<p>একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মজিবর রহমান মাস্টার (৯৪) আর নেই। তিনি রংপুর জেলার বদরগঞ্জের কৃতি সন্তান।</p> <p>শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে রংপুরের গুডহেলথ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। </p> <p>বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে মরহুমের গ্রামের বাড়ী খিয়ারপাড়ায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে। বিষয়টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।</p> <p>ভাষাসৈনিক মজিবর রহমান মাস্টারের জন্ম ১৯৩১ সালের ১ মার্চ। দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তাঁর। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মজিবর রহমান একই উপজেলার শ্যামপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তার নামে বদরগঞ্জে রয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান কল্যাণ ট্রাস্ট’। ছোটবেলা থেকেই দেশের নানা আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন।</p> <p>সর্বপ্রথম ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে মেট্রিক পরীক্ষার্থী থাকা অবস্থায় তিনি ‘বদরগঞ্জ ভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে তার নেতৃত্ব দেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনসহ ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও তিনি ছিলেন অকুতোভয় সৈনিক। রাজনৈতিক জীবনে তিনি তৃণমূলের মানুষকে মূল্যায়ন করতেন। উত্তর জনপদের রংপুর অঞ্চলে যে ক’জন সংগ্রামী রয়েছেন তাঁর মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। </p> <p>ভাষার মাস এলে তিনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জড়ো করে শোনাতেন মুক্তিযুদ্ধ ও বায়ান্নের গল্প। ২০১৪ সালে দুই দফায় তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হলে তিনি গুরুতর আহত হন। তার হাত ভেঙে যায়। অল্পের জন্য ওই সময় প্রাণে বেঁচে যান তিনি।</p> <p> মজিবর রহমান মাস্টার ছিলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয়কর্মী। পরবর্তিতে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে তৎকালীন সরকার তাঁকে শারীরিকভাবে নাজেহালসহ নির্যাতন করে। তবুও তিনি পাকিস্তানী শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতাকে একত্রিত করে রংপুর অঞ্চলে মাতৃভাষার জন্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।</p> <p>বর্তমানে প্রায় ৯৪ বছর বয়সে এসে থেমে গেলেন এই মহান বীর যোদ্ধা। জীবদ্দশায় মনের দিক থেকে তিনি ছিলেন সেই বায়ান্ন’র টগবগে তরুণ। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গাঁথা সব তথ্য তার মনে গাঁথা ছিল। ২০২৩ সালে মজিবর রহমানের ভাগ্যে মিলেছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি একুশে পদক। </p>