<p style="text-align:justify">বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা এবং দর্শনা-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে দিনে দুটি করে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দাবিতে প্রতীকী রেললাইন অবরোধ করেছে যশোরবাসী। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা থেকে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যশোর জংশনে পূর্বনির্ধারিত এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এর ফলে ঢাকামুখী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রা প্রায় আধা ঘণ্টা বিলম্বিত হয়। অবরোধ চলাকালে যশোরের জেলা প্রশাসক কর্মসূচিস্থলে হাজির হয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">চলতি মাসেই ‘পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ উদ্বোধন হওয়ার কথা। দেশে রেলওয়ের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ এই প্রকল্প ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে নড়াইলের ওপর দিয়ে যশোরকে সংযুক্ত করেছে। এই প্রকল্পের ফলে নড়াইল জেলা প্রথমবারের মতো রেলসেবা পেতে যাচ্ছে। যশোর, খুলনার যাত্রীরা প্রায় অর্ধেক সময়ে রাজধানীতে যাতায়াতের সুবিধা পাবেন।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু প্রকল্পের মূল সংযোগস্থল যশোরে বাড়তি কোনো ট্রেন না দেওয়া, এমনকি চলাচলরত দুটি ট্রেন সুপ্রাচীন যশোর জংশনের বদলে নবনির্মিত পদ্মবিলা জংশন ব্যবহারের কারণে বঞ্চিত বোধ করছেন যশোরবাসী। বর্তমানে বেনাপোল এক্সপ্রেস যশোর থেকে কুষ্টিয়ার পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা যাতায়াত করছে। রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়ার মানুষেরা এই এক্সপ্রেস ট্রেনটি বর্তমান রুটেই চালানোর দাবিতে ইতিমধ্যে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। </p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে, খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি ট্রেন যশোরের নবনির্মিত পদ্মবিলা জংশন হয়ে যাতায়াত করবে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে রেলযোগাযোগের ক্ষেত্রে যশোরবাসী পদ্মাসেতুর সরাসরি সুফল পাচ্ছেন না।</p> <p style="text-align:justify">এমন পরিস্থিতিতে বঞ্চিত-ক্ষুব্ধ যশোরবাসী ‘বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। মিছিল-মিটিং, ঘেরাও-স্মারকলিপি প্রদানের পর তারা ৩ ডিসেম্বর যশোর জংশনে প্রতীকী অবরোধের ডাক দেন। সেই অনুযায়ী এদিন দুপুরে আন্দোলনকারীরা জংশনের পশ্চিম প্রান্তে রেললাইনের ওপর সমবেত হন।</p> <p style="text-align:justify">আন্দোলনকারীরা রেললাইনের ওপর সমাবেশ করতে থাকায় ঢাকামুখী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি যশোর জংশনের আউটার সিগন্যালে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান স্টেশন মাস্টার। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, অবরোধ প্রত্যাহারের পর প্রায় আধা ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনটিকে যশোর জংশনে ঢোকার সিগন্যাল দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে, আজকের কর্মসূচি চলাকালে বেলা ২টার দিকে সেখানে হাজির হন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যশোরবাসীর যৌক্তিক দাবি-দাওয়াগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত পাঠানো হচ্ছে। আজ সকালেও রেলসচিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করি, সরকার যৌক্তিক দাবির প্রতি সদয় হবেন।’</p> <p style="text-align:justify">আন্দোলনের কারণে যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় এবং আন্দোলনের মাঝে যাতে কোনো কুচক্রী মহল দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য ঢুকে না পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য সংগঠকদের প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।</p> <p style="text-align:justify">অবরোধ চলাকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু। সদস্য সচিব প্রকৌশলী রুহুল আমিনের সঞ্চালনায় এসময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্বকারীদের মধ্যে থেকে বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, সাংস্কৃতিক সংগঠক হারুন অর রশিদ, ব্যবসায়ী মোবাশ্বের হোসেন বাবু, আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আজিজুল হক মনি, লোকসমাজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবীর নান্টু, আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্মের নেতা ফারাজী আহমেদ সাঈদ প্রমুখ।</p> <p style="text-align:justify">তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রেন চালালে যশোর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুরের মানুষ কার্যত ট্রেন সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তারা রেলকে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ, প্রত্যেক আন্তঃনগর ট্রেনে সুলভ বগি সংযুক্ত করা, দর্শনা-খুলনা ডাবল লাইন চালু প্রভৃতি দাবি জানান।</p>