<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা ও কিছুটা অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে সরকার ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারার ক্ষমতাবলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও তাদের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে প্রজ্ঞাপন জারি করে নিষিদ্ধ করল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ২০১৪ সালে অনুরূপ একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল (প্রস্তাব ২১৭৮), যাতে বলা হয়েছিল, কোনো দেশ তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে। বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি এ নিয়ে দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ হলো। এই দলটির পুরো ক্রিয়াকর্ম জানতে হলে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামী-বাংলাদেশ যেটি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, একই সঙ্গে একটি এনজিও হিসেবেও চলে। তারা তাদের নামের পেছনে যে দেশে তারা কাজ করে সেই দেশের নামটা জুড়ে দেয়। তবে তাদের সদর দপ্তর পাকিস্তানে। জামায়াতের জন্ম পাকিস্তানের লাহোরে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট। শুরুতে তারা পাকিস্তান সৃষ্টির কট্টর বিরোধী ছিল। ১৯০৩ সালে ভারতের হায়দরাবাদে জন্ম নেওয়া দলের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী একজন কট্টর সালাফি মৌলবাদী ছিলেন, যাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি মনে করতেন তাঁর এই দর্শন প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করাও <img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.August/04-08-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="367" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.August/04-08-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />জায়েজ। বলা হয় তাঁর গুরু ছিলেন মিসরের ইসলামিক ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্না। এই দলের একাধিক অঙ্গসংগঠনের মধ্যে আছে ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে এর নাম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। মেয়েদের মধ্যে কাজ করার জন্য আছে ইসলামী ছাত্রীশিবির। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জেনস গ্লোবাল টেররিজম (সন্ত্রাস) ইনডেক্সে ছাত্রশিবিরকে বিশ্বে তৃতীয় বেসরকারি সন্ত্রাসী দল হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জামায়াত তাদের মতবাদ জোরপূর্বক মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সন্ত্রাস আর নরহত্যার আশ্রয় নিয়েছে। এ কারণে এই দলটি জন্মের পর থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এই পর্যন্ত পাঁচবার নিষিদ্ধ হলো। ১৯৫৩ সালে মওদুদীর প্ররোচনায় পাঞ্জাবে কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ দাঙ্গা বাধায় জামায়াত। সেই দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। গৃহহীন হয় আরো কয়েক হাজার। সেবারই প্রথম পাকিস্তানের শুধু পাঞ্জাবে সামরিক আইন জারি করা হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিচার হয় এবং মওদুদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যা পরবর্তীকালে সৌদির বাদশাহ ফয়সালের অনুরোধে মওকুফ করা হয়। এই সময় প্রথমবারের মতো জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৫৯ সালে জামায়াতের প্ররোচনায় পুনরায় পাঞ্জাবে ১৯৫৩ সালের আদলে আর একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়, যাতে জান-মালের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এবারে দাঙ্গার প্রধান কারণ ছিল আইয়ুব খানের মুসলিম পারিবারিক আইনের সংস্কার। এর সূত্র ধরে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াত পাকিস্তানে পুনরায় নিষিদ্ধ হয়। গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের আমির মওদুদীসহ ৬০ জন নেতাকে, যার মধ্যে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতের আমির গোলাম আযমসহ ১৩ জন ছিলেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের (ছাত্রসংঘ) ভয়াবহ রূপ দেখেছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য তাদের এ দেশীয় কিছু সহায়ক সংগঠনের প্রয়োজন ছিল। এদের অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে ধরা হতো তারা সকলে পাকিস্তানি ভাবধারার সংগঠন হতে হবে। এই সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, পিডিপি ও নেজামে ইসলাম। জামায়াতের ইসলামী ছাত্রসংঘ নামে তরুণদের একটি সংগঠন ছিল। এই সংগঠনের সদস্যদের দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তায় তারা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলবদর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের একটি সহযোগী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলে। তাদের সঙ্গে জন্ম হয় মুসলিম লীগের আলশামস, অবাঙালিরা গড়ে তোলে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স বা ইপিক্যাফ, আর কোনো কোনো জায়গায় স্থানীয়ভাবে ধর্মাশ্রয়ী দলগুলো গড়ে তুলে নিজস্ব মুজাহিদ বাহিনী। আর প্রশাসনের বেতনভুক বাহিনী হিসেবে সৃষ্টি