<p style="text-align:justify">সংবিধান বাতিল ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতার মুখে পড়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।</p> <p style="text-align:justify">একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার দিন আন্দোলনের দুই নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের নেতাদের নানা বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে যে, আন্দোলনের নেতারা কতটা সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন?</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকার গঠন থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনার বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয় থেকেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের কাছ থেকে সমর্থনও পেয়েছেন তারা।</p> <p style="text-align:justify">তবে অভ্যুত্থানের তিন মাসের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের নানা সিদ্ধান্ত, বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>যেসব ইস্যুতে বিতর্ক, সমালোচনা</strong></p> <p style="text-align:justify">ছাত্রদের প্রথম যে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়, সেটি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং সংবিধান বাতিল ইস্যুতে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/08/1731068625-760d6e000eb1a27414260d653f6a5752.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/08/1444291" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এ দুটিসহ মোট পাঁচ দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি ভবন ঘেরাও করলে সেটার সমালোচনা হয়েছে। পরবর্তীকালে বিশেষত বিএনপি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়, এমন কোনো বিষয়ে দলটি সমর্থন জানাবে না।</p> <p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করলেও এসব ইস্যুতে কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">বরং বিএনপি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার পর অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলকেও কমবেশি কৌশলী অবস্থান নিতে দেখা গেছে।</p> <p style="text-align:justify">এসব দাবির পেছনে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার মতো ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনাও উঠেছে।</p> <p style="text-align:justify">দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হাইকোর্টে রিটের পদক্ষেপ।</p> <p style="text-align:justify">আর তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেখানে না থাকলেও সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা জাতীয় পার্টিকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে যে পোস্ট দেন সেটি বিতর্কের ঝড় তোলে।</p> <p style="text-align:justify">দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ছাত্রনেতারা কতটা আইনের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছেন, সেটা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান মনে করেন, এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি আসতে থাকলে সেটা জনপ্রিয়তা হারানোর কারণ হতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি সমন্বয়কদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন, রাজনৈতিক মতাদর্শও ভিন্ন। তারা যে জায়গায় কাজ করতে চাইছেন যে আওয়ামী লীগ বা এ রকম দলকে নিষিদ্ধ করতে। কিন্তু সেখানে দেখা গেল যে জাতীয় পার্টির অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর দায়ভার কেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নেবেন? অথচ আমরা দেখলাম, তারা দায় নিচ্ছেন কারণ তারা সায় দিচ্ছেন। তারাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লোক জড়ো করছেন।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে অভ্যুত্থান আর দেশ গঠন দুটো ভিন্ন জিনিস। অভ্যুত্থান আইন না মেনেই হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশ গঠন বা দেশ পরিচালনা কখনোই আইনের বাইরে হতে পারে না। এ ধরনের কাজ করে তারা কিন্তু জনসমর্থন ধরে রাখতে পারবে না।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>সমন্বয়কদের মধ্যে কতটা সমন্বয় হচ্ছে?</strong></p> <p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি প্রথম গঠিত হয় গেল আগস্টের শুরুতে। তখন থেকে সমন্বিতভাবে নানা কর্মসূচি ঘোষণা ও তা পালনের চেষ্টা দেখা গেছে সংগঠনের মধ্যে।</p> <p style="text-align:justify">তবে সম্প্রতি সমন্বয়ক কমিটি থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন আন্দোলনের নেতারা। যেখানে স্থান পেয়েছেন চার শীর্ষ নেতা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সাকিব-তামিমদের চেয়েও সেরা খেলোয়াড় তৈরি করতে চান সালাউদ্দিন" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/08/1731068479-053facd15c2afd05e8cd33fec9224008.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সাকিব-তামিমদের চেয়েও সেরা খেলোয়াড় তৈরি করতে চান সালাউদ্দিন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/sport/2024/11/08/1444290" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">কিন্তু হঠাৎ করে মাত্র চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি কেন গঠন হলো সেটা একটা বড় প্রশ্ন। জানতে চাইলে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদায় জানান, মূলত সংগঠনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতেই একটা কেন্দ্রীয় কাঠামো তৈরি করছেন তারা।