<p style="text-align:left">স্বাধীন বাংলাদেশে তিনটি দিন ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম এবং আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র গঠনের ধারায় ফিরিয়ে এনেছে। দিবস তিনটি হলো ৭ নভেম্বর ১৯৭৫, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ এবং ৫ আগস্ট ২০২৪। ৭ নভেম্বর তাৎপর্য আমরা প্রবীণরা যেভাবে উপলব্ধি করতে পারি, আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য তা সহজ নয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তাদের কাছে দূর অতীতের কথা। তাদের কথা বিবেচনায় ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এর অপরিহার্যতা নিয়ে আমার আজকের উপস্থাপনা। আমার আশা এই লেখাটি তরুণদের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব নিয়ে আরো জানার আগ্রহ তৈরি করবে এবং তাদের মধ্যে এই বিপ্লবের ভাবাদর্শ জীবিত থাকবে।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><img alt="বাংলাদেশ" height="272" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/04-11-2024/mk/kk-NEW-6-2024-11-07-01a.jpg" style="float:left" width="450" /></span></p> <p>নভেম্বরের পটভূমি রচিত হয় আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনালগ্নে। পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা স্তব্ধ করতে চায়। সে সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হেফাজতে অথবা আত্মগোপনে। এই ক্রান্তিকালে বিহ্বল জাতি মেজর জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশন থেকে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় সংবিৎ খুঁজে পায়। আমাদের মানতে হবে, জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ এবং আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠের ঘোষণার ব্যাপক প্রভাব ছিল। এটি কেবল আহবান নয়, এরই মধ্যে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করে দেওয়া বিদ্রোহী সামরিক কর্মকর্তার ঘোষণা। জনগণ নিশ্চিত হয় প্রতিরোধযুদ্ধের সূচনায়। জিয়াউর রহমানের এই ভাষণের গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। ঠিক একই কারণে এবং কাছাকাছি পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে জিয়ার ভাষণ দেশকে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনে।</p> <p> </p> <p>স্বল্প পরিসরে স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭২-৭৫ সালের শেখ মুজিবুর রহমানের দুঃশাসন বর্ণনা করা কষ্টসাধ্য কাজ। এর কদর্যতা ব্যাপক বিস্তৃত এবং ভয়ংকর। দলীয় ছত্রচ্ছায়ায় চোরাকারবারি, কালোবাজারি এবং মজুদকারীতে দেশ ছেয়ে যায়। ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে সারা দেশে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ, অনাহারে মারা যায় এক লাখের বেশি মানুষ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার বদলে শেখ মুজিবুর রহমান তৈরি করেন লালবাহিনী এবং রক্ষীবাহিনীর মতো মিলিশিয়া বাহিনী, যাদের কাজ ছিল প্রতিবাদী, সমালোচক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও গুম-খুনের মাধ্যমে নিস্তব্ধ করা।</p> <p> </p> <p>ভারতের অভিপ্রায় ও আচরণ দেখে প্রবাসী সরকার এবং মুক্তিবাহিনীর মাঝে অস্বস্তি শুরু হয় ১৯৭১ সাল থেকেই। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনী এবং প্রবাসী সরকারকে দূরে রাখা হয়। আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি বাহিনীর সব অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে যায়। ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে। শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধীর স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তিকে জনগণ সন্দেহের চোখে দেখে। সর্বোপরি শেখ মুজিবের দুঃশাসন যত দীর্ঘায়িত হতে থাকে, জনগণের মধ্যে ভারতবিদ্বেষ তত দানা বাঁধতে থাকে।</p> <p> </p> <p>শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে এবং চারটি ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে একদলীয় শাসন কায়েম করেন। অভাব, দুঃশাসন, দুর্নীতি, অরাজকতা এবং জুলুমে জর্জরিত জনগণ মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকে। এমন পটভূমিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু ক্ষুব্ধ মেজর শেখ মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারকে উত্খাত করেন।</p> <p> </p> <p>শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর দেশে একটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিধান থাকলেও অভ্যুত্থানে জড়িত মেজররা খন্দকার মোশতাকের হাতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পণ করেন। সব বাহিনীর প্রধানরা খন্দকার মোশতাকের আনুগত্য স্বীকার করেন, সংসদ বলবৎ থাকে এবং নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়, যার বেশির ভাগ সদস্যই শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য। আগস্টের শেষে জাতীয় চার নেতাকে কারান্তরিন করা হয়।