<p>বাংলাদেশ বেতারে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে আরবি সংবাদ সম্প্রচার হচ্ছে। প্রতিদিন রাতে ৩০ মিনিট আরবি ভাষায় জাতীয় খবর পাঠ করা হয় এবং সংবাদ পর্যালোচনা করা হয়। পাশাপাশি অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনীসহ বিভিন্ন দিবস ঘিরে নানা আয়োজন থাকে। মূলত বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা আরব বিশ্বের শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরাই অনুষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য।</p> <p>জানা যায়, স্বাধীনতার আগে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের বহির্বিশ্ব কার্যক্রম হিসেবে উর্দু, হিন্দি, নেপালি ভাষায় খবর সম্প্রচার হতো। স্বাধীনতার পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং তাদের কাছে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি তুল ধরতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ বেতারে আরবি অনুষ্ঠান সম্প্রচার অন্যতম।</p> <p>বাংলাদেশ বেতারের তৎকালীন মহাপরিচালক এম মুহাদ্দেস খান বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তৎকালীন বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ও সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার সাবেক অধ্যাপক ও হেড মাওলানা আলাউদ্দীন আল-আজহারির শরণাপন্ন হন এবং তাঁকে অনুষ্ঠানের পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুরোধ করেন। অতঃপর ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাওলানা আলাউদ্দীন আল-আজহারির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকার জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের নিয়ে আরবি অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়।</p> <p>যাঁদের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল তাঁদের বেশির ভাগ এখন পরপারে। তাঁদের মধ্যে কেবল দুজন এখন জীবিত রয়েছেন। তাঁদের একজন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা মুফাজ্জল হুসাইন খান।বেতারের আরবি অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার স্মৃতিচারণা করে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘মূলত স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে থেকেই আমি বাংলাদেশ বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আরবি অনুষ্ঠানে যুক্ত হই।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘মাওলানা আলাউদ্দীন আল-আজহারির সার্বিক তত্ত্বাবধানে যাঁদের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল তাঁরা হলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী, ধানমণ্ডি ৭ নম্বর মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া এবং সাংবাদিক ও সাহিত্যিক হাফেজ আকরাম ফারুক। পাশাপাশি জামিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আবদুল হাই, ঢাকায় লিবিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তা শেখ শামসুজ্জামান ও আমি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হই এবং অদ্যাবধি কাজ করছি।’</p> <p>ধীরে ধীরে সংবাদ প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে এতে আরো অনুষঙ্গ যুক্ত হয়। আরবি অনুষ্ঠানের অনুবাদক ও উপস্থাপকদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী সময়ে এ অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেক গুণী-জ্ঞানী ব্যক্তি যুক্ত হন। এমনকি প্রখ্যাত অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারও কিছুদিন আরবি অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন।</p> <p>বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের আরবি অনুষ্ঠানের প্রধান ড. ইনামুল হক বলেন, বাংলাদেশ বেতারের আরবি অনুষ্ঠানটি এ দেশের আরবি ভাষা প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং আরবি ভাষার শিক্ষক ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খবর অনুবাদ, সম্পাদনা ও পাঠের দায়িত্ব পালন করেন, বিশেষত অনুষ্ঠানটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইন্টারপ্রেটারদের একটি প্ল্যাটফরর্ম হিসেবে কাজ করছে।</p>