<p>ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান<strong> রেজাউল করিম মল্লিক</strong>। ১৭তম বিসিএস ব্যাচের এই কর্মকর্তা গত ১ সেপ্টেম্বর ডিবিপ্রধানের দায়িত্ব নেন। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের প্রায় তিন মাস হতে চলল। এই সময়ে মানুষকে সেবা দেওয়ার প্রক্রিয়াসহ ডিবির বিভিন্ন কার্যক্রম ও সংস্কার মানুষের প্রতি আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। এসব কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাসহ নানা বিষয় নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন <strong>মোবারক আজাদ</strong></p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : মানুষ কিভাবে ডিবির সেবা নিচ্ছে?</p> <p>ডিবিপ্রধান : ডিএমপি ডিবির আটটি বিভাগ রয়েছে। সেসব বিভাগের ডিসিদের কাছে মানুষজন বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারে। অনেকে আমার কাছেও সরাসরি অভিযোগ দিয়ে সেবা নিচ্ছে, অনেকে ফোন করছে। কাউকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি না। চেষ্টা করছি প্রতিটি মানুষ যেন সেবা পায়, ন্যায়বিচার পায়। আমাদের আইনের আওতায় যেসব বিষয় আছে, তার মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এমনভাবে কাজ করছি যেন ডিবি হয় সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : অপরাধ দমনে কী ধরনের অপারেশনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন?</p> <p>ডিবিপ্রধান : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এবং মানুষের মাঝে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের সব অপারেশন চলছে। রাজধানীবাসীসহ দেশের ১৮ কোটি মানুষকে কিভাবে শান্তিতে রাখা যায় এবং ডিবির প্রতি আস্থা রাখতে পারে সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কারণ ডিবিকে একজন (হারুন অর রশীদ) ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। অনেকের কাছে ডিবি ছিল আতঙ্কের নাম। সে জায়গা থেকে এরই মধ্যে একটা আস্থার জায়গায় নিয়ে গেছি। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, মাদক কারবারি, জঙ্গি ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের কাছে ডিবি হবে আতঙ্কের নাম। একটা সময় ডিবি অফিস নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা কিংবা সেলিব্রিটিদের কাছে কারণে-অকারণে বিচরণের অন্যতম জায়গা ছিল। এখন আর এটা হবে না। এখানে কোনো ভাতের হোটেল থাকবে না। </p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : অতীতে দেখা গেছে, গ্রেপ্তার নিয়ে লুকোচুরি, গ্রেপ্তারের কয়েক দিন পর আসামির পরিবার জানতে পারছে—বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?</p> <p>ডিবিপ্রধান : এটা অন্যায়। অনেককে আগে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এলে পাঁচ থেকে ১০ দিন পরও তার পরিবার খবর জানত না। আমার নির্দেশনা—কোনো আসামিকে আটক করামাত্রই পরিবারকে ফোন দিয়ে জানাতে হবে তার নামে মামলা আছে কিংবা অপরাধের ঘটনায় জড়িত থাকায় তিনি আটক বা গ্রেপ্তার। গ্রেপ্তারের পর আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে পাঠিয়ে দিই। ডিবির অফিসার যদি কোনো অন্যায় করেন, প্রমাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে চেয়ারে বসছি, সে চেয়ারকে কলঙ্কিত করে গেছেন একজন (হারুন অর রশীদ)। এই চেয়ারকে পবিত্র করতে এবং পুলিশকে জনবান্ধব করতে যা যা করণীয়, তা করব।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : ডিবির অতীতের রিমান্ড এবং বর্তমান সময়ের রিমান্ডের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কী?</p> <p>ডিবিপ্রধান : ডিবি হেফাজতে আগে কী ধরনের রিমান্ড হয়েছে, সে বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারব না। তবে এখন যাদের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম নিচ্ছি। রিমান্ডে কাউকে নির্যাতন করা হচ্ছে না।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : দায়িত্ব নেওয়ার পর উল্লেখযোগ্য কাজ বিষয়ে কিছু বলুন।</p> <p>ডিবিপ্রধান : ডিবিতে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দীর্ঘ ১৮ বছর ঢাকার বাইরে ছিলাম। এরই মধ্যে ডিবির কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। আমরা কেবল গত সরকারের হেভিওয়েটদেরই গ্রেপ্তার করিনি, অনেক পেশাদার সন্ত্রাসী-অপরাধীকেও আইনের আওতায় এনেছি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেই বাংলাদেশের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে ডিবির পক্ষ থেকে সরকারকে যে ধরনের সাপোর্ট দেওয়া দরকার সবই দেওয়া হচ্ছে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : ডিবি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী?</p> <p>ডিবিপ্রধান : প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে নিয়ম মেনে তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকেই জবাবদিহির মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : রাজধানীবাসীর উদ্দেশে কিছু বলবেন?</p> <p>ডিবিপ্রধান : রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের উদ্দেশে একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে বলতে চাই, আমরা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সেবা দিতেই সার্বক্ষণিক কাজ করছি। আমাদের সহায়তা করুন। কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানান।</p> <p> </p>