করা হয় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজাকার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বাহিনী। তাদের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে ছিল বেছে বেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষকে হত্যা করা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটতরাজ। নারী ধর্ষণের কাজটি শুরু হয়েছিল একাত্তরের ২৫/২৬ তারিখ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও পুরান ঢাকার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়। দেশ স্বাধীন হলে প্রথমে যে গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছিল তা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। আলবদরদের ট্রেনিং ও সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে ছিল জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী, কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও মাওলানা ইউসুফ। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের বিভিন্ন নেতা এই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। প্রায় সব এলাকায় এই আলবদর আর রাজাকাররা স্থানীয় মেয়েদের ধরে এনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অফিসারদের কাছে সরবরাহ করত। দেশ স্বাধীন হলে প্রায় প্রতিটি জেলায় এসব নারীকে উদ্ধার করেন মুক্তিযোদ্ধা আর মিত্র বাহিনীর সদস্যরা। এসব তথ্য পরবর্তীকালে  পাকিস্তানের একাধিক সেনা সদস্যের লেখা গ্রন্থ ও একাত্তরে বাংলাদেশে কী হয়েছিল তা অনুসন্ধান করার জন্য গঠিত হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্টেও লিপিবদ্ধ আছে। এসব কর্মকাণ্ড সর্বদা তত্ত্বাবধান করতেন জামায়াতের পূর্ব পাকিস্তানের আমির গোলাম আযম। এদের কাজের জন্য জামায়াত পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ সাহায্য পেত। জাতির দুর্ভাগ্য বর্তমান প্রজন্ম তাদের জন্মের পূর্বের এই কালো অধ্যায়ের অনেক কিছুই জানে না। কারণ তাদের অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ১৯৭৫ সালের পর এসব বিষয় জানতে দেওয়া হয়নি। তাদের জন্য ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ একটি বিধ্বস্ত জনপদে রূপান্তর করেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াত-আলবদর, রাজাকার, আলশামসের সহায়তা নিয়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে গোলাম আযম দেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে পাকিস্তান ও সেখান থেকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে লন্ডনে চলে যান। অন্যদের মধ্যে কেউ কেউ যান আত্মগোপনে। কিছু মধ্যম সারির নেতাকর্মী চরম বামপন্থী সংগঠন যেমন সর্বহারা পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল), জাসদ ও চীনপন্থী ন্যাপের মতো দলগুলোতে ভিড়ে যান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে জামায়াত-আলবদরের ঘাতকরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখকসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী আর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তাঁদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারের একটি পরিত্যক্ত ইটভাটাসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, কারো কারো চোখ তুলে নিয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাধীনতাযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে প্রবাসী সরকার জামায়াতে ইসলামীসহ ছয়টি দলকে নিষিদ্ধ করে। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপন (পিও-৯) বলে জামায়াতের মতো সব ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন ও গোলাম আযমসহ যেসব ব্যক্তি ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, হত্যা, গুম ইত্যাদি মানবতাবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেন। ঠিক একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানি ও হল্যান্ড। সেখানে হিটলারের নািস পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আর নািস পার্টির সঙ্গে যারাই জড়িত ছিল তাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। জার্মানি অধিকৃত হল্যান্ডে যারা নািস পার্টিকে সহায়তা করেছিল তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। ফ্রান্সে নািস সহযোগীদের ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবার ভিয়েতনাম যুদ্ধে যারা যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল তাদেরও নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। এরপর যখন বাহাত্তর সালের সংবিধান রচিত হয় তখন সেই সংবিধানে রাষ্ট্রপতির আদেশটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার অর্থ বাংলাদেশে চিরতরে জামায়াত-শিবির ছাড়াও সব ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। পাকিস্তানের এদেশীয় সব দোসরের বিচার করার জন্য সংসদে  প্রণয়ন করা হয় ১৯৭৩ সালের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দালাল আইন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সারা দেশে ৭২টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। দালাল আইনের অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সারা