<p><strong>ক. </strong>নাটোরের লালপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে মেহরাজ নামে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মেহরাজের মা এনজিও’র কিস্তির টাকা দিতে কয়েক বাড়ি দূরে গেলে, সবার অগোচরে বাড়ির পাশে পুকুরে ডুবে যায় মেহরাজ। ফিরে এসে মা দেখেন তার সন্তান পুকুরের পানিতে ভাসছে। </p> <p><strong>খ. </strong>ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় খালের পানিতে ডুবে সাত বছর বয়সী হালিমা আক্তারের মৃত্যু হয়। বাড়ির পাশে খালের পাড়ে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় হালিমা। পরে পরিবারের খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে এলাকাবাসী খালের পানিতে তার মরদেহ ভাসতে দেখে। </p> <p><strong>গ.</strong> ঢাকার উত্তর বাড্ডায় বাসার বাথরুমে বালতির পানিতে পড়ে এক বছর বয়সী মো. সালমানের মৃত্যু হয়। রাতে সালমানের মা ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এই সময় অসাবধানতাবশত বাথরুমে রাখা পানির বালতিতে পড়ে যায় সালমান। </p> <p>নাটোর ও ফরিদপুরের গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকার মতো জায়গাতেও শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। সাম্প্রতিক এসব ঘটনা আমাদের মর্মাহত করে। শুধু মেহরাজ, হালিমা বা সালমান নয়, ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? </p> <p>পানিতে ডুবে মৃত্যুকে অনেক সময় দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এটি একক কোনো ঘটনা নয় বরং এটি বর্তমানে একটি বৈশ্বিক ও জাতীয় সংকট। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই সমস্যা আরও প্রকট।</p> <p><strong>কারণ: </strong>শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব। শিশুরা পরিবারের অগোচরে পুকুর, খাল বা বাথরুমের বালতির মতো স্থানে চলে যায়। সাঁতার না জানা আরেকটি বড় কারণ, বিশেষত বাংলাদেশে যেখানে অধিকাংশ শিশুই সাঁতার শেখার সুযোগ পায় না। গ্রামাঞ্চলে পুকুর বা খালের আশপাশে নিরাপত্তার অভাব এবং শহরে সহজলভ্য পানির উৎস যেমন বালতি বা ট্যাংক শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অভিভাবকদের অসচেতনতা ও অবহেলাও এ সমস্যাকে আরও প্রকট করে।</p> <p><strong>করণীয়: </strong>এই সমস্যার সমাধানে চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই শিশুদের সাঁতার শেখানো উচিত, যা পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। পুকুর ও খালের চারপাশে সুরক্ষা বেড়া নির্মাণ এবং শহরে পানির বালতি বা ট্যাংক ঢেকে রাখা প্রয়োজন। অভিভাবকদের সচেতন করে শিশুদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি, কমিউনিটি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ এবং জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার শেখানোর কর্মসূচি ও জলাশয় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।</p> <p><strong>শেষ কথা: </strong>পানিতে ডুবে শিশুদের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি সংকট। প্রয়োজন শুধু অভিভাবকদের সচেতনতা, নিরাপদ পরিবেশ এবং সঠিক সময়ে শিশুদের সাঁতার শেখানো। একটি সুরক্ষিত ও সচেতন সমাজ গড়ে তুললে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। একটুখানি যত্ন ও উদ্যোগই পারে বহু নিষ্পাপ প্রাণ বাঁচাতে।</p> <p><em>[মতামত লেখকের নিজস্ব। কালের কণ্ঠ অনলাইন বা কালের কণ্ঠ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।]</em></p>