<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অগণিত নবী ও রাসুল প্রেরণ করেন, সত্য ও সুন্দরের বার্তাবাহকরূপে। মানুষের অন্যায় ও পাপের কাজ থেকে বিরত রাখতে সতর্ককারী হিসেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি তোমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে; আর এমন কোনো জাতি নেই, যার কাছে সতর্ককারী আসেনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৪)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আত্মার সম্পাদনা করে, সুনির্মল মানুষ গড়তে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আত্মশুদ্ধির দাওয়াত দিতে গিয়ে কটুকথা, অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন, সামাজিক হেনস্তার শিকার হতে হয়। তবু বিন্দুমাত্র দমে যাননি। অন্ধকারে নিমজ্জিত মানবজাতিকে আলোর বার্তা অবিরাম দিয়ে যান। কারণ মনন-মানস নিষ্কলুষ বা সংস্কার ছাড়া বৃহৎ উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেক নবী ও রাসুল সর্বাগ্রে মনন-মানসের সংস্কার করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাদের অন্তরসমূহে আছে ব্যাধি। সুতরাং আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১০)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনন-মানস গঠন </span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক বংশ, রক্তের সম্পর্ক হওয়া সত্ত্বেও আবু লাহাব, আবু জাহল মহানবী (সা.)-এর চরম দুশমন ছিলেন। অহংকার, স্বার্থবাদী নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে মনগড়া রীতি-নীতি সমাজে আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। যুগে যুগে ফেরাউনের উত্তরসূরিরা কায়েমি শক্তি বাস্তবায়ন করতে মনন-মানসের সংস্কারকদের মিথ্যা অপবাদ, অত্যাচার ও দেশত্যাগে বাধ্য করে। তাদের অন্তর থাকা সত্ত্বেও বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের আছে অন্তর, তা দ্বারা তারা বুঝে না; তাদের রয়েছে চোখ, তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, তা দ্বারা তারা শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৯)। নবুয়ত লাভের পর মহানবী (সা.) মনন-মানস গঠনে মনোযোগী হন। মজবুত ঈমান, আল্লাহর আনুগত্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করলে জান্নাতে আর বিপরীতে শিরকের ভয়াবহ পরিণত জাহান্নাম। পার্থিব লোভ-লালসা, প্রবৃত্তির অনুসরণ দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংস ডেকে আনে আর আল্লাহভীরুদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি আর অনাবিল শান্তি। মানুষের সামনে নানা চিত্র তুলে ধরেন, যা প্রবল অত্যাচার ও নিপীড়নের সময় মনোবল দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে যথাযথভাবে এই কিতাব নাজিল করেছি; অতএব আল্লাহর ইবাদাত করো তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : জুমুআ, আয়াত : ২)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বোঝাতে সক্ষম হন, মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই। গোত্র ভিন্ন হলেও আল্লাহর জন্য সবাই এক সুতায় আবদ্ধ। পরস্পর সংঘবদ্ধ, সহযোগী ও আশ্রয়দানকারী মনোভাবের কারণে অল্প সময়ে ইসলামের সুমহান বার্তা দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৩)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনন-মানস সংস্কারে মুহাম্মদ (সা.)</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তবে বিচক্ষণরা অপরাধবোধ অনুভব করে এবং সংশোধনের চেষ্টা করে। আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। তাই সময়ের প্রয়োজনে ও মানবজাতিকে সংশোধনের জন্য আল্লাহ তাআলা নবী ও রাসুল প্রেরণ করেন। আত্মশুদ্ধির জন্য মহানবী (সা.) অপরাধীর প্রতি কথায় নম্রতা ও আচরণে বিনয় প্রদর্শন করেন ও অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলেন। প্রয়োজনে রাগ ও ক্ষমা করে দেন। আবু উমামা আল-বাহেলি (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সা.)