<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজশাহীর সড়ক ও জনপথ বিভাগে সচল রয়েছে ২৩টি গাড়ি। কিন্তু চালক আছে এর অর্ধেকের মতো। সে ক্ষেত্রে এক চালকের বিপরীতে দুটি গাড়ি দেখানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জ্বালানি তেল তোলার হিসাব দেখানো হচ্ছে এক চালকের জন্য দুই গাড়ির। এভাবে জ্বালানি বাবদ মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা বাড়তি তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই বিভাগের মধ্যে সড়ক বিভাগে আছে ২১টি, বৃক্ষপালন বিভাগে আছে দুটি গাড়ি। সরকারি নীতিমালায় ব্যয় কমানোর অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির তেল খরচ কমানোর কথা বলা হলেও এই ভবনে হচ্ছে উল্টো। বরং যেখানে দিনে সর্বোচ্চ দেড়-দুই লিটার তেল ব্যবহৃত হওয়ার কথা, সেখানে দেখানো হচ্ছে গড়ে ৮০ লিটার। মাসে দেখানো হচ্ছে ২৪০ লিটার তেল খরচ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবার উল্টো হিসাবও আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুজন করে চালকও দেখানো হচ্ছে এক গাড়ির জন্য। এমনকি চারজন অবসরপ্রাপ্ত চালকও রয়েছেন। আর এসব অনিয়মের মাধ্যমে প্রতি মাসে সব মিলিয়ে অন্তত ১৫ লাখ টাকা তছরুপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওই বিভাগের ট্রান্সপোর্ট বিভাগের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় অবস্থিত অফিস কোয়ার্টার থেকে নগরীর লক্ষ্মীপুর সড়ক ভবনে যাতায়াত করেন। নিয়ম অনুযায়ী এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারো গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি নেই। কিন্তু একটি মাইক্রোবাসে করে তাঁরা শালবাগান থেকে পৌন পাঁচ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীপুরের সড়ক ভবনে যাতায়াত করছেন ১২ বছর ধরে। তাঁদের পেছনে প্রতি মাসে সরকারকে গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এই গাড়িটি চালানোর জন্য তপন কুমার নামের একজন চালককে বায়া কারখানা বিভাগ থেকে ডেপুটেশনে দায়িত্বে দেওয়া হয় প্রথম সারির কারখানা বিভাগে। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে ২৪০ লিটার তেল বাবদ ২৬ হাজার ৩৯৭ টাকা এবং মবিল খরচ দেখানো হয়েছে আট হাজার ১০০ টাকা। মাসে এত টাকা খরচ হলেও ওই ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধ করেন জনপ্রতি মাত্র ৪০ টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র কাছে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই ১১ কর্মকর্তা মাসে সর্বোচ্চ ২২ দিন অফিসে যাতায়াত করেন। একটি মাইক্রোবাসে সড়ক ভবনের লগ বইয়ে প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে এক লিটার তেল খরচ দেখানো হয়। কিন্তু শালবাগান থেকে লক্ষ্মীপুর যাতায়াতের জন্য ওই মাইক্রোবাসের পেছনে ১০ কিলোমিটারে প্রতিদিন গড়ে খরচ হয়েছে ১১ লিটার করে। সড়ক ভবনের গত নভেম্বর মাসের তেল-মবিলের মাসিক হিসেবে এই চিত্র দেখা গেছে, যা অস্বাভাবিক।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সড়ক ভবনের আরেক গাড়ির চালক আব্দুল মতিন। তিনি দুটি গাড়ি চালান একাই। এর মধ্যে একটি গাড়ি সিড রোলার এবং আরেকটি পেলোডার। দুটি গাড়ি থেকেই তিনি গত বছরের নভেম্বর মাসে ডিজেল ও লুব্রিক্যান্ট বিল করেছেন। এর মধ্যে একটি গাড়িতে ডিজেল খরচ হয়েছে চার হাজার ৯৪৯ টাকার এবং লুব্রিক্যান্ট খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ১২১ টাকার। আরেকটি গাড়িতে ডিজেল খরচ হয়েছে এক হাজার ৬৮০ টাকার এবং লুব্রিক্যান্ট খরচ হয়েছে এক হাজার ৬৪৯ টাকার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোজাহার আলী। তিনি ট্রাক চালান। বছর দুয়েক আগে তিনি অবসরে যান। কিন্তু এখনো রাস্তার কাজের মালপত্র পরিবহনে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর পেছনে মাসে গুনতে হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা করে। শুধু তাই নয়, এই মোজাহার আলী আরো একটি ট্রাক চালান। দুই ট্রাকের বিপরীতেই মাসে ডিজেল ও লুব্রিক্যান্ট বিল