</p> <p> </p> <p>সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর-উত্তমের মতো যোগ্য কর্মকর্তা সে মুহূর্তে দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না। জিয়াকে সেনাপ্রধান করা হয়। কিন্তু তাঁর যোগ্যতা, স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং জনপ্রিয়তা অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের উদ্বেগের বিষয় ছিল। এই দুটি বিষয় মাথায় রেখে সেনাপ্রধান জিয়ার ওপর চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরি করা হয় এবং মেজর জেনারেল এম খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এবং তাঁরও ওপরে জেনারেল ওসমানীকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা করা হয়। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা সীমিত করে দেওয়া হয়। প্রকারান্তে অভ্যুত্থানে জড়িত মেজর, ওসমানী ও খলিলুর রহমান গং সামরিক বাহিনী পরিচালনা করতে থাকে। সেনাবাহিনীতে চলতে থাকে চাপা অস্বস্তি।</p> <p> </p> <p>১৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ বীর-উত্তম মনঃক্ষুণ্ন ছিলেন। তিনি মুজিবের আমল থেকেই সেনাপ্রধান হওয়ার স্বপ্ন লালন করতেন। কর্নেল শাফায়াত জামিল বীরবিক্রম বেশ কয়েকবার জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের বঙ্গভবন থেকে সেনানিবাসে ফিরিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করেন। জিয়াউর রহমান তাড়াহুড়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। অধৈর্য শাফায়াত জামিল খালেদ মোশাররফকে সঙ্গে নিয়ে ২/৩ নভেম্বর মাঝরাতে তাঁর অধীন পদাতিক বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহের সূচনা করেন। প্রথমেই সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে অন্তরিন করেন এবং রেডিও-টিভি স্টেশন দখল করে নেন। রাষ্ট্রপতি এবং অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারা দিন যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার সশব্দে বঙ্গভবনের ওপর চক্কর দিতে থাকে। খালেদ মোশাররফ মেজরদের সেনানিবাসে ফেরত আসার নির্দেশ দেন। সারা দিনের উত্তপ্ত বাদানুবাদ শেষে মেজর মহিউদ্দিন ছাড়া বাকি ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীরা ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় পরিবারসহ থাইল্যান্ডে চলে যান। এরই মধ্যে জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করা হয়।</p> <p> </p> <p>২/৩ নভেম্বর ভোররাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক ও মেজর রশিদের অনুমতিক্রমে চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ৪ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ বঙ্গভবনে তাঁর দাবি নিয়ে উপস্থিত হন। জিয়াউর রহমানের পরিবর্তে নিজে সেনাপ্রধান হতে অভিপ্রায় প্রকাশ করেন এবং খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি রেখে মন্ত্রিপরিষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান। আলোচনা সারা দিন ধরে চলতে থাকে। উত্তেজিত শাফায়াত জামিল মন্ত্রিপরিষদের মিটিংয়ে সশস্ত্র প্রবেশ করেন। ভীতসন্ত্রস্ত খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানের পদত্যাগপত্র নেন এবং খালেদ মোশাররফকে মেজর জেনারেলে পদোন্নতি দেন এবং সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন। খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ৬ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এবং রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ৩ নভেম্বর থেকে চলতে থাকা অনিশ্চয়তার মাঝে এই ভাষণ জনমনে স্বস্তি আনতে পারেনি। সেনানিবাস ও বঙ্গভবনে ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাধারণ জনগণ, এমনকি সেনাবাহিনী অন্ধকারে ছিল। অনিশ্চয়তা এবং ভারতীয় আগ্রাসনের ভীতির মাঝে জনতার দিন কাটছিল। এর ওপর সেনাবাহিনীর মধ্যে ধারণা তৈরি হয় খালেদ মোশাররফ ভারতপন্থী এবং তিনি ভারতের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনর্বাসিত করবেন। কুখ্যাত রক্ষীবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিদ্রোহে অংশগ্রহণ সিপাহিদের নজরে পড়ে। এর ওপর ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের একটি মিছিল বের হয় শেখ মুজিব এবং চার নেতা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে। এই মিছিলের সম্মুখে ছিলেন খালেদ মোশাররফের মা ও বড় ভাই রাশেদ মোশাররফ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এমন একটি সময়ের আলোচনা করছি, যখন জনগণ ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের উত্খাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে এবং ভারতবিদ্বেষ স্মরণকালের মধ্যে তীব্র।</p> <p> </p> <p>জিয়াউর রহমান অন্তরিন হওয়ার পর থেকে সেনানিবাসে গোপনে সিপাহিদের মধ্যে বিদ্রোহ তৈরিতে উদ্যোগী হন জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু তাহের বীর-উত্তম। আবু তাহের সেনাবাহিনীকে ভেঙে গণবাহিনীতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, যেখানে শুধু সৈনিক নিয়োগ হবে এবং সুবেদার পর্যন্ত সর্বোচ্চ পদ থাকবে। নিয়মিত সামরিক বাহিনীর পরিবর্তে তারা দেশের বিভিন্ন কাজে অংশ নেবে। ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ও শাফায়াত জামিল বিদ্রোহ করলে আবু তাহের তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যান। এমনকি জাসদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতামত উপেক্ষা করে জিয়াউর রহমানের কাঁধে বন্দুক রেখে তিনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ছক কষেন। তাহেরের অনুগত বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ঢাকা সেনানিবাসে ৪ নভেম্বর থেকে লিফলেট বিতরণ শুরু করে। সিপাহিদের ন্যায্য কিছু দাবির সঙ্গে সুকৌশলে তাঁর সমাজতান্ত্রিক দাবি ঢুকিয়ে দেন। সঙ্গে রং চড়িয়ে খালেদ মোশাররফ ও শাফায়াত জামিলের আওয়ামী লীগ এবং ভারতপ্রীতির গুজব ছড়ান। সিপাহিরা উত্তেজিত হতে থাকেন। তাঁরা প্রথম থেকেই জিয়াউর রহমানের আটক এবং পদত্যাগ ভালোভাবে নেননি। ৬/৭ নভেম্বর মাঝরাতে ঢাকা সেনানিবাসের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিপাহিরা ফাঁকা গুলি করে বিদ্রোহ জানান দেন। এরপর ঘটনা দ্রুত ঘটতে শুরু করে। মেজর মহিউদ্দিন (১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে জড়িত—দেশে থেকে যাওয়া একমাত্র কর্মকর্তা) এবং সুবেদার মেজর আনিসুল হক তাঁদের অনুগত কিছু সৈনিকসহ জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি থেকে উদ্ধার করে তাঁদের সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসে নিয়ে আসেন। অনেকে প্রচার করেন, তাহেরের সৈনিকরা জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেন, যা সত্য নয়। সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসে নিজের অবস্থান সংহত করার পর জিয়াউর রহমান সেনানিবাসে অবস্থানরত সব সিনিয়র কর্মকর্তাকে তাঁর কাছে হাজির করার আদেশ দেন।</p> <p> </p> <p>জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফ ও শাফায়াত জামিলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি শাফায়াত জামিলের সঙ্গে বঙ্গভবনে যোগাযোগ করতে সমর্থ হন এবং তাঁকে নিশ্চিন্তে সেনানিবাসে ফেরার আহবান জানান। শাফায়াত জামিল জিয়াউর রহমানের আহবান প্রত্যাখ্যান করে দেয়াল টপকে পালাতে গিয়ে পা ভেঙে ফেলেন এবং শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় আশ্রয় নেন। সেখান থেকে উদ্ধার করে তাঁকে চিকিৎসার জন্য সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। খালেদ মোশাররফ, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রম ও লে. কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর-উত্তম বঙ্গভবন ছেড়ে শেরেবাংলানগরে অবস্থানরত রংপুর থেকে আগত ১০ বেঙ্গল রেজিমেন্টের ছাউনিতে আশ্রয় নেন। জিয়াউর রহমান তাঁদের সর্বত নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও উত্তেজিত সিপাহিরা তাঁদের হত্যা করেন।</p> <p> </p> <p>তাহের ৭ নভেম্বর ভোররাতে সেনানিবাসে এসে জিয়াউর রহমানকে রেডিও স্টেশনে উপস্থিত হয়ে ভাষণ দিতে আহবান করেন এবং সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চান। তাহেরের অভিসন্ধি উপলব্ধি করে এবং জিয়াউর রহমানের প্রাণহানির আশঙ্কায় উপস্থিত সেনা কর্মকর্তারা জিয়াউর রহমানকে সেনানিবাসের বাইরে যেতে বাধা দেন এবং রেকর্ডকৃত ভাষণ প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন। তাহেরের পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও জিয়াউর রহমান সেনানিবাসে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তাহের বিফল হয়ে ফেরত যান। তাহের তাঁর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেন কর্মকর্তা হত্যায় সিপাহিদের উৎসাহ দিয়ে, যার ফল ছিল মর্মান্তিক।</p> <p> </p> <p>১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় জনতা যেমন সংবিৎ ফিরে পেয়েছিল, তেমনি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়ার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার ভাষণ শুনে জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, চলমান অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পায়। একজন জনপ্রিয়, দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা দেশ শাসনের দায়িত্ব নেওয়ায় জনগণের দুশ্চিন্তা লাঘব হয়। সাধারণ সিপাহিরা ট্রাক নিয়ে, ট্যাংক নিয়ে জনতার সঙ্গে আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে ৭ নভেম্বর সকালেই সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর জনতা সামরিক ট্রাক ও ট্যাংকের ওপর উঠে আনন্দ করতে থাকে। এই সফল বিপ্লব সিপাহি-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত হয়েছিল, যার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ৭ নভেম্বর না হলে বাংলাদেশ উদার গণতন্ত্র এবং সুশাসনের ধারায় ফিরত না; অভাব, দারিদ্র্য, দুর্নীতি এবং অরাজকতায় জর্জরিত হয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।</p> <p> </p> <p><strong>লেখক :</strong> অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়</p>