<p>এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান প্রাণঘাতী সংঘাতের পর অবশেষে লেবাননে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ১৪ মাসের সংঘাতের অস্থায়ী অবসান হলো। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় পক্ষকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সীমান্ত থেকে নিজেদের সেনা ও যোদ্ধা প্রত্যাহার করতে হবে।</p> <p>এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেয় ইসরায়েল, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। বিদায়ি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, তাদের লক্ষ্য স্থায়ীভাবে শত্রুতার অবসান ঘটানো।</p> <p>তবে যুদ্ধবিরতি শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ—উভয় পক্ষই পরস্পরের ওপর হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর মাত্র চার ঘণ্টা আগে বৈরুতের কিছু অংশ থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলে ড্রোন নিক্ষেপ করে হিজবুল্লাহ।</p> <p>ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর সংঘাতকে কেন্দ্র করে লেবাননের লাখ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি শুরুর খবর পাওয়ার পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে লেবানিজরা। এদিকে যুদ্ধবিরতি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলেছে, যেসব এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে যেন তারা না ফেরে।</p> <p>আইডিএফের আরবি মুখপাত্র আভিচায় আদরাই বলেন, ‘কখন বাড়ি ফেরা নিরাপদ, তা আইডিএফ আপনাদের (লেবানিজ) জানাবে।’ তা সত্ত্বেও দক্ষিণ লেবানন অভিমুখে বেশ কিছু যানবাহন যেতে দেখা গেছে। এসব যানবাহনে লোকজনের ব্যক্তিগত মালপত্রও ছিল।</p> <p>গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর লেবাননে অন্তত তিন হাজার ৮২৩ জন নিহত হয়েছে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে দক্ষিণ লেবানন থেকে ধীরে ধীরে সেনা প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল। একই সময়ে লিতানি নদীর দক্ষিণ থেকে হিজবুল্লাহর যোদ্ধা ও অস্ত্র সরিয়ে ফেলতে হবে। হিজবুল্লাহর পরিবর্তে সেখানে লেবানন সেনা মোতায়েন করবে।</p> <p>যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, এটি দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের একটি মৌলিক পদক্ষেপ। এর ফলে লেবানিজরা নিজের ঘরে ফিরতে পারবে। একই সঙ্গে ইসরায়েলকে চুক্তি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীকে লেবাননের অধিকৃত এলাকা ছাড়তে হবে এবং জাতিসংঘের আইনকে সম্মান জানাতে হবে।</p> <p>এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হিজবুল্লাহ চুক্তি ভঙ্গ করলে হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না ইসরায়েল। লেবাননে যুদ্ধের অবসানের ফলে আইডিএফ এখন ইরানের হুমকি মোকাবেলায় মনোযোগ দিতে পারবে।</p> <p>বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের প্রথম প্রতিরোধ বাহিনী হিসেবে বিবেচিত হিজবুল্লাহর বেশির ভাগ অস্ত্রাগার ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সামরিক ভারসাম্য এখন ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে গেছে। এ ছাড়া হিজবুল্লাহ না থাকায় এখন হামাসের ওপর চাপ বাড়বে। অন্যদিকে লেবাননের মতো গাজায়ও যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক, ইরান, জর্দান ও যুক্তরাজ্য। এ বিষয়ে হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে তারা প্রস্তুত। তবে ইসরায়েল এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। সূত্র : বিবিসি</p> <p> </p>