<p>কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়েছে। নিজেদের বাড়িঘরে পানি উঠায় অনেকে উঁচু এলাকায় অবস্থিত আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে উঠেছে। বেশির ভাগ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষিত উপজেলা মডেল মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু, প্রতিবন্ধী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীও রয়েছে। আশ্রিত মানুষদের খাবারের জোগান দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রবাসীরা। আর তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে একজন মেডিক্যাল অফিসারের নেতৃত্বে ৯টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। </p> <p>উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার ৩৪৭ জন মানুষ অবস্থান করছে। এদের মধ্যে এক হাজার একজন নারী, ৮২১ জন পুরুষ, ৪৯৮ জন শিশু, ২১ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও ছয়জন প্রতিবন্ধী রয়েছে।</p> <p>বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের মেডিক্যাল টিমের সদস্য উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার সঞ্জয় চন্দ্র পাল বলেন, ‘ইউনিয়নের আশেকের তুলাতুলী গ্রামের কাঠমিস্ত্রি সামছুল হকের স্ত্রী সন্তান সম্ভাবনা ফাতেমা আক্তার আমার চিকিৎসায় ছিলেন। ২২ আগস্ট তাদের বাড়িতে পানি ওঠে। চিকিৎসার সুবিধার্থে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শে আমি তাদের বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আসার ব্যবস্থা করি।’</p> <p> তিনি বলেন, পরদিন রাত ১টায় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বাগমারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এফডাব্লিউভি কেয়া বড়ুয়ার তত্বাবধানে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ওই নারী একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম দেন। বন্যায় জন্ম হওয়ায় তার নাম রাখা হয়েছে সুবর্ণা।</p> <p>নবজাতকের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, “বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা অবস্থায় গভীর রাতে সরকারিভাবে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে কন্যাসন্তানের মা হয়েছি। আমরা সুস্থ আছি। আমাদের চিকিৎসায় ওষুধ ও শিশু খাদ্যের ব্যয় বাবদ ‘উদ্দীপন’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন চার হাজার টাকা অর্থ সহায়তা করেছে। এলাকায় পানি কমে যাওয়ায় আমরা এখন বাড়িতে আছি।”</p> <p>লালমাই উপজেলা মেডিক্যাল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) ডা. সৈয়দা তাহসিন সিফাত বলেন, ‘বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থিত অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারি মেডিক্যাল অফিসার এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকারাও কাজ করছেন। ইতিমধ্যে আমাদের টিমের সদস্যরা আশ্রয়কেন্দ্রে একটি সফল নরমাল ডেলিভারি করিয়েছে।’  </p> <p>লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, ‘বন্যার শুরুতেই উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে তিন সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের খাদ্য, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা নিশ্চিতে একাধিক টিম গঠন করি। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তি সহায়তার পাশাপাশি সরকারিভাবে আশ্রিতদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করি। পানি কমতে থাকায় কিছু মানুষ বাড়ি ফিরেছে। বুধবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মহোদয় উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের নুরপুর আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।’</p>