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘এটা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাঁচ আগস্ট-পরবর্তী সময়েও আমরা মানুষকে সংগঠিত করতে চাই। আমাদের এক দফার দুটি অঙ্গীকার রয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিলোপ আর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা। এই দাবিতে মানুষকে সংগঠিত করতেই চারজনের একটা কাঠামো তৈরি হয়েছে। তারা একটা পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করবে। উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়েও সারা দেশে সংগঠনের বিস্তার ঘটাবে। এটার অংশ হিসেবেই আহ্বায়ক কমিটি তৈরি করা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু চারজনের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও সমন্বয়হীনতা কাটেনি। এটি স্পষ্ট হয়, আওয়ামী লীগসহ সমমনা বিভিন্ন দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে আদালতে রিট আবেদনের উদ্যোগে।</p> <p style="text-align:justify">এখানে দুটি বিষয় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। এক. নিষিদ্ধের তালিকায় সিপিবি এবং এলডিপির মতো দলের নাম থাকা। যেটা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।</p> <p style="text-align:justify">দুই. সাংগঠনিক ফোরামে আলোচনা ছাড়াই আন্দোলনের শীর্ষ দুই নেতার এমন উদ্যোগ নেওয়া। যদিও বিতর্কের মুখে পড়ে রিট আবেদন আর করেননি তারা।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু প্রশ্নটা ঠিকই উঠছে যে, এসব সিদ্ধান্ত কি এককভাবে যে যার মতো নিচ্ছেন, নাকি সমন্বিতভাবে হচ্ছে?</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া সম্প্রতি একজন সমন্বয়কের টিভি টক শোতে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার মুখে ওই সমন্বয়ককে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে।</p> <p style="text-align:justify">জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আরিফ সোহেল জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক যে শৃঙ্খলা বা কাঠামো সেটা ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিক জবাবদিহির আওতায়ও কিন্তু আমাদের যারা সদস্য আছেন তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে। সেহেতু এ রকম কাজ পরবর্তীকালে আর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আপনি যে রিটের কথা বলেছেন, রিটের প্রক্রিয়া যখন শুরু হয় তখন কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি ছিল না।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখানে কাজ করা পুরনো যে ধরন সেটি চলছে কিছুদিন ধরে। এটা ঠিক হতে সময় লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা মনে করি, এখন সব কিছু গুছিয়ে আসছে। আমরা সামনে একটা কাঠামোবদ্ধ সৃশৃঙ্খল পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে পারব।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলতে পারে?</strong></p> <p style="text-align:justify">এখানে সব মিলিয়ে এখন দুটি বিষয় দেখা যাচ্ছে। এক. ছাত্রদের কোনো কোনো বক্তব্য কিংবা কাজ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, সমালোচনা হচ্ছে। দুই. তারা রাজনৈতিকভাবেও নিজেদের তোলা দাবি নিয়ে বিরোধিতার মুখে পড়ছেন।</p> <p style="text-align:justify">এ দুটি বিষয়কেই ছাত্রদের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে সংবিধান বাতিল বা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের মতো দাবিগুলো বিরোধিতার মুখে পড়ার পর এর বাস্তবায়ন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে গেছে বলেই মনে করছেন অনেকে।</p> <p style="text-align:justify">যদিও আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, সামগ্রিকভাবে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়া বা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষায় ধাক্কা খাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলছেন, ‘বিএনপি বা অন্য কোনো দল, তারা যদি রাষ্ট্রপতির অপসারণে ভিন্নমত পোষণ করে থাকে, সে ক্ষেত্রেও এটি আসলে আমাদের কাছে কোনো ধাক্কা বলে মনে হয় না। আমাদের মনে হয় যে তাদের মতামত একটা যথাযথ প্রক্রিয়া যেটার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি যে, তারা কী মনে করছেন। তারাও বুঝতে পারছেন যে, আমরা কী মনে করছি। এর ফলে আমাদের মধ্যে ডায়ালগ বা সংলাপটা আরো ভালোভাবে হবে।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="চীন সফরে গেলেন বিমানবাহিনী প্রধান" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/08/1731068089-1e1b16ce95fdd3cae964c0a4025b9ac7.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>চীন সফরে গেলেন বিমানবাহিনী প্রধান</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/08/1444289" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, যেসব দল বা গোষ্ঠীগুলো গণ-েঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের ভালো কোনটা সেটা ভেবেই নিজ নিজ জায়গা থেকে চিন্তা করেই স্ট্রাটেজি সাজাচ্ছেন। আমরা সেটাই বিশ্বাস করতে চাই। আমরা সব পক্ষের মধ্যে যে ঐকমত্যের জায়গা সেটা খুঁজে বের করতে চাই, সেখান থেকে কাজ করতে চাই। আমাদের দাবি হচ্ছে, আমাদের দেশকে আমরা নতুন করে তৈরি করব এবং সেটা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে তৈরি করব।’</p> <p style="text-align:justify">তবে আরিফ সোহেল ঐক্যের কথা বললেও বাস্তবতা হচ্ছে, অভ্যুত্থানের পর আন্দোলনে যুক্ত বিভিন্ন পক্ষ কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও তাদের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেছে। ফলে বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যেই এক ধরনের অবিশ্বাস, সংশয় ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট।</p> <p style="text-align:justify">এর মধ্যে খোদ ছাত্রদের মধ্যেই সমন্বয়হীনতা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলতে পারে বলেই মনে হচ্ছে।</p>