<p>ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ। ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে দ্রুত রাজনৈতিক রক্তাক্ত উত্থান-পতন ঘটনাবলির মধ্যে এদিন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে জাতীয় নেতৃত্বের পাদপ্রদীপে আসেন এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ সুগম করেন। বিএনপির মতে, ’৭৫ সালের এই দিনে আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সিপাহি-জনতা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল।</p> <p>বিএনপি দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করলেও জাসদ ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।</p> <p>বিএনপি মনে করে, এদিন সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ক্রান্তিকালে সুদক্ষ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছেন। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এই দিনে দেশপ্রেমিক সিপাহি ও জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিয়ে রাজপথে নেমে খালেদ মোশাররফের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করেছিল।</p> <p>৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি তাদের দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছে। তাই এবার আড়ম্বরভাবে দিবসটি পালন করবেন দলের নেতাকর্মীরা। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ গতকাল বুধবার থেকে ১০ দিনের কর্মসূচি পালন করছে দলটি। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন। </p> <p>বিএনপি নেতারা বলেন, সে সময় জিয়াউর রহমানকে সেনানিবাসে বন্দি করায় দেশের সাধারণ মানুষ ও সিপাহিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রিয় সেনাপ্রধানকে মুক্ত করতে সিপাহিরা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাঁদের সঙ্গে জনতাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে।</p> <p>সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের লেখা ‘কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘৭ নভেম্বর দেশজুড়ে ঘটে সৈনিক-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত এক অভূতপূর্ব উত্থান। আর জেনারেল জিয়া সেই অভ্যুত্থানের উত্তাল তরঙ্গমালার শৃঙ্গে আরোহণ করে উঠে আসেন জাতীয় নেতৃত্বের পাদপ্রদীপে।’</p> <p>৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বলা হয়, ‘সিপাহি ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। ৭ নভেম্বর ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওই দিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহি-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর ট্যাংকের নলে পরিয়ে দেয় ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।</p> <p>রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এই পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে।</p> <p>আওয়ামী শাসনামলে ৭ নভেম্বর দিবসটি স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে সমাদৃত জিয়াউর রহমান বীরোত্তমকে বরং ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার নানা অপচেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করে দলটি। এবার দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। বিএনপি সরকারের আমলে এই দিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি।</p> <p>বাণী : দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে সিপাহি-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও হারানো গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের অভূতপূর্ব অঙ্গীকার নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাত্পর্যমণ্ডিত। </p> <p>তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত এবং  জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। </p> <p>পৃথক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকের এই মহান দিনে আমি দেশবাসী সবাইকে আহ্বান জানাই—এখনো দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত উত্তরণ হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিক স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ সাধন করতে হবে। ৫ আগস্টের পরে দেশবাসী কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এখনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে পদানত করার জন্য কুচক্রী মহল সদা তত্পর।</p> <p>সুতরাং যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’</p> <p>কর্মসূচি : মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় শেরেবাংলানগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে বিশাল শোভাযাত্রা করার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।</p>