<p>বাংলাদেশ ও পূর্ব তিমুরের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমে গভীর ও প্রসারিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।</p> <p>রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। তবে চুক্তির বাইরে আমরা নিশ্চিত করছি যে আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে এবং প্রসারিত হবে।’</p> <p>তিনি বলেন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে সব বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীকে তাঁর দেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্ককে আরো বৃদ্ধির জন্য উত্সাহিত করেছেন।</p> <p>অধ্যাপক ইউনূস স্মরণ করেন যে যখন তিনি প্রথমবার পূর্ব তিমুর সফর করেছিলেন, তখন দেখেছিলেন যে বাংলাদেশের অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সেই দেশের গ্রামের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে। তিনি তিমুর-লেস্তেকে আহ্বান জানান বাংলাদেশি পণ্য নিজ দেশে উত্পাদন করতে। কারণ এর চারপাশে বড় বাজার রয়েছে।</p> <p>এখনো অনেক বাংলাদেশি তিমুর-লেস্তেতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তিমুরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখব।’</p> <p>প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিমুর-লেস্তে শিগগিরই আসিয়ান ফোরামের সদস্য হবে এবং তিমুর-লেস্তের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছেন যে আসিয়ান সদস্য হিসেবে তাঁর দেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সমর্থন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।</p> <p>প্রধান উপদেষ্টা জানান, তাঁরা উভয় নেতা আলোচনা করেছেন, কিভাবে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসন সম্ভব এবং এই বিষয়ে তিমুর-লেস্তের আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থন চেয়েছেন।</p> <p>বৈশ্বিক শান্তিতে তিমুর-লেস্তের প্রেসিডেন্টের অবদানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ১৯৯৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী রামোস-হোর্তা একজন স্বাধীনতাসংগ্রামী এবং মহান লেখক। তিনি শুধু পূর্ব তিমুরের জনগণের জন্য নয়; বরং সারা বিশ্বের মানুষের জন্য কাজ করেন।</p> <p>রামোস-হোর্তার বন্ধু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন, যখন রামোস-হোর্তা নোবেল পুরস্কারের সব অর্থ ক্ষুদ্রঋণের জন্য দান করেছেন।</p> <p><strong>বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতি বিনিয়োগের আহ্বান </strong><br /> যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিমুর-লেস্তের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস-হোর্তা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের তাঁর দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে রামোস-হোর্তা বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা বাংলাদেশ থেকে আরো পণ্য আমদানি করতে পারি এবং বাংলাদেশি কম্পানিগুলোকে তিমুর-লেস্তে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আগামী বছর আমরা আসিয়ানের সদস্য হব এবং সেই সঙ্গে ৭০০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর অঞ্চলের অংশ হয়ে উঠব।’ তিনি আরো বলেন, আগামী বছর তিমুর-লেস্তে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি জিডিপি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হবে।</p> <p>তিমুর-লেস্তের প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশ তাঁর দেশের উন্নয়নে অংশীদার হবে। তিনি বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত নেতা, যিনি এখনো সক্রিয়ভাবে অফিসে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে নেলসন ম্যান্ডেলা, জন এফ কেনেডি, মহাত্মা গান্ধী, ফিদেল কাস্ত্রো এবং চে গুয়েভারার মতো বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তুলনা করেন।</p> <p><strong>দুই চুক্তি সই</strong><br /> বাংলাদেশ ও তিমুর-লেস্তের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ভিসা অব্যাহতি ও দ্বিপক্ষীয় কনসালটেশন মেকানিজম (বিসিএম) প্রতিষ্ঠার বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে দুটি চুক্তি সই হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তিমুর-লেস্তের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তার উপস্থিতিতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চুক্তিগুলো সই হয়।</p> <p>নিজ নিজ সরকারের পক্ষে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তিমুর-লেস্তের পররাষ্ট্র ও সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ড. বেনডিটো দোস সান্তোস ফ্রেইতাস কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতিসংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং ড. বেনডিটো দোস সান্তোস ফ্রেইতাস দ্বিপক্ষীয় কনসালটেশন মেকানিজম (বিসিএম) প্রতিষ্ঠার বিষয়সংক্রান্ত স্মারক সই করেন।</p> <p>সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিমুর-লেস্তের প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা শনিবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। খবর বাসস’র।</p>