<p>অহেতুক মানুষের চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় কাজ। এতে পথচারী, যানবাহন ও সামগ্রিক জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটে। আমাদের দেশে ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসিয়ে, নির্মাণসামগ্রী রেখে, অবৈধভাবে যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করে, অযৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে কিংবা গাছের ডালপালা ইত্যাদি অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রেখে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।</p> <p>সাধ্য অনুযায়ী রাস্তা থেকে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। কারণ ঈমানের অনেক শাখার মধ্যে একটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ঈমানের শাখা ৭০টিরও কিছু বেশি। অথবা ৬০টির কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই—এ কথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯)</p> <p>উপরোক্ত হাদিসে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোকে ঈমানের শাখা বলা হয়েছে। এর বিপরীত দিক চিন্তা করলে বোঝা যায়, রাস্তায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় অহেতুক এমন কাজ করা ঈমানদারের সমীচীন নয়। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত রাস্তাঘাটে মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু না করা। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে রাখা। নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের এলাকাগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা।</p> <p>এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ এক ধরনের সদকা। রাসুল (সা.) বলেন, আদমসন্তানের শরীরের প্রতিটি অস্থি প্রতিদিন নিজের ওপর সদকা ওয়াজিব করে। কারো সাক্ষাতে তাকে সালাম দেওয়া একটি সদকা। সৎ কাজের আদেশ একটি সদকা, অন্যায় থেকে নিষেধ করা একটি সদকা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা একটি সদকা। পরিবার-পরিজনের দায়দায়িত্ব বহন করা একটি সদকা। আর চাশতের দুই রাকাত নামাজ এসব কিছুর পরিপূরক হতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৮৫)</p> <p>রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরালে সম্মান নষ্ট হয় না। বরং ইখলাসের সঙ্গে মানুষের কল্যাণে কাজ করলে তার বিনিময়ে মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেন। আবু হুরায়রা (রা.)-এর সনদে রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক লোককে একটি গাছের কারণে জান্নাতে আনন্দফুর্তি করতে দেখেছি। এই গাছটি সে রাস্তার ওপর থেকে দূর করেছিল, যেটি মানুষকে কষ্ট দিত। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬৫)</p> <p>অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তাআলা তার এই কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৫২)</p> <p>উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে জানা যায়, মানুষের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। অন্যদিকে মানুষের কষ্ট হয় এমন কাজে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। রাস্তা দখল করে রাখা, রাস্তায় অহেতুক আড্ডা দিয়ে মানুষকে বিব্রত করা গর্হিত কাজ। রাসুল (সা.) এ ধরনের কাজ করতে বারণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা রাস্তার ওপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোনো পথ নেই। কেননা এটাই আমাদের ওঠাবসার জায়গা এবং আমরা এখানেই কথাবার্তা বলে থাকি। নবী (সা.) বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তাহলে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক কী? তিনি (সা.) বললেন, দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ দেওয়া এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করা। (বুখারি, হাদিস : ২৪৬৫)</p> <p>আমাদের উচিত, রাস্তায় চলাচলের সময় হাদিসে উল্লেখিত রাস্তার হকগুলো আদায় করা। কোনো ব্যক্তি উল্লেখিত হকগুলোর ব্যাপারে সচেতন হলে রাস্তাঘাট অপরিষ্কার থাকবে না, কেউ অবৈধ দখল করে রাস্তা ব্যবহার করবে না, কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইভ টিজিং, ছিনতাই ইত্যাদি করার সাহস পাবে না।</p> <p>আসুন সবাই মিলে আমাদের সমাজটা সুন্দর করি, রাস্তাগুলো করি পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ।</p>