<p style="text-align:justify">রংপুর নগরীর শ্যামাসুন্দরী খালে ময়লা-আবর্জনা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে খালটি। স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে খালটি পুনরুদ্ধার করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন ও সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। দখলের সঙ্গে খালটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে তীব্র জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়বে নগরবাসী।</p> <p style="text-align:justify">মৃত্যু শয্যাশায়ী শ্যামাসুন্দরী খালকে বাঁচাতে রংপুর নগরবাসী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও পরিবেশ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম (বেঞ্জ) বলেন, শ্যামাসুন্দরী খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের ৬০ ফুট চওড়া খালটি বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ ফুটে এসে ঠেকেছে। খালের বেশির ভাগই দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। আবার কোথাও কোথাও ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে বেলা’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে। শ্যামাসুন্দরীর অস্তিত্ব রক্ষায় সিএস খতিয়ান অনুযায়ী শ্যামাসুন্দরী খালের সীমানা চিহ্নিত করা, দখল ও দূষণকারীদের উচ্ছেদ করে আইনগত ব্যবস্থা করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শ্যামাসুন্দরী পুনরুদ্ধার কোর কমিটির সদস্য ও নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.তুহিন ওয়াদুদ জানান, বর্তমানে শ্যামাসুন্দরীকে বাঁচাতে হলে এতে পানি লাগবে। ৩০ বছর আগে কীভাবে পানি প্রবাহিত হতো, ঘাঘট থেকে শ্যামাসুন্দরীতে কেন পানি প্রবাহিত হচ্ছে না? কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, তা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। রংপুর শহরের আকাশ খারাপ হলে গোটা নগরী পানিতে ডুবে যাবে। যা দুই বছর থেকে আমরা বুঝতে পারছি। </p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে এবং এ খালে পানির প্রবাহ যেন স্বচ্ছ থাকে সে ব্যাপারেও অধিকতর নজর দিতে হবে। শ্যামাসুন্দরী খালের প্রবাহ বিঘ্নকারী স্থাপনা অপসারণ করা।খালটির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ(সিএসজরিপ)অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খনন করা। শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে ২০১৯ সালে ৫১১ জন দখলদার চিহ্নিত করা হলেও পরবর্তীতে তা কীভাবে ১১৭ জনে দাঁড়াল, তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয়রা বলেন, পানির প্রবাহ না থাকায় দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। এছাড়া অনেকে পয়ঃনিষ্কাশনের সংযোগ এ খালে দেওয়ায় পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় শ্যামাসুন্দরী খালটি নাব্যতা হারিয়েছে। এর দুই পাশ অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় খালটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শ্যামাসুন্দরীর পাশে এত অসহ্য দুর্গন্ধ যে-এর পাশে মানুষ বাস করতে পারছেন না।</p> <p style="text-align:justify">ঘাঘটের উৎসমুখ তিস্তা নদী থেকে শ্যামাসুন্দরীকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। শ্যামাসুন্দরী বাঁচাতে ঘাঘটের উৎসমুখ খুলে দেওয়া, শ্যামাসুন্দরী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা, দূষণ বন্ধ করা ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন করার দাবি জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সংগঠক, চিকিৎসক, শিল্পী, সাংবাদিক ও ধর্মীয় নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।</p> <p style="text-align:justify">রংপুর সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খালের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রাক্কলন তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। বরাদ্দ আসার পর পুরোদমে খালের উন্নয়নকাজ শুরু করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্প পরিকল্পনার ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছেন বলেও জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify"><br />  </p>