<p>পর পর তিনবারের বন্যায় খাগড়াছড়িতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক বন্যা-পরবর্তী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে। গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো, কৃষি খাত ও কাঁচা ঘরবাড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতির শিকার পরিবারগুলো বন্যার পানি নেমে যাওয়ার চার দিনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। </p> <p>জেলা সদর ছাড়াও দীঘিনালা, রামগড় ও মহালছড়ি উপজেলায় বন্যাকবলিত হওয়ার সংখ্যা বেশি। জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, এই দুর্যোগে খাগড়াছড়ি জেলায় ৪০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।<br />  <br /> বন্যায় অসংখ্য গরিব পরিবারের কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নদীর তীরবর্তী বহু মানুষের ঘরবাড়ির টিন, আসবাবপত্র ও গবাদি পশু ভেসে গেছে। পানি সরে যাওয়ার চার দিন পরও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এসব বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।</p> <p>জেলা সদরের দক্ষিণ গঞ্জপাড়ার রাবু বেগম জানান, ঢলের তোড়ে তার আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা টিনের ঘরটি ভেসে গেছে। এখন খোলা আকাশের নিচে তার বসবাস। একই গ্রামের স্বামীহারা আঞ্জুমান আরা বেগমের কুঁড়েঘরটিও ভেঙে গেছে বন্যার পানিতে।<br />  <br /> শুধু মানুষের ঘরবাড়িরই ক্ষতি হয়নি, ভয়াল বন্যায় জেলার গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। জেলা সদরের ফুটবিল যাওয়ার রাস্তার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। কমলছড়ির বেতছড়ির গ্রামীণ রাস্তা ও সেতু ভেঙে গেছে। পৌর এলাকার শান্তিনগর মসজিদসংলগ্ন সেতুর অ্যাপ্রোচ ধসে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মহালছড়ির সিঙ্গিনালা সংযোগ সড়কের কাপ্তাইপাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি একাই দাঁড়িয়ে আছে। সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। </p> <p>এলজিইডির তথ্য মতে, খাগড়াছড়ি জেলায় ১০৭ কিলোমিটার রাস্তা, ১৪টি কালভার্ট ও ৩টি সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি খাতে দুই হাজার ১২৪ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতির তথ্য দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে রোপা আমন, আউশ ও গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি রয়েছে। সেচনালাও নষ্ট হয়েছে অনেক। কৃষিতে এমন ক্ষতির কারণে বাজারে শাক-সবজির দাম বেড়েছে। বহু মৎস্য খামার ভেসে গেছে।<br />  <br /> কৃষক আব্দুস সাত্তারের তিন কানি জমির সবজির বাগান একদম নষ্ট হয়ে গেছে। গোলাবাড়ীর মংক্যচিং মারমা জানান, ঋণ নিয়ে এক কানি জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু এবারের বন্যায় পলি পড়ে পুরো ধান ক্ষেত মাটিতে মিশে গেছে। জেলার এমন অন্তত ছয় হাজার কৃষকের কপাল ভেসে গেছে বন্যায়। </p> <p>জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বাছিরুল আলম জানিয়েছেন, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম রবিশস্য চাষে প্রণোদনা দেওয়া হবে। অন্যদিকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বললেন, যোগাযোগ সচল রাখতে এখন সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে খুব শিগগিরই মেরামতের কাজ শুরু হবে। </p> <p>উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ৫০২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও  সাড়ে ১২ লাখ টাকা রবাদ্দ করেছে। এর বাইরেও সেনাবাহিনী, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। ভয়াল বন্যায় টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে কেউ জানাতে পারেনি।</p>