<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশকে বলা হয় এনজিওর দেশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনকি পৃথিবীর এক নম্বর এনজিওর জায়গা এই বাংলাদেশে। শুরু থেকে এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে কট্টর সমালোচনা এসেছে দুই দিক থেকে। প্রথমত (প্রধানত) ক্ষুদ্রঋণ নাকি মহাজনদের মতো শোষণমূলক এবং দরিদ্রকে আরো দরিদ্র করে রাখার মোক্ষম অস্ত্র। সমালোচকদের ধারণা, এনজিওর ঋণগ্রহীতারা আধুনিক কালের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, যারা ঋণ নিতে জমি বন্ধক দেয় না সত্যি, তবে নির্দ্বিধায় নিঃশেষিত হয় সুদ গুনে। অন্যদিকে এনজিওর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সমালোচনার তীর এর সামাজিক আন্দোলনের দিকে; যথা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নারীর ক্ষমতায়ন, মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে এবং বাল্যবিবাহের বিপক্ষে ইত্যাদি। প্রথম সমালোচনায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকছে প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল উভয় গোষ্ঠী আর দ্বিতীয় সমালোচনায় জড়িত শুধু প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। কেউ কেউ আবার এই দুই মেরুর মধ্যবর্তী বিন্দুতেও রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করেছেন ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ, এস আর ওসমানি, শহিদ খন্দকার, প্রয়াত মাহবুব হোসেন প্রমুখ প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ। আয়বর্ধন ও দারিদ্র্য হ্রাসে তাঁরা পেয়েছেন খুদ্র্রঋণের ইতিবাচক প্রভাব; অবশ্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে যাঁরা তথ্য-উপাত্ত হাজির করেছেন, তাঁদের উপাত্তেরও কমতি নেই। এই নিবন্ধে আপাতত আমরা কোনো ধরনের বিতর্কে যেতে চাই না। শুধু এতটুকুই কামনা করব, এনজিওর খুদ্রঋণ কিংবা যেকোনো কর্মসূচির প্রভাব মূল্যায়নে বাগাড়ম্বর যেন বাস্তবতাকে ছাপিয়ে না যায় এবং অনুসন্ধিৎসামূলক প্রতিনিধিত্বশীল সমীক্ষা থেকে সঞ্চারিত গবেষণা ফলাফলের বিকল্প হিসেবে যেন দু-একটি কেস স্টাডি ভিত্তিক কাহিনি দাঁড় করানো না হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কথায় বলে, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না, যেমন যায় না শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। বাংলাদেশের এযাবৎকালের সামাজিক খাতের উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা নিয়ে যাঁরা প্রণিধানযোগ্য পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন, তাঁদের মধ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অন্যতম। তাঁর মতে, বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন পথে যতটুকু অর্জন বা কৃতিত্ব, তা সনাতনি পদ্ধতির যথা আয়-মধ্যস্থতা অথবা সাহায্যনির্ভরতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। প্রথমটি সংগঠিত হয় দ্রুত ও বহুবিস্তৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে, যা জীবনমান উন্নীত করতে সাহায্য করে; দ্বিতীয়টি আসে কল্যাণমুখী কর্মসূচিতে বিরাট সরকারি ব্যয়ের মাধ্যমে। এটি তো সত্যি কথা যে বিশেষত নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় মোটামুটি বড় দাগে অব্যাহত গতিতে বেড়েছে। কিন্তু এই অর্জন একাই সামাজিক খাতের নির্দেশকে উন্নতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ এমন দেশ নয়, যেখানে কল্যাণমুখী কর্মসূচিতে সরকারি ব্যয় ব্যাপক ও বিস্তৃত; বস্তুত দেশভিত্তিক তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু সরকারি ব্যয়, এমনকি সমমানের মাথাপিছু আয়ের দেশের তুলনায় কম। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বদলাতে হবে সামাজিক ও সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি" height="287" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/16-11-2024/rr.jpg" style="float:left" width="321" />তাহলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধল কে? মানে কে সেই সামাজিক উন্নয়নের কাজটি করল! অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মনে করেন যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জন্য প্রশংসাসূচক </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উন্নয়ন ধাঁধা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পরিচয় এনে দিয়েছে। এর একটি হচ্ছে কম খরচে সমাধান (লো কস্ট সলিউশন) এবং অন্যটি কার্যকর সামাজিক উদ্যোগ (সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভ)। সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে বিদ্যমান সমাজে ক্রমবর্ধিষ্ণু সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ঘরে ঘরে খাওয়ার স্যালাইন পৌঁছে দেওয়া। বিশেষত লাখ লাখ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে খাওয়ার স্যালাইন। আবার একই প্রচারণার মাধ্যমে শিশুদের টিকা, আধুনিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মেয়েদের সাক্ষরতার ব্যাপারটিও ঘটেছে। একদিকে এনজিওর উপস্থিতি এবং অন্যদিকে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন নবধারামূলক চিন্তা-চেতনা সমৃদ্ধ এসব কর্মসূচির অনুকরণীয় বিস্তারে সাহায্য করেছে। তা ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির দ্রুত বিস্তার ও মহিলাদের মধ্যে সামাজিক সংযোগ এবং চলমানতাও এ ক্ষেত্রে অবদান রেখে থাকতে পারে। দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্রঋণের অর্থনৈতিক লাভালাভের দিক তো আছেই, এর বাইরে মহিলাদের দ্বারা সংগঠিত ঋণগোষ্ঠী কিছু অ-অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দেয়। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনহ্যানসড এজেন্সি বা সম্প্রসারিত নিযুক্তক, ক্ষমতায়ন ও পারস্পরিক সাহায্য। এভাবেই এনজিও খাতের মাধ্যমে একটি সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা অন্যান্য উন্নয়ন হস্তক্ষেপ বা বাস্তবায়নের কাজটি সহজতর করে তোলে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনজিওজগতে ভালো-মন্দ উভয় দিক বিদ্যমান। এখানেও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রেসামস ল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কাজ করে থাকতে পারে। খারাপ এনজিও ভালো এনজিওকে বাজারছাড়া করে। তবে মশার সঙ্গে রাগ করে যেমন মশারি পোড়াতে নেই, তেমনি মন্দ এনজিওর কারণে যেন ভালো এনজিওর অবদান থেকে দেশ ও সমাজ বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। সরকারের উচিত হবে যেমন করে একদা বিশ্বনন্দিত এনজিও ব্র্যাকের মাধ্যমে ওরাল স্যালাইন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল এবং এখনো যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া দূরীকরণে ব্র্যাকের সঙ্গে কাজ চলছে, তেমনি করে এনজিওগুলোর সাহায্য নিয়ে দেশের আনাচকানাচে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার আশু পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষত অবহেলিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে, যেখানে সরকারি এমনকি এনজিওর উপস্থিতি খুব কম, সেই সব দুর্গম এলাকায় সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নে এনজিওকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আর একটি কথা, যতই ঢাকঢোল পেটানো হোক না কেন, গ্রামবাংলায় মোট খানার মাত্র অর্ধেক ঋণ কর্মসূচির আওতায় এবং এর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ ব্যাংক থেকে ঋণ পায়; ৬০ শতাংশ পায় এনজিও থেকে। সদ্য প্রলয়ংকরী বন্যায় মানুষ সম্পদ বিক্রি করে চলেছে নগদ অর্থের জন্য। কোথায় পাবে সে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় চলমান পুঁজি? ঈশ্বর যেমন ভদ্রপল্লীতে বাস করেন, ব্যাংকের ঋণ সুবিধাও তেমনি ভদ্রদের জন্য। তথাকথিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভদ্র</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ও দরিদ্রদের জন্য এনজিওর দ্বার খোলা রাখলে আখেরে সরকারও লাভবান হবে। সব শেষে উদীয়মান শিক্ষিত বেকারত্ব, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, জঙ্গি চেতনার বিস্তৃতি ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করে সরকার তার ঈপ্সিত সামাজিক উন্নয়ন তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে গেল ৫৩ বছরের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অকল্পনীয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ইতিবাচক অর্জনের পেছনে সরকার যেমন ছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নায়ক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, তেমনি এনজিও ছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পার্শ্বনায়ক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। আগামী দিনগুলোতে উদীয়মান নতুন নতুন সামাজিক চ্যালেঞ্জ তথা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খলনায়ক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মোকাবেলায় নায়ক ও পার্শ্বনায়কের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রামবাংলার আঞ্চলিক ভাষায় একটি প্রচলিত কথা আছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেই দিন নাইরে নাতি গাবুত-গুবুত