-এর কাছে এক যুবক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন। এ কথা শুনে লোকজন চিৎকার দিয়ে উঠল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) যুবকটিকে কাছে নিয়ে বললেন, কেউ তোমার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হোক এটা কি তুমি চাও? যুবকটি বলল, আপনার জন্য আমি কোরবান হই। কোনো মানুষ চায় না তার মায়ের সঙ্গে কেউ ব্যভিচার করুক। রাসুলুল্লাহ (সা.) আবার বললেন, কেউ তোমার মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হোক এটা কি তুমি চাও? যুবকটি বলল, আপনার জন্য আমি কোরবান হই। কোনো মানুষ চায় না তার মেয়ের সঙ্গে কেউ ব্যভিচার করুক। এভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার বোন, ফুফু ও খালার কথা উল্লেখ করেন আর যুবকটি তা মেনে নিতে অস্বীকার করে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) যুবকটির গায়ে হাত রেখে বলেন, হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। তার অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করে দিন। তার লজ্জাস্থানকে হেফাজত করুন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪১১)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আত্মশুদ্ধিতে আদর্শ </span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধিতে আদর্শ তথা ধর্মবিশ্বাস হলো অন্যতম মূল উপাদান। গোত্র, বর্ণ, জাতি, ভাষা, অঞ্চল ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও আনসার ও মুহাজির বন্ধুতে পরিণত হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে আছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১) ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের মনন-মানস এতটাই উচ্চতায় পৌঁছে যায়, লোমহর্ষক নির্যাতনে বেলাল, খাববাবরা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাননি। কারণ তাঁরা জানে, জান্নাতে বিনিময়ে মুমিনের জীবন ও সম্পদ বিক্রি হয়ে গেছে। দুনিয়ার সামান্য দুঃখকষ্ট অনন্ত সুখের তুলনায় তুচ্ছ। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, আর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে, আল্লাহর কাছে তারা বড়ই মর্যাদাবান আর তারাই সফলকাম।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : তাওবা আয়াত : ২০)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনন গঠনে মহানবী (সা.)-এর নিত্যাভ্যাস </span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহানবী সা.-এর জীবন বইয়ের মতো প্রতিটি অধ্যায়, পরিচ্ছদে মানুষের পাঠ উপযোগী। যা অধ্যয়নে মনন-মানসের উৎকর্ষ সাধন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা (নাফস)-কে কলুষিত করেছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : আশ শামস, আয়াত : ৯-১০) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহানবী (সা.) যেসব কাজ করতেন, তার সব কিছু মনন সংস্কারের সহায়ক। মহানবী (সা.) বড়দের শ্রদ্ধা, ছোটদের স্নেহ, সাথিদের কাছে বিশ্বস্ত, পরিবার-পরিজনের কাছে আদর্শ অভিভাবক, প্রতিবেশী, সমাজ এমনকি শত্রুর কাছে আমানতদার ও ইজ্জতের রক্ষক। সালাত ও আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে ছিলেন একনিষ্ঠ। দম্ভের সঙ্গে চলাফেরা করতেন না; বরং বিনয়ের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। দৃষ্টি সংযত ও লজ্জাস্থান হেফাজতে রাখতেন। কর্কশ ও অহেতুক কথা বলতেন না, বরং মুচকি হাসি দিয়ে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতেন। নিয়মিত পরিচর্যা করতেন চুল, দাড়ি, গোঁফ, নখের। মিথ্যা, উপহাস, ঠাট্টা-তামাশা করতেন না। সবার মতামতের সম্মান করতেন এবং সর্বক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্যই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত। আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ। আর যারা জাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়। আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। আর যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান। আর যারা নিজদের সালাতসমূহ হিফাজত করে। তারাই হবে ওয়ারিশ।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১-১০)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনন সংস্কারের মধ্য দিয়ে মহানবী (সা.) সমাজ, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, নৈতিকসহ সব সংস্কারের পথ সুগম করেন।</span></span></span></span></p>