করেন তিনি। গত বছরের নভেম্বর মাসে এই মোজাহারের একটি ট্রাকে ডিজেল খরচ হয় ৪৫ লিটার; যার ব্যয় দেখনো হয় চার হাজার ৯৪৯ টাকা এবং লুব্রিক্যান্ট খরচ দেখানো হয় ২০ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ তেলের চেয়ে চার গুণ বেশি খরচ দেখানো হয় লুব্রিক্যান্টে, যা অসম্ভব বলে দাবি করেছেন গাড়ির চালকরাই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোজাহার আলীর আরেকটি ট্রাক থেকে ডিজেল খরচ দেখানো হয় ১২ লিটার, যার পেছনে ব্যয় হয় এক হাজার ৩১৯ টাকা। মোজাহারের মতো আরো তিনজন চালক এক-দুই বছরের মধ্যে অবসরে গেছেন। তাঁরা হলেন গোলাম রসুল, এজাহারুল হক ও উত্তম কুমার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোজাহারের মতো তাঁর আপন ভাই আজাহার আলীও চালান দুটি গাড়ি। তিনিও দুটি ট্রাকের বিপরীতে প্রতি মাসে ডিজেলসহ আনুষঙ্গিক খরচ নিচ্ছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিপরীত চিত্রও আছে। একই গাড়িতে দুজন চালকও রয়েছেন এই সড়ক ভবনে। ফলে এক গাড়িতে দুজন চালকের পেছনে ব্যয় হচ্ছে সরকারি অর্থ। আবার নিয়ম অনুযায়ী সহকারী প্রকৌশলী পদমর্যদার কোনো কর্মকর্তা গাড়ি ব্যবহার করতে না পারলেও রাজশাহীর সড়ক ভবনের তিনজন সহকারী প্রকৌশলীই ব্যবহার করেন তিনটি গাড়ি। তাঁরা হলেন সহকারী প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন, রোকনুজ্জামান ও রফিকুল ইসলাম। এর বাইরে উপসহকারী প্রকৌশলী সুমাইয়া খাতুন ও সাদিয়া ফাতেমা দুজনে মিলে ব্যবহার করেন একটি গাড়ি। নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা সবাই মোটরসাইকেল ব্যবহার করবেন। তাঁদের পেছনে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ টাকার বেশি। এই তিন সহকারী প্রকৌশলীকে অফিস ও বাসায় যাতায়াত করার জন্য তিনটি গাড়ি দেওয়া হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এভাবে এই সড়ক ভবনের গাড়ির পেছনে প্রতিবছর অন্তত দেড় কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর বাইরে গাড়ি মেরামতের পেছনেও প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা বিল করা হয়। এই খাতে বছরে অন্তত দুই কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, এই কার্যালয়ের গাড়িগুলোর নামে দেখানো অতিরিক্ত বিল অনুমোদন করেন প্রথম সারির কারখানার (যানবাহন শাখা) দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী ইমরান হাসান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী প্রকৌশলী ইমরান হাসান কালের কণ্ঠ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র কাছে দাবি করেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চালকের চেয়ে গাড়ি বেশি হওয়ার কারণে একেকজনের নামে দুটি করে গাড়ি দেওয়া হয়েছে, যেন গাড়িগুলো সচল রাখা যায়। তবে কোনো তেল-মবিল নিয়ে অনিয়ম হয় না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span>      </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পরিবহনের জন্য গাড়িটি আরো বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। তাই বেশি তেল খরচ হয়েছে হয়তো।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জোন সড়ক ভবনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনজন সহকারী প্রকৌশলী গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করবেন। কিন্তু যেহেতু গাড়ি আছে, তাই ব্যবহার করছেন তাঁরা। মোটরসাইকেল ব্যবহার করলেও তো তেল খরচ হয়। সে ক্ষেত্রে সামান্য কিছু টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। তাঁরা শুধু বাড়িতে যাতায়াত করেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি আরও বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সড়ক ভবনের চিরাচরিত নিয়মই হলো গাড়ি থাকলে ব্যবহার হবে। আমরাও সেটিই করছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তবে তেল বা গাড়ি মেরামতের পেছনে কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত্ম করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>