দেশে প্রায় ৩৭ হাজার জামায়াত, মুসলিম লীগ ও সমমনা অন্যান্য দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন এসব ট্রাইব্যুনালে ৭৫২ জনের বিচার চলছিল। জিয়া দালাল আইনে গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে মুক্ত করে দেওয়াসহ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দালাল আইন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টিও বাতিল করে দেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল করে জিয়া প্রথমেই যে অপকর্মটি করেন তা ছিল ১৯৭৬ সালে বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করে সংবিধান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের চার জাতীয় মূলনীতির অন্যতম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধর্মনিরপেক্ষতা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শব্দটি তুলে দেওয়া। একই সঙ্গে তিনি আর এক প্রজ্ঞাপনবলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জামায়াতসহ সব ধর্মাশ্রয়ী দলকে রাজনীতি করার অধিকার দেন। আরো ভয়াবহ ছিল একাত্তরের আর এক বড় মাপের দালাল শাহ আজিজ, যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে কথা বলার জন্য পাকিস্তানের প্রতিনিধি হয়ে জাতিসংঘে ওকালতি করতে গিয়েছিলেন, তাঁকে কারাগার থেকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসিয়েছিলেন। এই সময় জামায়াতের আমির গোলাম আযম, যিনি লন্ডনে পলাতক থেকে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির জন্য চাঁদা সংগ্রহ করছিলেন তাঁকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে আসতে দেওয়া হয়। সেই গোলাম আযম জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়ার শাসনামলে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে এই দেশে আবার জামায়াতের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জামায়াত ছাড়াও তাদের ঘাতক বাহিনী ইসলামী ছাত্রসংঘ ইসলামী ছাত্রশিবির নাম নিয়ে নতুন শক্তিতে আবির্ভূত হয়। তাদের প্রধান ঘাঁটি হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের রাজনীতি অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ করে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হাতে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয় তাদের জন্মদাতা জেনারেল জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের সদস্যরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের সদস্যসহ  উপাচার্যদের বাসভবন তাদের হাতে ধ্বংস হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন শিক্ষককেও হত্যার অভিযোগ আছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে শুরু হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন। এই অপরাধে বেগম জিয়ার সরকার জাহানারা ইমামসহ আরো ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রুজু করে। জাহানারা ইমাম এই মামলা মাথায় নিয়েই মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া জামায়াতের সহায়তায় সরকার গঠন করলেও তিনি তাদের কিছু সিট ছেড়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তেমন একটা ছাড় দেননি। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি এতই বেপরোয়া হয়ে যান যে তিনি জামায়াতের দুজন নেতাকে মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই করে দেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৬ সালের নির্বাচনের পূর্বে ঘোষণা করা হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে, যা তারা করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই বিচারের সময় বিচারিক ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে জামায়াতকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের নিষিদ্ধ করার কথা বলেন। এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। সর্বশেষ স্বাধীন বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মতো তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, যা দীর্ঘদিনের জনমতের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই নিষিদ্ধকরণে বিএনপি বেশ ক্ষুব্ধ, যা তাদের দলের মহাসচিব দীর্ঘ এক বিবৃতিতে প্রকাশ করেছেন। যার অর্থ হচ্ছে, তারা কোনো দিন আবার ক্ষমতায় এলে জামায়াত আবার রাজনীতিতে ফিরে আসবে। বিএনপি মনে করে, দেশবিরোধী শক্তি আর দেশের পক্ষের শক্তি একসঙ্গে রাজনীতি করার অধিকার আছে। তেমনটাই যদি হতো জার্মানি বা অন্যান্য পশ্চিমা দেশে নািস পার্টিকে পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়া হতো। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সরকার দীর্ঘদিনের জনদাবির প্রতি দেরিতে হলেও সম্মান প্রদর্শন করেছে। তাদের প্রতি এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও ইতিহাসে যারা বিশ্বাস করে তারা সবাই কৃতজ্ঞ থাকবে। সব শেষে বলতেই হয়, জামায়াত নিষিদ্ধ করা মানে তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়া নয়। তাদের আদর্শ নিয়ে নতুন নতুন সংগঠনের জন্ম হবে, তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে নানা নামে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক।</span></span></span></span></p>