<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রামের রাকিবুর রহমান টুটুল মাত্র ৩০০টি মুরগি দিয়ে খামার শুরু করেন। বছরে এখন হাজার কোটি টাকা আয় করছেন। কৃষিকে তিনি শিল্পে রূপান্তর করেছেন। আমার সুযোগ হয়েছিল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তার পোলট্রি ও ডেইরি খামার দেখার। খামারের নাম নাহার ডেইরি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিরসরাইয়ে রাকিবুর রহমান টুটুলের বিশাল মুরগির খামার। খামার ঘুরে দেখতে দেখতে টুটুলের মুখেই শুনলাম তার শুরুর গল্প। বললেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৮৬ সালে স্কুলে পড়ি। ছোটবেলা থেকেই আমার কৃষির প্রতি ঝোঁক। আপনার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাটি ও মানুষ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর কোনো পর্বই মিস করতাম না। মুরগির খামার কিংবা ডেইরি খামারের প্রতিবেদনগুলো বেশ নাড়া দিত আমাকে। স্কুলে পড়তে পড়তেই ৩০০ মুরগি দিয়ে শুরু করলাম ছোট খামার। বাঁশ কিনে খাঁচা তৈরি করলাম। আমি তো তখনো স্কুলের ছাত্র! মা-ই দেখাশোনা করতেন। মায়ের নামে খামারের নাম রাখলাম। এরপর দুটি গরু কিনে শুরু করলাম ডেইরি খামার। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা। আমাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। সারা জীবন ভেবেছি, আমার হারানোর কিছু নেই। ৩০০ মুরগি কেনার টাকাটা থাকলেই হলো।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টুটুলের কথা, উদ্যোক্তা হতে গেলে ঝুঁকি নিতে হবে। ৩৮ বছরের পথচলায় কৃষিভিত্তিক সুবিশাল কার্যক্রম গড়ে তুলেছেন তিনি। এখন চার হাজার কর্মী কাজ করছেন তার বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক খামার ও শিল্প-কারখানায়। আর্থিক সাফল্যও বিস্ময়কর। বছরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার টার্নওভার। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টুটুলের আইওটিনির্ভর ডেইরি খামারটি জোরারগঞ্জ থেকে মিনিট তিরিশের পথ নলকোতে। মিরসরাইয়ের নলকো এলাকায় পাহাড়বেষ্টিত নান্দনিক এক ক্ষেত্র গড়ে তুলেছেন টুটুল। উন্নত বিশ্বের আধুনিক দুগ্ধ খামারের মতোই। আধুনিক শিল্প-কারখানার মতো নিরাপদ ও গোছানো চারপাশ। খামারের প্রবেশমুখে বায়োসেফটির ব্যবস্থা। ৩৫ একর জায়গায় বিশাল খামার। সারি সারি শেডে নানা জাতের গরু। টুটুল জানালেন, এই খামারে এক হাজার ২০০ গরু আছে। এর মধ্যে ৭০০ দুগ্ধজাত গাভী। সব গাভীর গলায় অ্যাক্টিভিটিজ বেল্ট রয়েছে, এর ভেতরেই রয়েছে মাইক্রোচিপ। এই মাইক্রোচিপ কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে পাঠাচ্ছে গাভীর শারীরিক ও পারিপার্শ্বিক সব তথ্য। আধুনিক ও কারিগরি এই বিষয়গুলোকে পুরোপুরি রপ্ত করে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে বিশাল খামারটি, যা মনে করিয়ে দেয় কোরিয়ার চুংনামে দেখা খামারটির কথা। সেখানে যন্ত্রের সাহায্যে খাবারের উপাদানগুলো মিশিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাদ্য তৈরি করে পৌঁছে দেওয়া হয় গরুর সামনে। টুটুলের খামারের ব্যবস্থাপনাও প্রায় সে রকম। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসের ডো মার্কে গরুর খামারে গিয়ে অবাক হয়েছিলাম। ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি কৃষিতে যে বৈপ্লবিক রূপান্তর আনতে যাচ্ছে, তখনই অনুধাবন করেছিলাম। স্মার্ট ফার্ম ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি গরুর জন্য একটি করে চিপ থাকে। চিপটি সাধারণত গলার কলারে বা কানে ট্যাগে লাগানো থাকে। এটি এমন একটি চিপ, যা গরুর শারীরিক ও পারিপার্শ্বিক সব ধরনের তথ্যই সংগ্রহ করতে সক্ষম; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেহের তাপমাত্রা, রক্ত সঞ্চালন, জাবর কাটা থেকে শুরু করে প্রজনন সময়ের নির্ভুল হিসাব দেয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডো মার্কের আধুনিক দুধ দোয়ানোর পদ্ধতিটাও চমকপ্রদ। সেখানে গাভি উন্মুক্ত বিচরণ করতে করতে নিজেই যখন উপলব্ধি করে তার দুধ দেওয়ার সময় হয়েছে, তখন লাইন ধরে দুধ দোয়ানো কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। শুধু গাভীর উপলব্ধি দিয়ে যন্ত্র সন্তুষ্ট হয় না, যন্ত্র যখন তার হিসাব দিয়ে উপলব্ধি করবে যে দুধ দোয়ানোর জন্য গাভি প্রস্তুত, তখনই সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুধ দোয়াতে শুরু করবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টুটুলের খামারেও একই চিত্র। মিল্কিং পার্লারে প্রবেশের আগে স্বয়ংক্রিয় সেন্সরে চালু হয় শাওয়ার চ্যানেল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে একে একে সব গাভি প্রবেশ করে মিল্কিং পার্কে। সেখানে অটোমেশিনে চলে দুগ্ধ দোয়ানো। গাভির ওলানে মেশিন বসানোর আগে কঠোরভাবে মেনে চলা হয় বায়োসেফটি। জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ওলান পরিষ্কার করে টিস্যু দিয়ে মুছে তবেই দুধ দোয়ানো হয়। আমাদের গ্রামের কৃষকরাও দুধ দোয়ানোর আগে গাভীর ওলান পরিষ্কার করে নেয়। এটি খুব ভালো চর্চা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টুটুল জানালেন, প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার লিটার দুধ পাওয়া যায়। ছোট একটি উদ্যোগ থেকে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড় তুলেছেন টুটুল। তার সাফল্য হোক অন্যদের অনুপ্রেরণা। </span></span></span></span></span></p>