<p>বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত মানুষের জীবনকে সহজতর করে তুলছে। এরই অংশ হিসেবে আধুনিক করব্যবস্থায় ই-রিটার্ন (e-Return) একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এটি শুধু কর প্রদান প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলছে না বরং সময়, খরচ ও জটিলতাও কমাচ্ছে। বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ই-রিটার্ন সিস্টেম চালু করে কর ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে।</p> <p><strong>ই-রিটার্ন কী?</strong></p> <p>ই-রিটার্ন হলো একটি অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফরম, যেখানে করদাতারা ঘরে বসেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। এটি কর ব্যবস্থাপনার একটি আধুনিক প্রক্রিয়া, যা স্বচ্ছতা ও সময় ব্যবস্থাপনাকে সহজ করেছে।</p> <p><strong>ই-রিটার্নের সুবিধা</strong></p> <p>ই-রিটার্নের সুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সময়, খরচ এবং জটিলতা হ্রাস। এটি করদাতাদের কর অফিসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দূর করে, ঘরে বসেই সহজে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ দেয়। কাগজপত্র প্রিন্ট ও সরবরাহের প্রয়োজন না থাকায় এটি পরিবেশবান্ধব এবং খরচ সাশ্রয়ী। ই-রিটার্ন সিস্টেম যে কোনো স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে সহজলভ্য হওয়ায় করদাতারা তা সহজে ব্যবহার করতে পারেন। করদাতার সব তথ্য অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে, যা তথ্য যাচাইয়ে স্বচ্ছতা আনে। তদুপরি, কোনো ভুল তথ্য থাকলে তা সহজেই সংশোধন করা যায়, যা প্রক্রিয়াটিকে আরো কার্যকর করে তোলে।</p> <p><strong>ই-রিটার্ন প্রক্রিয়া</strong></p> <p>ই-রিটার্ন দাখিল করতে প্রথমে এনবিআরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), মোবাইল নাম্বার এবং টিআইএন নাম্বার প্রয়োজন। নিবন্ধন করার পর সিস্টেমে প্রবেশ করে আয়ের উৎস, ব্যয়, বিনিয়োগ এবং সম্পত্তির বিবরণ প্রদান করতে হয়। সব তথ্য যাচাই শেষে অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করা হয় এবং একটি রসিদ পাওয়া যায়, যা করদাতার জন্য ভবিষ্যতে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।</p> <p><strong>ই-রিটার্নের মাধ্যমে কর ব্যবস্থার উন্নতি</strong></p> <p>ই-রিটার্ন সিস্টেম কর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। এটি কর ফাঁকির প্রবণতা কমিয়েছে এবং করদাতাদের মধ্যে কর প্রদানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ই-রিটার্নের মাধ্যমে কর আদায় ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।</p> <p><strong>চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা</strong></p> <p>ই-রিটার্ন ব্যবস্থার সফলতার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক করদাতা এখনও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে দক্ষ নন। তবে সরকারের উদ্যোগে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।</p> <p><strong>শেষকথা</strong></p> <p>ই-রিটার্ন ব্যবস্থা আধুনিক কর ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি করদাতাদের জন্য যেমন সুবিধাজনক, তেমনি সরকারের আয় বৃদ্ধিতেও সহায়ক। প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ এবং জনসচেতনতার মাধ্যমে ই-রিটার্ন ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কর ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে নিয়ে যাবে।</p> <p>সময় বাঁচান, প্রযুক্তি ব্যবহার করুন এবং ই-রিটার্নের মাধ্যমে সহজ কর ব্যবস্থার অংশ হোন।</p>