<p style="text-align:justify">অনেককেই রাতে বিছানা থেকে উঠে বারবার টয়লেটে যেতে হয়। রাতের মধ্যেই কয়েকবার প্রস্রাব হয়। এ সমস্যায় ভুগলেও তাদের সেটি নিয়ে বলতে শোনা যায় কম। চিকিৎসকের পরামর্শ দূরে থাক, আপনজনদের কাছেও মুখ ফুটে প্রকাশ করে না বেশির ভাগ মানুষ। অথচ চিকিৎসকের পরামর্শ আর জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।</p> <p style="text-align:justify">চিকিৎসকরা বলছেন, এটি একটি শারীরিক সমস্যা, আর এ সমস্যার একটা আনুষ্ঠানিক নামও আছে। একে বলা হয় ‘নকটারিয়া’ বা রাতের বেলা বারবার ঘুম থেকে উঠে মূত্রত্যাগ করতে শৌচাগার বা টয়লেট ব্যবহার করা।</p> <p style="text-align:justify">যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল কন্টিনেন্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, নকটারিয়ার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, রাতে ঘুম ভেঙে অন্তত দুইবার প্রস্রাব করার জন্য যদি কাউকে উঠতে হয়, তাহলে তিনি এ রোগে আক্রান্ত।</p> <p style="text-align:justify">এই সমস্যার কারণে ঘুম এবং জীবনযাপন-দুটোতেই বিঘ্ন তৈরি হয়। বয়স্ক মানুষের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এক হিসাব অনুযায়ী, ৭০ বছরের বেশি বয়সী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই এই সমস্যায় ভোগেন। এ ছাড়া আবহাওয়া এবং সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে গর্ভবতী নারীরাও এই সমস্যায় পড়েন অনেক সময়ই। তবে কম বয়সীরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। নারী-পুরুষ যে কেউই এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নকটারিয়া কেন হয়?</strong></p> <p style="text-align:justify">দুটি কারণে নকটারিয়া দেখা দিতে পারে। একটি হচ্ছে মূত্রথলির ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে মূত্র উৎপাদন বেড়ে যাওয়া। এই অবস্থাকে পলিইউরিয়া বলা হয়।</p> <p style="text-align:justify">প্রথম কারণটির ক্ষেত্রে একটি অঙ্গের ধারণক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে, যা সাধারণত ৩০০-৬০০ মিলিলিটার হয়ে থাকে। দুটি কারণে এই ধারণক্ষমতা কমতে পারে। এগুলো হচ্ছে- প্রথমত, শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। পুরুষের ক্ষেত্রে এটা সাধারণত হয়ে থাকে বেনাইন প্রোস্টেটিক হারপারট্রফি নামে এক ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে। এই সমস্যায় পুরুষের প্রোস্টেট বড় হয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">নারীদের ক্ষেত্রে স্থূলতা এবং পেলভিক অরগ্যান প্রোল্যাপসের মতো সমস্যায় এই রোগ দেখা দিতে পারে। পেলভিক অরগ্যান প্রোল্যাপসের ক্ষেত্রে জরায়ু, মূত্রথলি বা মলদ্বার দুর্বল হয়ে পড়ে বা ঢিলা হয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, অন্যান্য সমস্যা যেমন ওভারঅ্যাকটিভ ব্ল্যাডার সিনড্রোম, সংক্রমণ, সিস্টাইটিস ইত্যাদি স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও নকটারিয়া হতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">পলিইউরিয়ার মতোই নকটারিয়া বা রাতে মূত্র উৎপাদনের হার অ্যান্টি-ডিউরেটিক হরমোনের প্রভাবে কমে যায়। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহে এই হরমোনের নিঃসরণ রাতেবেলা কমে যায়। অন্যান্য অনেক রোগের কারণে নকটারিয়া দেখা দিলেও এটিই এই সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া ডায়াবেটিস, এডেমাটোস স্টেটস বা টিস্যুতে অত্যধিক তরল আটকে থাকার কারণে ফোলা ভাব, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, সন্ধ্যায় বেশি পরিমাণে তরল গ্রহণ, অতিমাত্রায় ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা তামাক গ্রহণের কারণেও এটি হতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া কিছু কিছু রোগের ওষুধ গ্রহণের কারণেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মূত্র উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মূত্রথলির কার্যক্রমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ওষুধ হচ্ছে-</p> <ul> <li style="text-align:justify">ডায়রেটিকস- তরল ধারণ ক্ষমতার চিকিৎসা এবং উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়।</li> <li style="text-align:justify">অ্যান্টিকলোনারজিকস- ওভারঅ্যাকটিভ ব্ল্যাডার সিনড্রোমের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধ সেসব স্নায়ুর সংকেতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে যেগুলো এই অঙ্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসতে পারে। দেখা দিতে পারে নকটারিয়া।</li> <li style="text-align:justify">উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ খেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।</li> <li style="text-align:justify">ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা প্রতিরোধে ওষুধ সেবনেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ এগুলো অনেক সময় অ্যান্টিডিউরেটিক হরমোনের কাজ কমিয়ে দেয়।