<p>সাদা কাশফুলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুরের সদরপুর আকোটের চর পদ্মাতীরে জেগে ওঠা বিশাল চরাঞ্চলে। ধুলোবালির শহরের ক্লান্তি দূর করে চারদিকে প্রশান্তির মায়াবী আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে কাশফুল। শত শত প্রকৃতিপ্রেমী কাশফুলের রাজ্যে গা ভাসাতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন পদ্মা নদীর চরে। ছবি আর সেলফি তুলে স্মৃতি হিসেবে ক্যামেরাবন্দি করছেন নিজেদের। এ অপার সৌন্দর্য চরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীদের মনের খোরাক মেটানোতে ভূমিকা রাখছে।</p> <p>জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব। সদরপুর উপজেলার ২ নম্বর আকোটের চর ইউনিয়নের আকোট বাজার সংলগ্ন একটি চর। বিশাল এই চর সাদা রঙের কাশফুলে ভরে উঠেছে। দূর থেকে দেখে মনে হবে বিশাল আকৃতির সাদা চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। জেলার আর কোথাও এত বড় কাশবন খুঁজে পাওয়া যাবে না।</p> <figure class="image" style="float:left"><img alt="কাশফুল" height="219" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Nahid/Untitled-5aa.jpg" width="365" /> <figcaption>কাশফুলে ছেয়ে গেছে পদ্মার চর। ছবি : কালের কণ্ঠ</figcaption> </figure> <p>সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী পদ্মার চরে ধু ধু বালুচরের মধ্যে বিভিন্ন বিস্তীর্ণ উঁচু-নিচু জায়গাজুড়ে মাঠের পর মাঠে আপন মনে ফুটেছে শরতের সাদা কাশফুল। নীলচে আকাশে সাদা মেঘের খুনসুটি আর দিগন্তজোড়া কাশফুলের দোল খাওয়ার দৃশ্য মন কাড়বে যে কারো। নয়নাভিরাম পদ্মার চর সাদা কাশফুলের সৌন্দর্যে পদ্মা নদী সেজেছে ভিন্ন রূপে। বর্ষায় ভরা নদীতে যেমন পানি এসে পদ্মার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সঙ্গে এখন নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে কাশফুলের সৌন্দর্য। গত সপ্তাহ থেকেই নদীর মাঝে ফুটতে শুরু করেছে কাশফুলগুলো। আর এর সঙ্গে সঙ্গে বিনোদনপ্রেমীদেরও বেড়েছে ভিড়।</p> <p><strong>কাশফুল দেখতে যাবেন যেভাবে : </strong>সদরপুর সদর ইউনিয়ন থেকে আকোটের চর ইউনিয়নের মণিকোঠা বাজার হয়ে সরাসরি এক রাস্তা আকোটের চর বাজার। বাইকে যেতে চাইলে অথবা একটু কম সময়ে পৌঁছতে চাইলে নিচে বর্ণিত পথে শর্টকাটে যেতে পারবেন। ফরিদপুর সদর থেকে প্রথমে গজারিয়া বাজার, তারপর হাট কৃষ্ণপুর বাজারের ভেতর দিয়ে যেতে হবে ভাসানচর নতুন বাজার, এরপর জয় বাংলা বাজার হয়ে জামতলা বাজার। এখান থেকে খেজুরতলা বাজার হয়ে গাবতলা বাজার কিছুটা সামনে মণিকোঠা বাজার থেকে সরাসরি একটি রাস্তা আকোটের চর বাজার। এরপর ছোট একটি নদী নৌকা বা বাঁশের সাঁকো পার হলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প গুচ্ছগ্রাম। তার একটু সামনেই কাশবন।</p> <figure class="image" style="float:left"><img alt="পদ্মা" height="273" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Nahid/Untitled-5a.jpg" width="456" /> <figcaption>কাশফুল দেখতে পদ্মার চরে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা<br /> থেকে ছুটে আসছে মানুষ। ছবি : কালের কণ্ঠ</figcaption> </figure> <p>এখন প্রতিদিনই নদীর ধারে বিনোদনপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। বিনোদনপ্রেমীরা প্রিয় মানুষদের সঙ্গে পদ্মা নদীর পাড় ধরে ঘুরছেন। অনেকে আবার নৌকায় চড়ে নদীতে ভাসছেন। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেকে। ভরা পদ্মায় কাশফুলের এই সৌন্দর্যে অনেকে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করছেন</p> <p>ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আরিফা সুলতানা আশা বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে শরতের কাশফুল। একটা সময় বিভিন্ন জায়গায় কাশবনের কাশফুলগুলো দোল খেত মৃদু বাতাসে, এখন তেমন দেখা যায় না। তাই অনেক দিন পর এখানে কাশফুল হওয়াতে ঘুরতে এসেছি ভালো লাগছে অনেক।’</p> <p>কাশবনে পরিবারসহ ঘুরতে এসেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঘরবন্দি থাকতে থাকতে মনমানসিকতা কেমন যেন হয়ে গেছে। তাই একটু দূরত্ব হলেও বিকেলটা ভালোই কেটেছে। এখানে না এলে বোঝা যাবে না। অন্য রকম অনুভূতি। মন ভরে ওঠে, মুগ্ধ হয়ে যায়। কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় আর আবেশে মনটাও যেন নরম হয়ে যায়।’</p> <p>এদিকে চরে জেগে ওঠা কাশফুল বিক্রি করে সংসার চলছে চরের বাসিন্দাদের। বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা মানুষের কাছে তারা সুন্দর আঁটি বানিয়ে বিক্রি করছেন কাশফুল। প্রতি আঁটি ১০ টাকা। প্রতিদিন তাদের ১০০ থেকে ২০০ টাকা রোজগার হচ্ছে। এ ছাড়া খাবার পানি, কোক, চিপস, আমড়াসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন তারা।</p> <p>পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘তিন মাস থাকে কাশফুল এরপর ঝরে যায়। এ তিন মাস দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন দেখতে। প্রতিদিনই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে, কেউ বা বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে ঘুরতে আসেন। আমরা কাশফুল সুন্দর করে আঁটি বানিয়ে ১০ টাকা করে বিক্রি করি। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা রোজগার হয়।’</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা বি এম শিপন বলেন, ‘কাশফুল দেখতে প্রতিদিনই মানুষ আসেন পদ্মার এ চরে। এই তিন মাস চরাঞ্চলের বাসিন্দারা খুব ভালো সময় পার করেন। এখানে বিস্তীর্ণ চর ও গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এ এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। আগের চেয়ে যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো হয়েছে।’</p> <p>আকোটের চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসলাম বেপারী বলেন, ‘পদ্মাপাড়ে চরাঞ্চলে কাশফুল দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। এটা একটা বিশাল চর। কয়েক শ একর জমি হবে। এখানে মালিকানা ও খাসজমি রয়েছে। মানুষ আসতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে কারণে নদীর ওপর আগের বছর একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল, সেটি ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। এখন আপাতত নৌকায় পারাপার হওয়া লাগছে। সাঁকো নির্মাণের পর যোগাযোগ আরো ভালো হবে।’</p> <p>সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, ‘আমি এখানে নতুন জয়েন করেছি, তাই আকোটের চর কাশফুল দেখতে যাওয়া হয়নি। তবে আমি শুনেছি গত কয়েক বছর ধরে শরৎকালে বিশাল এই চরটি কাশফুলে ভরে ওঠে। এলাকার ও দূরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে ভিড় জমায়। দর্শনার্থীদের যেকোনো সমস্যা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন সব সময় বদ্ধপরিকর।’</p>