খাতি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অর্থাৎ সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। পরের ধনে পোদ্দারির দিন গতপ্রায়। এতকাল বাংলাদেশের এনজিওগুলো শুধু বৈদেশিক দান-অনুদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল; </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গৌরীসেনের মাল দরিয়া মে ঢাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর মতো বিদেশে অনুদানের জোয়ারে অনেকটা গা ভাসিয়েছে এনজিও। অভিযোগ আছে, কোনো কোনো এনজিও মালিক নিজের আখের গুছিয়েছেন, বিদেশে বসতি গেড়েছেন; কেউ কেউ মনের মাধুরী মিশিয়ে কর্মসূচি বানিয়ে অর্থের অপচয় ঘটিয়েছেন। অনেকে আবার ক্ষুদ্র্রঋণ দিয়ে যাত্রা করে এখনো খুদ্রঋণের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যবসা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> চালিয়ে যাচ্ছেন। এসবের মধ্যে নবধারামূলক চিন্তা-ভাবনার লেশমাত্র নেই। সেই সনাতনি কায়দায় চলছে কার্যক্রম, যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার ও সেবা বহুমুখীকরণে কোনো আগ্রহ নেই। পরের অর্থে দেশ ও সমাজসেবা করতে গিয়ে কখনো তাঁরা ভাবেননি যে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে হতে পারে। সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন যে বৈদেশিক সাহায্য বা অনুদান অনেকটা ওই মুর্শিদি গানের মতো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক সেকেন্ডের নাই ভরসা, বন্ধ হইব রং তামাশা, চক্ষু মুদিলে...</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। বলা বাহুল্য, এসব কারণে হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠিত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এনজিও ছাড়া অন্য সব এনজিও এখন চোখে সরষে ফুল দেখতে শুরু করেছে। তাদের হার্টের সমস্যা, অর্থনালি ব্লকড। বাঁচাতে হলে এনজিওর এনজিওগ্রাম করা দরকার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দিন বদলায়, পরিপ্রেক্ষিত বদলায়। এনজিওর দুর্দিন দুর্দিন বলে বিলাপ করে, দেয়ালে মাথা ঠুকে কোনো লাভ হবে না। এনজিও খাতকেও তার খোলনলচে বদলাতে হবে। ভবিষ্যতে এনজিও শুধু সাহায্যনির্ভর হলে চলবে না, নিজেও উপার্জন করতে হবে। এর অর্থ, চলমান খরচ ওঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে, নবধারামূলক চিন্তা-ভাবনা দিয়ে আয়ের উৎস খুঁজতে হবে। ভবিষ্যৎ এনজিওকে শুধু দেওয়া সেবার পরিমাণের দিকে তাকালে চলবে না, প্রতিটি সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যৎ এনজিওকে মনে রাখতে হবে, যে কুটিরে সে একদিন রিকশা/ভ্যানের টাকা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, সেই কুটিরে এখন অন্তত একটি মোবাইল ফোন আছে; যে মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে, সেও চায় তার ছেলে-মেয়ে শিক্ষিত হোক, গুণগত শিক্ষা পাক। এই পরিবর্তনগুলো ও করণীয়গুলো মাথায় রেখে যারা অগ্রসর হবে না, সেই সব এনজিওর বিদায় অত্যাসন্ন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে এনজিওগুলোর যেমন বদলাতে হবে, তেমনি বদলাতে হবে সামাজিক ও সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি। বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, জঙ্গিবাদ, পরিবেশদূষণ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত একটি সরকারকে সর্বাত্মক সাহায্য করতে পারে একমাত্র এনজিও তথা সুধীসমাজ। সুতরাং সরকারের স্বার্থেই দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এনজিওগুলোকে অর্থায়ন করে বাঁচিয়ে রাখা উচিত বলে আমরা মনে করি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাদটীকা </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্টিমারে কেবিন লাগোয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আঁধারে জলযাত্রা উপভোগ করছি। জ্যোত্স্নার আলো ও জলের ঢেউ মনের ভেতর রোমান্টিক ঢেউ জাগায়। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নীল আকাশের নিচে ওই পৃথিবী, পৃথিবীর পরে ঐ নীলাকাশ তুমি দেখেছ কি...</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। লক্ষ করি, আমাদের জাহাজের ধার ঘেঁষে আরো দু-তিনটি বড়, ছোট, মাঝারি জাহাজ চলছে একই গন্তব্যস্থল ঢাকার দিকে। সাইজ ভিন্ন কিন্তু গন্তব্যস্থল এক ও অভিন্ন। ভাবলাম, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যদি অভীষ্ট লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে সরকার-এনজিও পাশাপাশি থাকলে অসুবিধা কোথায়? নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়; এনজিও ছোট ক্ষতি নেই, কিন্তু এর উদ্দেশ্য তো বড়।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p>