<p>সরকার পতনের পর হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পরগণায় শুরু হয় পাহাড় কাটার মহোৎসব। প্রশাসনের নজর এড়াতে রাতভর ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে এসব এলাকার পাহাড়। আর পাহাড়ের লালমাটি বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে।</p> <p>অন্যদিকে ঝুঁকি বাড়ছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের। সম্প্রতি পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এরপরও পুনরায় একই অপরাধে জড়াচ্ছেন আসামিরা। ফলে থামছেনা পাহাড় কাটা। জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারা এবং দায়সারা মামলার কারণে বন্ধ করা যাচ্ছেনা পাহাড় নিধন, এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদরা।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া, গজনাইপুর ও পানিউমদা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দিনারপুর পরগনা। এটি জেলার পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ২০১৫ সালে দৈনিক কালের কণ্ঠে পাহাড়কাটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠন এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা দিয়ে রুল জারি করেন। রুল শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায়ে নবীগঞ্জের দিনারপুরে পাহাড় ও টিলা কাটা রোধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।</p> <p>সূত্রটি আরো জানায়, তৎকালীন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বছরের অধিকাংশ সময়জুড়ে দিনারপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে মাটির রমরমা ব্যবসা করছে একটি অসাধু চক্র।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র সেলিম ১ দিনের রিমান্ডে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/09/1728473013-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র সেলিম ১ দিনের রিমান্ডে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/09/1433468" target="_blank"> </a></div> </div> <p>চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের একটি বৃহৎ পাহাড় কাটা শুরু করেন ওই গ্রামের গেদু মিয়ার ছেলে রাজু মিয়ার তত্ত্বাবধানে একটি চক্র। এই পাহাড় থেকে এক্সভেটর (ভেকু) মেশিনের সাহায্যে মাটি কাটে। পরে ট্রাকভর্তি করে মাটি বিক্রি করে ভরাট করা হয় পার্শ্ববর্তী সোনা মিয়া, আব্দুর নূর, আব্দুল গফুরের মালিকানাধীন জায়গা। এ নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর (১৮ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর শ্রী হরিপদ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে পাহাড় কাটায় জড়িত গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের মৃত গেদু মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া (৫০), বনগাঁও গ্রামের মৃত নওয়াব উল্লার ছেলে আব্দুর নূর (৫০), সোনা মিয়া (৬০), আব্দুল গফুরকে (৪৮) আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু মামলা দায়েরের পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন পাহাড় কাটায় জড়িত রাজু।</p> <p>গত ১ নভেম্বর (শুক্রবার) থেকে গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের একইস্থান থেকে এক্সভেটর (ভেকু) মেশিনের সাহায্যে পাহাড় কাটছেন মামলার প্রধান আসামি গেদু মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া। রাত ১১টার থেকে শুরু হয় পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটার ফলে আশপাশের বাড়ি-ঘর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানান সেসব এলাকার বাসিন্দারা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পাহাড়ি এলাকা থেকে বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/01/1730454755-79a7204dca9578fa301f1e934183e6fe.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পাহাড়ি এলাকা থেকে বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/01/1441531" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এছাড়া মাটি বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাঘাটেও খানাখন্দ দেখা দিয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহিরের ঘনিষ্ঠ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক প্রভাবশালী সভাপতির প্রভাবে রাজু মিয়া বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। রাজুর দাপটে কেউ ভয়ে কথা বলতে পারেন না।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে পাহাড় কাটার মেশিনের বিকট আকারে শব্দ হয়, ট্রাক চলাচলেও শব্দ হয় এতে আমরা ঘুমাতে পারি না। প্রতিবাদ করলে নানা হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। রাজু পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পাহাড় কাটছে বলে এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে।’</p> <p>স্থানীয় এক মুরুব্বি বলেন, ‘পাহাড় কাটার মেশিনের শব্দে রাত হলে ঘুম আসে না। আমি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত, প্রতিনিয়ত মনে হয় মেশিনের শব্দে এই বুঝি বুকে সমস্যা হলো। এলাকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক প্রভাবশালী সভাপতির প্রভাবেই সে এখনো পাহাড় কেটে যাচ্ছে ।</p> <p>এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাজু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পাহাড় কাটার কোনো সরকারি অনুমতি না নিয়েই পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পাহাড় কাটার সময় ধস, মাটিচাপায় রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2023/06/28/1687933422-d63be109afdb5a5c7836675fac4b6db9.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পাহাড় কাটার সময় ধস, মাটিচাপায় রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2023/06/28/1294190" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘হবিগঞ্জের টিলা-পাহাড়ী অঞ্চল হিসেবে দিনারপুর এলাকার পরিচিত রয়েছে। কিন্তু এই এলাকায় পাহাড় টিলা কাটা হচ্ছে ক্রমাগত। একইস্থানে বার বার পাহাড় কাটা হচ্ছে, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পাহাড়-টিলা ধ্বংসকারী বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও তা ব্যবহার করা হয় না। ফলে জড়িতরা একই বার বার করে যাচ্ছে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে জেল-জরিমানাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অপরাধ কমে আসবে এবং পরিবেশ রক্ষা পাবে।</p> <p>হবিগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. গোলাম সামদানী বলেন, ‘কান্দিগাঁও গ্রামের পাহাড় কাটার ঘটনায় যে মামলা আমি তদন্ত করছি ওই স্থানেই পাহাড় কাটা হচ্ছে, বিষয়টি অবগত হয়েছি। অফিসে কথা বলে দেখছি কি করা যায়।’ </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="হবিগঞ্জে দুই গ্রুপের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ, আহত ২০" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/28/1724852521-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>হবিগঞ্জে দুই গ্রুপের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ, আহত ২০</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/08/28/1419732" target="_blank"> </a></div> </div> <p>পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। পাহাড় কাটার ঘটনায় মামলা দায়েরের পরও যদি আসামিরা পুনরায় পাহাড় কাটায় সম্পৃক্ত থাকে অবশ্যই আলাদাভাবে পুনরায় মামলা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</p>