<p style="text-align:justify">পুলিশে ঢুকেই আলেপ উদ্দিন হয়ে উঠেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন। চাকরির এক বছর পরই তাঁকে র‌্যাবে পাঠানো হয়। র‌্যাব-১১-তে দায়িত্ব পালনকালে তিনি গুম ও ক্রসফায়ার করে হাত পাকান। র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা ইউনিটে গিয়ে এই কর্মে অভিজ্ঞতা বাড়ান। তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মিলিয়ে অন্তত ২০টি গুমের সঙ্গে জড়িত।</p> <p style="text-align:justify">কুড়িগ্রামের সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া আলেপ পুলিশে চাকরি পাওয়ার পরপরই বদলে যেতে থাকেন। অল্প সময়েই তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। তবে টাকা তিনি নিজের কাছে না রেখে ম্যানেজার নিয়োগ করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">তাঁর গ্রামে অন্তত পাঁচজন ম্যানেজারের তথ্য মিলেছে। নিজেকে সৎ হিসেবে জাহির করতে আলেপ এটা করেছেন। তাঁর দুই ভাই একসময় ছোটখাটো ব্যবসা করলেও কয়েক বছরে তাঁরাও কোটি কোটি টাকার মালিক হন। আলেপের কারণেই তাঁরা আলাদিনের চেরাগ পান।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ আমলে গুম ও ক্রসফায়ারের জন্য কিছু কর্মকর্তাকে সিলেক্ট করা হয়েছিল। তাঁদের একজন আলেপ। তিনি সরকারের যেকোনো অনৈতিক আদেশ পালন করতে দ্বিধা না করায় পুরস্কারও পেয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে দুবারই পদক পরিয়ে দেন। সূত্র মতে, রাজধানীতে আলেপের নেতৃত্বে ১০-১২ জনকে গুম করা হয়। অনেক ব্যবসায়ীকে গুম ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকাও হাতান তিনি। নারায়ণগঞ্জেও তিনি গুমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেই আলেপকে বাঁচাতে প্রভাবশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে।</p> <p style="text-align:justify">পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তাঁকে বরিশাল থেকে আটক করা না হলেও তাঁর ব্যাংক কর্মকর্তা স্ত্রী ওয়াফা নুসরাত গত বুধবার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে তাঁর স্বামীকে কর্মস্থল থেকে ‘ডিবি পরিচয়ে’ তুলে নেওয়া হয়। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ মিলছে না। বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ নাজিমুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আলেপের বিরুদ্ধে করা একটা মামলার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং কথা বলার জন্য ডেকে নিয়ে যায়। এখানে তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার ডিবি আলেপকে ফোন করে ডেকে আনে। আলেপ একাই ঢাকায় আসেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।</p> <p style="text-align:justify"><strong>আলেপের বিরুদ্ধে গ্রামেও আলোচনা </strong>: আলেপ উদ্দিনের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ১ নম্বর হাড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবোত্তর (চায়না বাজার) গ্রামে। তাঁর বাবা মৃত অজর উদ্দিন। তিনি বেঁচে থাকতে পাটের ব্যবসা করতেন। দুই বিয়ে করেছিলেন। আলেপ দ্বিতীয় সংসারের সন্তান। এই ঘরে তাঁরা চার ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে আলেপই উচ্চশিক্ষিত। অন্যরা এলাকায় ব্যবসা করেন। একসময় তাঁদের ব্যবসা ছোট হলেও আলেপ পুলিশে যোগদানের পর ব্যবসা বড় হতে থাকে।</p> <p style="text-align:justify">তাঁর গ্রামের এলাকার এক ব্যক্তি কালের কণ্ঠকে জানান, আলেপের ছোট ভাইয়ের নাম আলতাফ হোসেন। আলতাফ আলুর ব্যবসা করতেন। কয়েক বছরে তিনি অনেক সম্পত্তির মালিক হন। অন্তত ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন। ৩০ বিঘা জমিতে পুকুর করেছেন। আলেপের বড় ভাই আবু তাহের ধানের ব্যবসা করেন। তিনিও কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হন। বিষয়টি গ্রামে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে আলতাফ হোসেনকে ফোন করলে তিনি ধরেননি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>আলেপের উত্থান </strong>: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স শেষে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি এএসপি হিসেবে আলেপ পুলিশে যোগ দেন। তিনি ৩১তম বিসিএস ক্যাডার। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি র‌্যাব-১১-তে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাঁকে লালমনিরহাটে বদলি করা হয়। সেখানে অতিরিক্ত এসপি হিসেবে তিন মাসের মতো দায়িত্ব পালনের পর তাঁকে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা ইউনিটে বদলি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে জুলাই বিপ্লবের দুই মাস আগে এসবিতে বদলি করা হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁকে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবে দায়িত্ব পালনের শুরুর পর কিছুদিন তিনি ভালো কাজ করেন। এর পরই নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলেন। একসময় নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী নূর হোসেনের সাম্রাজ্য থেকেও তাঁর কাছে চাঁদা আসতে শুরু করে। সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১-এর সিও তারেক সাঈদ অপকর্মের হোতা ছিলেন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের পর তাঁর মুখোশ উন্মোচিত হয় এবং গ্রেপ্তার হন। কিন্তু আলেপ জুনিয়র অফিসার হয়েও র‌্যাব-১১-এর সিওর অভাব যেন পূরণ করতে সক্ষম হন। তিনি জড়িয়ে পড়েন গ্রেপ্তার বাণিজ্য, বালু মহালের চাঁদা তোলাসহ সন্ত্রাসীদের সুযোগ সুবিধা দিতে। একসময় সরকারের আস্থাভাজন হয়ে গুম করার জন্যও নিজেকে দক্ষ করে তোলেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>রিমান্ডে আলেপ </strong>: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জোবায়ের ওমর খান হত্যার ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।</p>