিক বিশ্বঝুঁকি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভানুয়াতু বিশ্বের সবচেয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। ভূমিকম্প, ঝড়, বন্যা ও সুনামির মতো বিপর্যয়ের ঝুঁকি সেখানে সবচেয়ে বেশি।</p> <p>সূত্র : রয়টার্স, এএফপি</p>