<p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলাম নারীর অন্যসব অধিকারের মতো আত্মরক্ষার অধিকারও নিশ্চিত করেছে। ইসলাম শর্তসাপেক্ষে নারীকে আত্মরক্ষামূলক শরীরচর্চা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। আত্মরক্ষার প্রশ্নে ইসলাম নারী-পুরুষে পার্থক্য করেনি; বরং ক্ষেত্রবিশেষ নারীকে প্রাধান্য দিয়েছে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আত্মরক্ষামূলক শরীরচর্চা কাকে বলে</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আত্মরক্ষামূলক শরীরচর্চা বলতে এমন কিছু শারীরিক কর্মকাণ্ড, যা মানুষের পেশিগুলো সুস্থ রাখতে ও সুসংহত করতে করা হয়। কেননা মানুষের পেশিগুলো সুস্থ ও সবল হলে তা আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধে সহায়ক হয়। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে পেশির সংকোচিত ও প্রসারিত হয়। ফলে মানুষের শরীরিক শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নারীদের শরীরচর্চার বিধান</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে নারীদের শরীরচর্চা করা বৈধ। চাই সুস্থতার জন্য হোক বা আত্মরক্ষার জন্য হোক। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে নারীরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত। কখনো কখনো সম্মুখ সমরেও অংশ নিয়েছেন। যা থেকে প্রমাণিত হয় তাদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ ছিল। এ ছাড়া আল্লাহ নারী ও পুরুষ উভয়কে আত্মরক্ষার অধিকার দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুতরাং যে তোমাদের ওপর আক্রমণ করেছে, তোমরা তার ওপর আক্রমণ করো, যেরূপ সে তোমাদের ওপর আক্রমণ করেছে। আর আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৪)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লাহর কাছে দুর্বল ঈমানদারের চেয়ে শক্তিশালী ঈমানদার বেশি পছন্দনীয়। যদিও উভয় প্রকার ঈমানদারের মধ্যেই কল্যাণ আছে। তুমি তোমার কল্যাণকর বিষয়াদির প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য চাও, অক্ষম হয়ো না।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৬৬৪)</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যেসব শর্তে শরীরচর্চা জায়েজ</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নারীদের শরীরচর্চা বৈধ হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া আবশ্যক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১. স্থান সংরক্ষিত হওয়া : মুসলিম</span></span></strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নারীরা এমন সংরক্ষিত স্থানে শরীরচর্চা করবে, যেখানে কোনো পুরুষের প্রবেশাধিকার থাকবে না। কেননা ইসলামী শরিয়তে নারীর জন্য গাইরে মাহরাম (বিয়ে বৈধ এমন) পুরুষ থেকে নিজের শরীর ও শারীরিক অবয়ব আড়াল করা আবশ্যক। সংরক্ষিত স্থান এ জন্যও প্রয়োজন যে সাধারণত শরীরচর্চার ফলে ঘাম হয়। এতে দেহের সঙ্গে কাপড় লেপ্টে যায় এবং শরীরিক কাঠামো স্পষ্ট হয়ে যায়। যা কোনো আত্মসম্মানের অধিকারী লজ্জাশীল নারীর জন্য বিব্রতকর। এ ছাড়া শরীরচর্চার সময় কখনো কখনো বুক, পেট, পাসহ বিভিন্ন অঙ্গের কাপড় সড়ে যায়। এসব অঙ্গ মাহরম পুরুষের সামনেও উন্মুক্ত করা নিষিদ্ধ। সেখানে গাইরে মাহরামের সামনে প্রকাশ করা আরো বেশি নিষিদ্ধ হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আর মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সুরা নুর, আয়াত : ৩১)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২. সতর ঢেকে রাখা : যেসব</span></span></strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> অঙ্গ নারীর সতরের অন্তর্ভুক্ত সেগুলো ঢেকে রাখা। নারীদের সামনে নারীদের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। কারো কারো মতে, বুক-পিঠও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে আলেমদের পরামর্শ হলো শরীরচর্চার সময় এমন পোশাক পরবে, যেন কসরতের সময় শরীরের কোনো অঙ্গ প্রকাশ না পায়। সেখানে শুধু নারীরা থাকলেও। শরীরচর্চার উপযোগী এমন পোশাক বাজারে সহজলভ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কোনো পুরুষ অপর পুরুষের এবং কোনো নারী অপর নারীর সতর দেখবে না।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৮৮)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইমাম নববী (রহ.) হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, হাদিস থেকে জানা যায়, পুরুষের জন্য অন্য পুরুষের এবং নারীর জন্য অন্য নারীর সতর দেখা হারাম। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো মতভিন্নতা নেই। (শরহু মুসলিম)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৩. ক্ষতি না হওয়া : নারী</span></span></strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> ও পুরুষ কারো জন্য এমন কোনো শরীরচর্চা করা বৈধ নয়, যা তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হয়। যেমন এমন শরীরচর্চা ও প্রশিক্ষণ যার ফলে নারীর নারীসুলভ আচরণে পরিবর্তন আসে, তার গর্ভধারণের যোগ্যতা হ্রাস পায়, হরমোনগত পরিবর্তন আসা, ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নিজের ক্ষতি কোরো না, অন্যের ক্ষতি কোরো না।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪১)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৪.  দ্বিন পালনে প্রতিবন্ধক না হওয়া : পুরুষ</span></span></strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বা নারীরা শরীরচর্চায় এতটা মগ্ন হবে না যা তার দ্বিন পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়। যেমন যথা সময়ে নামাজ আদায়, মা-বাবার খেদমত, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ইত্যাদি আদায় করতে সক্ষম না হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেই দিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সুরা নুর, আয়াত : ৩৭)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মোটকথা, ইসলামী শরিয়তের বিধান ও শিক্ষার পরিপন্থী না হলে এবং সংরক্ষিত ও নিরাপদ পরিবেশের শর্ত পেলে নারীদের যেকোনো শরীরচর্চা বৈধ।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিবেচনা</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলাম নারীর নিরাপত্তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ জন্য কোনো নারী তাঁর জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য কারো ওপর আক্রমণ করলে সে দায়মুক্ত থাকবে। উবাইদ ইবনে উমায়ের (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তির ঘরে একজন মেহমান এলো। ফলে তারা জনৈক বাঁদীকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে পাঠাল। বাঁদীকে মেহমানের পছন্দ হলে তার পেছনে লাগল এবং তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে চাইল। বাঁদী তাকে বাধা দিল। সে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ মোকাবেলা করল। অতঃপর বাঁদী দৌড়ে পালাল এবং পাথর ছুড়ে মারল। এতে তার কলিজা বিদীর্ণ হলো। ঘরে এসে সবাইকে ঘটনা জানাল। তারা ওমর (রা.)-এর কাছে ঘটনার বৃত্তান্ত জানাল। ওমর (রা.) সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ফায়সালা দিলেন, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিহত হয়েছে, তার কোনো রক্তপণ দেওয়া লাগবে না।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৭৯১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৭৭৯৪)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে দ্বিন মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন</span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>