<p>অপরাধ জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরছেন চরমপন্থী দলের সাত জেলার ৩২৩ সদস্য। রবিবার তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন। এ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় র‌্যাব-১২  সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। </p> <p>অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম, খুরশীদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।</p> <p>তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইলসহ দেশের বেশ কিছু জেলা একসময় চরমপন্থীদের অভয়ারণ্য ছিল। এসব জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে একসময় প্রতিদিনই চাঁদাবাজি, গুম, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটত। মার্ক্স-লেলিন ও মাওবাদী আদর্শের নামে ১৪টি চরমপন্থী সংগঠন সক্রিয় ছিল এসব জনপদে। এর মধ্যে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (এমবিআরএম) ও পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি (জনযুদ্ধ) অন্যতম। ১৯৬৮ সাল থেকে এসব সংগঠনের নেতারা তরুণ ও যুবসমাজকে ভুল বুঝিয়ে তাদের দলে টানতে থাকে। </p> <p>আশি-নব্বইয়ের দশকে চরমপন্থী সংগঠনগুলো ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আলাদা রাজত্ব কায়েম করতে থাকে তারা। পরে আধিপত্য বিস্তার ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হতে থাকে। চলতে থাকে একে অপরকে হত্যা। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন চরমপন্থী দলের শীর্ষ নেতাসহ শতাধিক সদস্য। এরপর ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল পাবনায় পুলিশের কাছে ৫৯৬ জন চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।</p> <p>র‌্যাব জানায়, প্রায় দুই দশক ধরে চরমপন্থীদের দমনে র‌্যাব কাজ করছে। বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ কয়েক নেতা নিহত হলেও থেমে থাকেনি তাদের কর্মকাণ্ড। ২০২০ সালে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদকে চরমপন্থীদের আগ্রাসন থেকে রক্ষায় তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। র‌্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মগোপনে থাকা বেশ কয়েকটি সক্রিয় দলের নেতারা তিন শতাধিক সদস্য ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের সম্মতি হন। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার দুই শতাধিক অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন ৩২৩ জন চরমপন্থী সদস্য। এর মধ্যে পাবনার ১৮০, সিরাজগঞ্জের ১১, টাঙ্গাইলের ৭৪, রাজবাড়ীর ৫৪, মেহেরপুরের দুই, কুষ্টিয়া ও বগুড়ার একজন করে সদস্য রয়েছেন।</p> <p>আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রাজবাড়ীর মনির ও পাবনার দুলাল বলেন, ‘আদর্শ প্রতিষ্ঠার নামে আমরা এত দিন ভুল পথে ছিলাম। দুর্বিষহ ফেরারি জীবন আর ভালো লাগে না। তাই আমরা দলবল নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’</p> <p>সিরাজগঞ্জের দায়িত্বে থাকা চরমপন্থী দলের নেতা মোহাম্মদ সাধু বলেন, ‘র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র জমাদানের উদ্যোগে আমরা রাজি হয়েছি। পথভ্রষ্ট হয়ে এত দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেছি। এখন আমরা সামাজিক স্বীকৃতি চাই। আমাদের পুনর্বাসিত করতে আশ্বস্ত করা হয়েছে। শ্রমিকের কাজ করে ডালভাত খেয়ে হলেও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’</p> <p>র‌্যাব-১২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন বলেন, ‘চরমপন্থী দলের সদস্যরা বিভিন্ন  সোর্সের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তারা এখন ভুল পথ থেকে মূলধারায় ফিরে আসতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় র‌্যাবের উদ্যোগে রবিবার তিন শতাধিক চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করবে। পাশাপাশি তারা দুই শতাধিক অস্ত্র জমা দেবে।’</p> <p>র‌্যাবের অধিনায়ক আরো বলেন, চরমপন্থী এই সদস্যরা আত্মসমর্পণ করার পর খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ ছাড়া ছোটখাটো অপরাধগুলো সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসবে। আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হবে।</p> <p>র‌্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, আত্মসমর্পণ করা চরমপন্থী দলের সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ‘উদয়ের পথে’ নামে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এসব পরিবারের ৩০ জন নারী সদস্যকে স্বাবলম্বী করতে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হবে। পাশাপাশি মাছ চাষ, গরু বা মুরগির খামার, রিকশা ও সেলাই মেশিন প্রদানের মাধ্যমে চরমপন্থী নেতা ও সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে। এ ছাড়াও যারাই আত্মসমর্পণ করবে তাদেরকেই সরকারের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলার কথাও জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।</p>