<p>বগুড়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বুধবার (১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত শতাধিক রোগীর সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে বগুড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে শতাধিক চিকিৎসা নিলেও ৬১ রোগী ভর্তি রয়েছে। অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। </p> <p>শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন সাতজন। এ ছাড়া ৪৬ জনই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত যেসব রোগী বগুড়ায় ভর্তি হয়েছে তাদের বেশির ভাগ রোগীই ঢাকা থেকে এসেছে বলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মশার উপদ্রবে জেলাবাসীর জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বাসা-বাড়ি থেকে অফিস আদালত সব জায়গায় মশা বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা একেবারেই নাজেহাল। শুধু সন্ধ্যায় বা রাতে নয়, দিনের বেলায়ও মশার উৎপাত চলছে সমান তালে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও শঙ্কায় রয়েছে রোগীর স্বজনরা। সেই সঙ্গে স্কুল-মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেনে পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা।</p> <p>বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ১-১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বগুড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী শজিমেক হাসপাতালে ৩৩ জন, টিএমএসএস হাসপাতালে আটজন, শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী, শাজাহানপুর উপজেলা হাসপাতালে একজন, দুপচাঁচিয়া উপজেলা হাসপাতালে একজন, ও ধুনট উপজেলা হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে।</p> <p>সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার শুভগাছা গ্রামের মফিজ শেখের ছেলে শামিম রেজা (৩৬) বর্তমানে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট এলাকায় বসবাস করছেন। তিনি ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। গার্মেন্টসে এ চাকরি করাকালে বৃহস্পতিবার জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর শনিবার ঢাকার একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করালে তার শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ঢাকায় থেকে চিকিৎসা করানো ব্যয়বহুল হওয়ায় তিনি রবিবার বগুড়ার শেরপুরে এসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তিনি জানান, তিনি যে গার্মেন্টসে কাজ করেন ওই গার্মেন্টসের অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। </p> <p>শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, মশার কামড়ে মানুষ অ্যানোফিলিস, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এজন্য সবাইকে সচেতন থাকা প্রয়োজন। </p> <p>এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশের ন্যায় এই উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শুক্রবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এই উপজেলায় ৫৩ জন ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সবাইকে আমাদের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দিয়েছি। তবে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর সাতজন রোগী বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বাকিরা সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। </p> <p>তিনি আরো বলেন, এই উপজেলায় এডিস মশার অস্তিত্ব মিলেছে। তাই সবার মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ এবং বাড়িঘর ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেন। পাশাপাশি ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা থেকে রক্ষা পেতে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেন তিনি।</p> <p>ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে সবাইকে সচেতন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার আহ্বান জানিয়ে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. শফিউল আযম বলেন, আগে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তরা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হলেও এবার উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভর্তির প্রবণতা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে জেলার সব উপজেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সামগ্রী পর্যাপ্ত রয়েছে। এতে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মত সক্ষমতা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে।</p> <p>বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, প্রতিদিন এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য হাসপাতাল থেকেও ডেঙ্গু আক্রান্তদের রেফার্ড করে শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম যথেষ্ট রয়েছে এবং বর্তমানে ২০টি বেড প্রস্তুত রয়েছে। তবে প্রয়োজনে বেড সংখ্যা আরো বাড়ানো যাবে।</p>