<p>চলচ্চিত্র প্রযোজকনির্ভর ব্যবসা। প্রযোজক লগ্নি করেন, সেটা দিয়ে পরিচালক ছবি বানান, শিল্পী-কলাকুশলীরা পান পারিশ্রমিক। ফলে লগ্নীকৃত অর্থ ফেরত আসাটা জরুরি। যেটার আদি মাধ্যম প্রেক্ষাগৃহ। যুগ যুগ ধরে প্রেক্ষাগৃহে বিক্রি হওয়া টিকিটের অর্থ থেকেই ছবির লাভ-ক্ষতির খতিয়ান তৈরি হয়েছে। হিট-ফ্লপের তকমাও আসে সেখান থেকেই। তবে আধুনিক সময়ে চলচ্চিত্রের ব্যবসা নির্ভর করে আনুষঙ্গিক অনেক কিছুর ওপর। বিভিন্ন স্বত্ব বিক্রি এবং স্পন্সর নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে মুখ থুবড়ে পড়ার পরও প্রযোজককে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব।</p> <p>হলিউড-বলিউডে এই পন্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক আগেই। এখনকার বেশির ভাগ ছবিই মুক্তির আগে লগ্নির সব অর্থ তুলে নেয়। এর পেছনে অবশ্য ছবির অভিনয়শিল্পীর জনপ্রিয়তা, নির্মাতার খ্যাতি ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজির ভূমিকা থাকে বেশ। বাংলাদেশে অনেক আগে থেকে টিভি চ্যানেলে ছবি প্রদর্শিত হয়ে আসছে।</p> <p>সাম্প্রতিক সময়ে এসে মুক্তি দেওয়া হয় ডিজিটাল মাধ্যমে। পাশাপাশি স্পট-অ্যাডভার্টাইজিং কিংবা অন্যান্য বিজ্ঞাপনের সুবাদেও মেলে অর্থ। প্রেক্ষাগৃহের বাইরের বাণিজ্য কতখানি বিস্তৃত হয়েছে বাংলাদেশে? এ নিয়ে নির্মাতা-প্রযোজক-পরিবেশক অনন্য মামুন বলেন, ‘এখনো নিউ বর্ন বেবির মতো আছে। এটাকে লালন-পালনের চেষ্টা চলছে। এখন আমরা কতটুকু লালন-পালন করতে পারি, সেটা আমাদের ওপর নির্ভর করছে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিতে তো সবার মধ্যে মতবিরোধ বেড়ে গেছে। এ কারণে বিষয়টির অগ্রগতি নিয়ে একটু সন্দিহান আমি। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে হ্যাঁ, সব ছবি থেকে তো বেশি টাকা পাওয়া যায় না। যেকোনো কম্পানি তার মুনাফা দেখবে। আর্টিস্টের জনপ্রিয়তা দেখে কম্পানিগুলো এগিয়ে আসে।’</p> <p>অনন্য মামুন মনে করেন, বাংলাদেশেও শুধু স্বত্ব বিক্রি ও স্পন্সর থেকেই ছবির লগ্নি তুলে আনা সম্ভব। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ছবি সেই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি। মামুনের ভাষ্য, “অনেকে অনেক কথা বলে, তবে আমার হিসাবে এখন পর্যন্ত কোনো ছবি বাজেটের সব অর্থ রাইটস বিক্রি ও স্পন্সর থেকে তুলতে পারেনি। আর আমার ছবির কথা বললে, আমি সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছি ‘অস্তিত্ব’ থেকে। প্রায় এক কোটি টাকা পেয়েছিলাম স্পন্সর ও বিভিন্ন খাত থেকে।” </p> <p>ভিন্ন সুর পাওয়া গেল দেশের প্রতিষ্ঠিত প্রযোজক, পরিবেশক আব্দুল আজিজের কাছে। তিনি মনে করেন, স্বত্ব বিক্রি করে বড় বাজেটের ছবির লগ্নি তুলে আনা সম্ভব নয়। জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার বলেন, ‘আমাদের দেশে ডিজিটাল রাইটস মোটামুটি ঠিক আছে। কিন্তু স্যাটেলাইট রাইটস একদমই কম। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে থেকে ৪০-৫০ লাখ কিংবা বড়জোর ৬০ লাখ টাকা তুলে আনা সম্ভব।’</p> <p>জাজের অনেক ছবিই টিভি ও ডিজিটাল মাধ্যমে এসেছে। আজিজ জানান, ওটিটিতে বেশির ভাগ ছবির দাম কাছাকাছি। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন ‘পোড়ামন ২’ ও ‘দহন’ থেকে। তবে টাকার অঙ্কটা বলতে চাননি তিনি। টিভি রাইটসের দুরবস্থা নিয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘টিভি কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা স্পন্সর পায় না। এ কারণে বেশি টাকা দিতেও চায় না। যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোনো ছবিতে দেব বা জিৎ থাকলে স্যাটেলাইট রাইটস থেকে তিন-চার কোটি রুপি পর্যন্ত পায়। অথচ আমাদের শাকিব খান থাকলেও ১৫-২০ হাজারের বেশি দিতে চায় না! আসলে এখন টিভি চ্যানেল থেকে বেশি কিছু আর আশাও করা যায় না। যদি সিনেমার জন্য স্পেশালাইজড কোনো চ্যানেল আসে, তাহলে হয়তো কিছু পরিবর্তন হতে পারে।’</p> <p>নির্মাতা হিসেবে পরিচিত রেদওয়ান রনি। এখন আবার সরাসরি যুক্ত ওটিটি প্ল্যাটফরম চরকির সঙ্গে। ফলে দুই পক্ষের ভাবনা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রেক্ষাগৃহের বাইরের বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, “এই বাজারটাকে ছোট বলব না, ক্রমেই বড় হচ্ছে। কোনো কনটেন্টের গান যদি হিট হয়ে যায়, তাহলে ইউটিউব-ফেসবুক থেকেও ভালো অঙ্কের টাকা আসে। যেমনটা আমাদের ‘তুফান’-এর ক্ষেত্রে হয়েছে।”</p> <p>দেশে বেশ কয়েকটি ওটিটি প্ল্যাটফরম গড়ে উঠেছে। সেগুলোতে কোনো ছবির স্বত্ব বিক্রি করে কেমন অর্থ পাওয়া যায়? যদিও এর নির্ধারিত কোনো মাপকাঠি নেই। রেদওয়ান রনি জানালেন, ছবির মানের ওপর নির্ভর করে বাজেটের ২০ থেকে ৫০ শতাংশ টাকা পাওয়া সম্ভব।</p>