<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খুলনা অঞ্চলের এক চরমপন্থী নেতাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০০৩ সালে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় খুলনার তখনকার এসপিকে। শুরুতে তিনি রাজি না হলেও পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাধ্য হন। তবে ক্রসফায়ার করতে কোনো পুলিশ সদস্যকে রাজি করানো যাচ্ছিল না। শেষে একজন কনস্টেবল রাজি হলে তাকেসহ চরমপন্থী নেতা ও এসপিকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি নির্জন স্থানে। সেখানে চরমপন্থী নেতাকে গুলি করার আগমুহূর্তে কনস্টেবল ফের বেঁকে বসেন। তখন এসপি তাকে আবারও বুঝিয়ে রাজি করালে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি গুলি করছি, কিন্তু সব দায়দায়িত্ব আপনার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এসপি দায় নিতে রাজি হলে কনস্টেবল বন্দুকের ট্রিগার চাপেন। সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্যে ক্রসফায়ারের এমন স্মৃতির কথা জানা গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্রসফায়ারের ইতিহাসে ২০০৩ সালে খুলনার ক্রসফায়ারই সর্বপ্রথম। এর পরের বছর ২০০৪ সালে গঠন করা হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারে দিতে শুরু করলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। এর জন্য দেশের মানুষ র‌্যাবকে কিছুটা সমীহের চোখে দেখতে শুরু করে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর র‌্যাবকে দিয়ে সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক কিলিং মিশন শুরু করে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্দুকযুদ্ধে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র নামে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের পর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমনে র‌্যাবকে ব্যবহার শুরু করে সরকার। ক্রমে এর মাত্রা বাড়তে থাকে। পরে ক্রসফায়ারের পাশাপাশি শুরু করা হয় গুম। গুম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, গুম কমিশনে জমা পড়া এক হাজার ৬০০টি গুমের অভিযোগের মধ্যে ৩৮৩টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছে কমিশন। এসব অভিযোগের মধ্যে র‌্যাবের বিরুদ্ধেই রয়েছে ১৭২টি। আর সিটিটিসির বিরুদ্ধে ৩৭টি, ডিবির বিরুদ্ধে ৫৫টি, ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ২৬টি, পুলিশের বিরুদ্ধে ২৫টি এবং অন্য সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ৬৮টি গুমের অভিযোগ রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব অভিযোগের ঘটনায় এরই মধ্যে গুম কমিশন জানতে পেরেছে গ্রেপ্তার সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, পুলিশের এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী, অতিরিক্ত এসপি আলেপ উদ্দিনসহ আরো অনেকের নাম।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্রসফায়ার করতে অনেক পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাকে রাজি করানো যেত না। এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরে এক ধরনের অসন্তোষ ছিল। ফলে ক্রসফায়ারের জন্য র‌্যাব ও ডিবিতে আলাদা টিম গঠন করা হয়। টিমটি অলিখিত হলেও ক্রসফায়ারে পারদর্শীদের আলাদা নামের তালিকা ছিল। কোথাও ক্রসফায়ারের প্রয়োজন হলে ডাক পড়ত ওই কর্মকর্তা ও সদস্যদের। এদের অনেকে বিপিএম, পিপিএম পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রসফায়ারের প্রয়োজনে ডেকে পাঠানো হতো ঢাকার টিমকে। আর ক্রসফায়ারের পর সাজানো হতো একই গল্প</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্দুকযুদ্ধ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক মহলে ক্রসফায়ার বা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্দুকযুদ্ধ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর ২০২১ সালে নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্রসফায়ার কখনো কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। কেউ অপরাধী হলে তার বিচার হবে আদালতের মাধ্যমে। তাহলেই শৃঙ্খলা থাকবে। অবাধে ক্রসফায়ার করে হাত পাকানোর ফলে ছাত্রদের ওপর গুলি করতেও পুলিশের হাত কাঁপেনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুলিশের এই অবস্থা হলো কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগে এ অবস্থাটা ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেখেছি সরকারপ্রধানের প্রতি তোয়াজের রেওয়াজটা বেড়ে গেছে। অনেককে সালাম করতেও দেখেছি। যদি সবাই এভাবে নুয়ে পড়ে তাহলে তো সরকারও সেই সুযোগটা নেবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুলিশও অন্য পেশার মতো বেতনভুক্ত কর্মচারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাকে কেন মানুষকে হত্যার মতো কাজ করতে হবে? হত্যা না করলে কি তার বেতন আটকে থাকবে?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নূর মোহাম্মদের মতে, এবারের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের বেপরোয়া গুলি করার পেছনে গত ১৯-২০ বছরের গুলি করার অভ্যস্ততা কাজ করেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্রসফায়ার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্দুকযুদ্ধ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিচারবহির্ভূত হত্যা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র নামে এক হাজার ৯২৬ জন মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এক হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। এ সময়ে শুধু ওই জেলায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্দুকযুদ্ধে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নিহত হয়েছে ২০৬ জন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কক্সবাজার জেলা ছাড়াও এ তালিকায় ওপরের দিকে থাকা অন্য জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, খুলনা ও যশোর। সারা দেশে বন্দুকযুদ্ধে মোট নিহতের ৬০ শতাংশ নিহত হয়েছে এ কয়েকটি জেলায়।</span></span></p>