<p style="text-align:justify">ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ‘বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিবছর আমাদের ব্যয় হচ্ছে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। আজ শনিবার রাজধানীর ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।</p> <p style="text-align:justify">সেমিনারে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ‘পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা, চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থার ঘটতি, সর্বোপরি স্বচ্ছন্দের অভাবে অসংখ্য লোক দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করে, সমাধানের মাধ্যমে রোগীদের বিদেশমুখিতা হ্রাস করা সম্ভব।’</p> <p style="text-align:justify">দেশে পরিচালিত ল্যাবরেটরির মান উন্নয়ন, বাজেট সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক এ কে আজাদ বলেন, ‘প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞান একটি সদা পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। এমতাবস্থায় বর্তমানে আমরা যা কিছু প্রত্যক্ষ করছি, আগামী ২৫ বছর পর এক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তাই সেরা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি গ্রহণ করার জন্য একটি সঠিক পাঠ্যক্রম থাকা জরুরি।’</p> <p style="text-align:justify">স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘ডব্লিউটিওর তথ্যমতে বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পান না। সেই সাথে স্থানীয় সেবায় প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মান না থাকায় বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’</p> <p style="text-align:justify">ডিসিসিআই সভাপতি এই খাতের উন্নয়নে বিশেষ করে, উন্নত অবকাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, বাজেট সহায়তা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক হাসপাতালের চেইন কার্যক্রম বাংলাদেশে চালু করা, বিদেশি ডাক্তার ও নার্সদের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করা, স্বাস্থ্য খাতের সকল ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের প্রক্রিয়াগত জটিলতা নিরসন এবং ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারিখাতে হাসপাতাল কার্যক্রম চালুকে উৎসাহিত করতে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের ওপর জোর দেন।</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ব্যয় ১১০ মার্কিন ডলার, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ব্যয় হয় ৪০১ মার্কিন ডলার।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।  প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে এবং ২০১২ সালে বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ায় বাংলাদেশিদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ হাজার ৪৬১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৮১০টি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। পাশাপাশি ৩৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি ঢাকায় অবস্থিত হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত ঢাকার ওপর চাপ বাড়ছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি উন্নত স্বাস্থ্যসেবার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে অবকাঠমোর স্বল্পতা, দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের অভাব, সরকারি হাসপাতলে সেবাপ্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, উন্নত সেবার জন্য ইন্স্যুরেন্স কভারেজের ব্যবস্থা না থাকা প্রভৃতি অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।</p> <p style="text-align:justify">বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে স্বাস্থ্য খাতের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করা, সরকারিভাবে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ইন্স্যুরেন্সের আওতায় নিয়ে আসা, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট সহায়তা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পিপিপি মডেলে ঢাকায় আন্তর্জাতিক হাসপাতালসমূহের কার্যক্রম শুরু করাসহ সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদানের ওপরও জোর দেওয়ার কথা বলেন মালিক তালহা ইসমাইল বারী।</p> <p style="text-align:justify">সেমিনারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এবং সমরিতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ বি এম হারুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিক্সের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, বিএসএমএমইউ’র স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনের সেক্রেটারি ডা. আবুল বাসার মো. জামাল এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিনের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মীর সাদউদ্দিন আহমেদ অংশগ্রহণ করেন।</p>