<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে মাছ চাষ শিল্পের শুরুর কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই মনে পড়ে হাকিম আলীর কথা। বিটিভিতে প্রচার হতো হাকিম আলীর মৎস্য খামার নিয়ে ছোট্ট একটি ভিডিওচিত্র।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল বিশ্বজুড়ে পালিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ ডে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তে সেই হাকিম আলীর কথা মনে পড়ে গেল। মানুষের পুষ্টি চাহিদার বড় একটি অংশের জোগান আসছে মাছ থেকে। ধারণা করা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ৫০ কোটি মানুষের রুটিরুজি মাছ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আশির দশকের শেষ ভাগেও প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোই ছিল মাছের মূল উৎস। যখন গেরস্ত কৃষককে তার পুকুর দেখিয়ে বলতাম, এই পুকুরটাতে মাছ চাষ করতে পারেন। তখন তারা অবাক হয়ে বলত, চাষ তো হয় ধান-পাটের, মাছের আবার চাষ কী? </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাড়ির পাশের পুকুরটি তারা ব্যবহার করত গোসল আর কাপড় ধোয়ার কাজে। কিন্তু এই পুকুরটিই যে তার পারিবারিক মাছের চাহিদা মিটিয়ে আয়ের বড় একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তা ছিল তার চিন্তার বাইরে। সরকারি উদ্যোগ ও টিভির প্রচারে মাছ চাষ ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। আজ সেই এক হাকিম আলী থেকে লাখ লাখ হাকিম আলী মাছ চাষে যুক্ত। বাংলাদেশ টেলিভিশনের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাটি ও মানুষ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম দেশব্যাপী ছোট ছোট উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে। সে সময় মাছ চাষ বিকাশে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, তাদের অন্যতম নরসিংদীর পাঁচদোনার সামসুদ্দিন সামা। বলছি গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শুরুর দিকের কথা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামসুদ্দিন সামা নরসিংদীর পাঁচদোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে দপ্তরির কাজ করতেন। অল্প বেতনে সংসার চালানোই ছিল কঠিন। হাকিম আলীর মাছ চাষের সেই ভিডিও দেখে সামা ভাবলেন তিনিও মাছ চাষ করবেন। কিন্তু মাছ চাষের কোনো পুকুর তার ছিল না। ছিল না পুকুর লিজ নেওয়ার মতো টাকাও। কিন্তু তার অদম্য ইচ্ছা তাকে দমাতে পারেনি। স্কুলের সামনে ছোট্ট একটা ডোবা। সেটি মাছ চাষের মতো বড় নয়। মাছের ধানি পোনা এনে সেখানে কিছুদিন রেখে চারা বা আঙুলি পোনা করে বিক্রি শুরু করলেন। এভাবে কিছু টাকা জমল হাতে। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথমে পুকুর লিজ নিয়ে, পরে জমি কিনে পুকুর কেটে মাছ চাষ করেছেন সামা। তাকে নিয়ে বিটিভিতে বেশ কিছু প্রতিবেদন তৈরি করেছিলাম। ফলে একাধিকবার সামার বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। তিনি স্কুলের সামনের সেই ডোবা থেকে মাছ চাষ শুরু করে ২২টি পুকুর পর্যন্ত বাড়িয়েছিলেন। সাফল্যকে তিনি নিজ হাতে গড়েছেন। নরসিংদীর আশপাশের বহু মাছ চাষির অনুপ্রেরণা ছিলেন সামা। তার কাছ থেকে মাছ চাষ শিখে অনেক উদ্যোক্তাই সফল হয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কয়েক বছর আগে সামসুদ্দিন সামা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। রেখে গেছেন চার সন্তান। নতুন প্রজন্মের কাছে সামার মাছ চাষ কার্যক্রম কেমন চলছে, তা দেখার জন্য একদিন গিয়ে হাজির হই পাঁচদোনায়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামার চার সন্তান বাবার মাছ চাষে যুক্ত হয়েছেন। তবে এখন আটটি পুকুর মিলে আট বিঘার মতো জলাধার। সেখানে ময়মনসিংহ থেকে রেণু পোনা এনে বড় করা হচ্ছে। তারপর স্থানীয় মাছ চাষিদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুকুরপারে সামার স্ত্রী পারু বেগমের সঙ্গে দেখা। আমাকে দেখে আবেগাপ্লুত হলেন। আমারও মনে পড়ে গেল পুরনো দিনের কথা। এই পুকুর, এই বাড়ি, মাঝখানে কেটে গেছে ৩০টি বছর! পুকুর কিংবা বৈঠকখানা সব কিছুই সামার স্মৃতিতে মোড়ানো। সামা আজ পৃথিবীতে নেই, তবু যেন রয়ে গেছেন খামারের সবখানে।</span></span></span></span></span></p>