</li> <li style="text-align:justify">বাইপোলার ডিস-অর্ডারের মতো মানসিক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত লিথিয়াম ওষুধ সেবনেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।</li> </ul> <p style="text-align:justify">তবে তার মানে এই নয় যে, যারা এসব রোগের চিকিৎসায় এ ধরনের ওষুধ সেবন করছেন তারা সবাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এ ধরণের উপসর্গে পড়বেন বা নকটারিয়াতে আক্রান্ত হবেন।</p> <p style="text-align:justify">যদি কেউ মনে করেন যে তার মধ্যে এ ধরনের প্রভাব বা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে এবং তিনি যদি এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে করে তারা ওই ওষুধ পরিবর্তন করে বা বিকল্প কোনো উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নকটারিয়া কিভাবে বন্ধ করা যায়?</strong></p> <p style="text-align:justify">নকটারিয়া আক্রান্ত প্রত্যেক মানুষের চিকিৎসা আলাদাভাবে করতে হবে। কারণ একেকজনের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে আলাদা আলাদা হাজারো কারণ থাকতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">তার পরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখানে মৌলিক কয়েকটি টিপসের কথা উল্লেখ করা হলো, যা সাধারণভাবে সব বয়সের নকটারিয়া আক্রান্ত রোগীর কাজে আসতে পারে-</p> <p style="text-align:justify">নকটারিয়া বন্ধে অ্যালকোহল, কফি এবং তামাক অবশ্যই পরিহার করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত চার থেকে ছয় ঘণ্টা আগে তরল খাবার খাওয়া কমিয়ে আনুন। রাতের বেলা অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন গ্রহণ পরিহার করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করুন। ওজন বেশি থাকলে তা কমিয়ে ফেলুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মূত্রত্যাগ করুন।</p> <p style="text-align:justify">পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ বা তলপেটের মাংসপেশির ব্যায়াম করুন। আপনার পায়ের টিস্যুতে যদি পানি জমে ফোলা ভাব থাকে তাহলে রাত নামার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই সেটিকে বিশ্রাম দিন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>চিকিৎসকের পরামর্শ নিন</strong></p> <p style="text-align:justify">নকটারিয়া যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হয়ে থাকে যেমন ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ, তাহলে এসব রোগের চিকিৎসা করলে নকটারিয়ারও উপশম হতে পারে। সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাটা গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p style="text-align:justify">ডাইরেটিকস এবং এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইমের ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমিয়ে আনা যায়। এক্ষেত্রে তারা চিকিৎসা সূচী এবং পদ্ধতি পরিবর্তন করে দিয়ে থাকেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নিয়মিত ব্যায়াম করা</strong></p> <p style="text-align:justify">ঘনঘন মূত্রত্যাগের বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ পেতে অনেক সময় ব্যায়াম উপকারে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে তলপেটের মাংসপেশি ও মূত্রথলির ব্যায়াম এবং এসংক্রান্ত চিকিৎসা ভালো কাজ করবে। তলপেটের মাংসপেশি ও মূত্রথলির ব্যায়ামের ফলে প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সহজ আসে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>প্রয়োজনে ওষুধ খেতে হবে</strong></p> <p style="text-align:justify">সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে রোজ ওষুধ খাওয়া নিয়ে ভীতি বা অস্বস্তি রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় রোগীর সাথে আলাপের পর চিকিৎসক নকটারনাল পলিইউরিয়া বা রাত্রিকালীন অতি মূত্র উৎপাদন রোগের চিকিৎসায় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।</p> <p style="text-align:justify">সবশেষে যদিও নকটারিয়া বয়স্ক মানুষের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, তারপরও যে কারো ঘুমে এটি বিঘ্ন ঘটাতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে জীবনমানের ওপরও।</p> <p style="text-align:justify">তাই এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তারা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে আলাপ-আলোচনা করে, দৈনন্দিন অভ্যাস থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অবস্থা, ওষুধ সেবনের মতো বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে তারপর সমাধান দিয়ে থাকেন।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র : বিবিসি</p>