<p>সাল ১৯২৭। ইলেকট্রন কণা না তরঙ্গ— এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যায় ইলেকট্রন একটি কণা। শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণে ইলেকট্রন তরঙ্গ। ডি ব্রগলি তো বললেন— শুধু ইলেকট্রনই নয়, সকল বস্তুই একই সাথে কণা ও তরঙ্গ। অবশেষে সমস্যার সমাধান দিলেন হাইজেনবার্গ। বললেন, কোয়ান্টাম কণিকা একই সাথে কণা ও তরঙ্গ দুই অবস্থায়ই থাকতে পারে। কিন্তু দুই চরিত্র একসাথে পাওয়া যায় না।</p> <p>আপনি চাইলে ইলেকট্রনকে কণা হিসেবে দেখতে পারেন। আবার তরঙ্গ হিসেবেও দেখতে পারেন। কণা হিসেবে দেখতে চাইলে ইলেকট্রনের তরঙ্গ ধর্ম ভেঙে পড়বে। অর্থাৎ অনিশ্চিত হয়ে যাবে। আবার তরঙ্গ পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে ইলেকট্রনকে পর্যবেক্ষণ করলে, এর কণা ধর্ম হবে অনিশ্চিত। অর্থাৎ ভেঙে পড়বে। কিন্তু যখন পর্যবেক্ষণ করছেন না, তখন ইলেকট্রন একই সঙ্গে কণা এবং তরঙ্গ— দুই অবস্থাতেই আছে। এটাই হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি।</p> <p>অনিশ্চয়তা সূত্র বড় এক প্রশ্নের জন্ম দেয়। অনিশ্চয়তার উৎস— ইলেকট্রনের ধর্মে না যন্ত্রে? এই প্রশ্নের সমাধান দেন নিলস বোর। তরঙ্গ ও কণা কিংবা ভরবেগ ও অবস্থান— এগুলোকে একে অন্যের সম্পূরক বৈশিষ্ট্য বলা হয়। ১৯২৭ সালে বোর তাঁর সম্পূরক নীতির প্রস্তাব করেন।</p> <p>সে নীতি অনুযায়ী, ইলেকট্রনের একই মুহুর্তের ভরবেগ ও অবস্থান মাপা অসম্ভব। তেমনি অসম্ভব একই যন্ত্র দিয়ে মাপা। এই নীতি হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা মতবাদের পূর্ণতা দেয়। বাস্তব জীবনেও অনিশ্চয়তা নীতির প্রভাব রয়েছে। কিন্তু তা আমরা উপেক্ষা করতে পারি।</p> <p>অনিশ্চয়তার নীতি শুধুই ভরবেগ ও অবস্থানের জন্য কাজে দেয়, এমন নয়। কণার কৌণিক ভরবেগ, কৌণিক সরণ, কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে সময় ও শক্তি পরিমাপেও সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, শক্তি ও সময়ের ক্ষেত্রে, শক্তি সম্পর্কে যত নির্দিষ্ট/ নিশ্চিত হওয়া যাবে, সময়ের অনিশ্চয়তা তেমনই বাড়বে।।</p> <p>হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি বলে— আপনি একই সঙ্গে কোনো কণার অবস্থান ও ভরবেগ সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারবেন না। প্রথমটা যত নির্দিষ্টভাবে জানবেন, অন্যটির অনিশ্চয়তা তত বেশি হবে।</p> <p>অনিশ্চয়তা নীতির ধারণা থেকেই তৈরি হয়েছে কণা ত্বরক বা পার্টিকল অ্যাকসিলারেটর যন্ত্র। যেমন সুইজারল্যান্ডের লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার। যেখানে ক্ষুদ্র কণাগুলোকে বিদ্যুৎচুম্বক বল দিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে প্রায় আলোর গতিতে নিয়ে আসা হয়। এরপর ঘটে মুখোমুখি সংঘর্ষ। সাধারণ শক্তির তুলনায় এখানে ট্রিলিয়ন গুণ অধিক শক্তির প্রয়োজন। সেই সংঘর্ষের শক্তি থেকে তৈরি হয় আরও অসংখ্য ক্ষুদ্রতর কণিকা। এভাবেই খোঁজ মিলেছে হিগস-বোসন কণার। যাকে ঈশ্বর কণা বলেও ডাকা হয়।</p> <p><strong>সম্পর্কিত তত্ত্ব</strong><br /> শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ<br /> ডিরাক সমীকরণ<br /> ফাইনম্যানের ডায়াগ্রাম</p> <p><strong>বিজ্ঞানী</strong><br /> <strong>এরউইন শ্রোডিঙ্গার</strong><br /> ১৮৮৭-১৯৬১<br /> অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ, কোয়ান্টাম তত্ত্বের অন্যতম স্থপতি, কসমোলজি ও জেনেটিকসে যাঁর অবদান অনস্বীকার্য।</p> <p><strong>ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ</strong><br /> ১৯০১-১৯৭৬<br /> জার্মান পদার্থবিদ, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অগ্রদূত, কোয়ান্টাম কণাদের অদ্ভুত আচরণের গাণিতিক কাঠামো প্রকাশ করেছিলেন।</p> <p><strong>বর্ণনা</strong><br /> ফ্র্যাঙ্ক ক্লোজ</p>