<p>একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প মঙ্গলবার প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। রাজধানী পোর্ট ভিলায় ভবন ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে বিদেশি দূতাবাসগুলোর একটি ভবনও রয়েছে। এ ছাড়া শহরের রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলে এএফপিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে ভানুয়াতুর প্রধান দ্বীপ এফাতের উপকূল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ও ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫৭ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে। এর কয়েক মিনিট পরই ৫.৫ মাত্রার একটি আফটারশক আঘাত হানে এবং পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় আরো বেশ কয়েকটি ছোট কম্পন অনুভূত হয়।</p> <p>এএফপির প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, পোর্ট ভিলায় চারতলা একটি কংক্রিট ভবনের নিচতলা ধসে পড়েছে। এই ভবনটি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশের দূতাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পাপুয়া নিউ গিনির মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভবন থেকে সব মার্কিন কর্মীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সবাই নিরাপদে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করেছে।  </p> <p>পোর্ট ভিলার বাসিন্দা মাইকেল থম্পসন এএফপিকে স্যাটেলাইট ফোনে বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন ভবনে মানুষ আটকা পড়েছে। আমরা হেঁটে যাওয়ার সময় সেখানে লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি।’</p> <p>তিনি আরো জানান, একটি সড়কে ভূমিধসের ফলে একটি বাস চাপা পড়েছে, ‘এতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়’। একই সঙ্গে বলেন, ভূমিকম্পে কূটনৈতিক ভবনের নিচতলা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্তত দুটি সেতু ভেঙে পড়েছে এবং আরো কয়েকটি ভবন ধসে গেছে।</p> <p><strong>‘পুরোপুরি ধ্বংস’</strong><br /> ভানুয়াতুতে একটি জিপলাইন অ্যাডভেঞ্চার ব্যবসা পরিচালনাকারী থম্পসন জানান, ‘ভবনের নিচতলা আর নেই। এটি পুরোপুরি সমতল হয়ে গেছে। ওপরের তিন তলা এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও নিচে নেমে গেছে। যদি কেউ সেখানে থাকতেন, তবে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।’</p> <p>মার্কিন, ফরাসি, ব্রিটিশ ও অস্ট্রেলিয়ান মিশনগুলোর মতো ওই ভবনে অবস্থিত নিউজিল্যান্ডের হাইকমিশনও ‘ব্যাপক ক্ষতির’ সম্মুখীন হয়েছে বলে নিউজিল্যান্ড সরকার জানিয়েছে। </p> <p>ভানুয়াতু প্রশান্ত মহাসাগরের রিং অব ফায়ারের ওপর অবস্থিত, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ফলে দেশটিতে ভূমিকম্পের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।  </p> <p><strong>ভূমিধস ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা</strong><br /> এএফপির যাচাই করা ছবিতে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক শিপিং টার্মিনালের ওপর একটি খাড়া পাহাড় থেকে টনকে টন মাটি ও বড় পাথর গড়িয়ে পড়েছে। তবে টার্মিনালের ভবনগুলোতে কোনো বড় ক্ষতি হয়নি বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলীয় ও আঞ্চলিক এয়ারলাইনগুলো ভানুয়াতুতে ফ্লাইট বাতিল বা অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে। অনলাইন ট্র্যাকার ফ্লাইটরাডারও পোর্ট ভিলায় কোনো ফ্লাইট অবতরণ দেখায়নি।</p> <p>এ ছাড়া ভূমিকম্পের পর বেশির ভাগ মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে থম্পসন জানান। তিনি বলেন, ‘তারা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন যে সাহায্য প্রয়োজন, তা হলো মেডিক্যাল ইভাকুয়েশন ও দক্ষ উদ্ধারকারীদল, যারা ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারে।’</p> <p>তার ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাস্তায় কাচের টুকরা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোর অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে।</p> <p><strong>উদ্ধারকাজ চলছে</strong><br /> থম্পসনের পোস্ট করা ও এএফপির যাচাই করা ভিডিওতে ইউনিফরম পরা উদ্ধারকর্মীদের একটি ধসে পড়া ভবনে কাজ করতে দেখা গেছে, যেখানে নিচে দাঁড়ানো গাড়ি ও ট্রাকগুলো চাপা পড়েছে।</p> <p>সিডনিভিত্তিক ফার্মাসিস্ট নিবহায় নন্দ জানিয়েছেন, পোর্ট ভিলার তার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, তার দোকানের বেশির ভাগ অংশ ‘ধ্বংস হয়ে গেছে’ এবং আশপাশের অন্যান্য ভবনও ‘ধসে পড়েছে’।  </p> <p>নন্দ বলেন, ‘আমরা এখনো অপেক্ষা করছি সবাই অনলাইনে আসুক এবং জানতে পারি যে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর হয়েছে।’</p> <p>এদিকে ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এবং ভানুয়াতুর কিছু এলাকায় তিন ফুট পর্যন্ত ঢেউয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। তবে পরে সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়।  </p> <p>অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভানুয়াতু আমাদের পরিবারের মতো এবং প্রয়োজনে আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকব।’</p> <p>বার্ষিক বিশ্বঝুঁকি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভানুয়াতু বিশ্বের সবচেয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। ভূমিকম্প, ঝড়, বন্যা ও সুনামির মতো বিপর্যয়ের ঝুঁকি সেখানে সবচেয়ে বেশি।</p>