<p>মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ নবুয়তের ধারার পূর্ণতা দিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর দ্বিন ও অনুগ্রহগুলো পূর্ণতা লাভ করেছে। পবিত্র কোরআনে মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা এসেছে নানাভাবে, বর্ণনা করা হয়েছে তাঁর সামগ্রিক জীবনের পবিত্রতা। নবীজি (সা.)-এর আলোকদীপ্ত জীবন সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৬)</p> <p>কোরআনে নবীজি (সা.)-এর পবিত্রতা</p> <p>পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মহানবী (সা.)-এর পবিত্রতার ঘোষণাগুলো তুলে ধরা হলো।</p> <p>১. জ্ঞানবুদ্ধির পবিত্রতা : মহানবী (সা.)-এর জ্ঞান ও বুদ্ধি ছিল সব ধরনের মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত। ফলে তিনি কখনো বিভ্রান্ত হননি, তিনি ভুল পথে চলেননি। আল্লাহ বলেন, ‘শপথ নক্ষত্রের, যখন তা হয় অস্তমিত, তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ১-২)</p> <p>২. দাওয়াতের পবিত্রতা : মহানবী (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু প্রচার করেছেন তা যথার্থ ছিল। এতে তিনি কোনো ধরনের সংযোজন বা বিয়োজন করেননি, বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি করেননি। আল্লাহ বলেন, ‘এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। এটা তো ওহি, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩-৪)</p> <p>৩. শিক্ষার পবিত্রতা : মহানবী (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে যে শিক্ষা লাভ করেছেন তা ধারণ ও প্রচারে তাঁর কোনো ত্রুটি ছিল না এবং তিনি সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী, প্রজ্ঞাসম্পন্ন (জিবরাইল), সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল।’ (সুরা :নাজম, আয়াত : ৫-৭)</p> <p>৪. অন্তরের পবিত্রতা : মহানবী (সা.)-এর অন্তর মানবীয় কুপ্রবৃত্তি, দুর্বলতা ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত ছিল। আল্লাহ ঘোষণা দেন, ‘যা সে দেখেছে, তার অন্তঃকরণ তা অস্বীকার করেনি, সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করবে?’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ১১-১২)</p> <p>৫. দৃষ্টিশক্তির পবিত্রতা : নবীজি (সা.)-এর দৃষ্টিশক্তিও বিভ্রমমুক্ত ছিল। তা কোনো কিছু দেখতে ভুল করেননি। আল্লাহ বলেন, ‘তার দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিল।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ১৭-১৮)<br /> ৬. চারিত্রিক পবিত্রতা : মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিবের চারিত্রিক পবিত্রতার সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা : কালাম, আয়াত : ৪)</p> <p>৭. বক্ষের পবিত্রতা : মহানবী (সা.) আল্লাহর রাসুলের বক্ষকে দ্বিন ও নববী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রসারিত করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কি তোমার বক্ষকে তোমার কল্যাণে প্রশস্ত করে দিইনি।’ (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ১)</p> <p>৮. সম্মান ও খ্যাতির পবিত্রতা : মহানবী (সা.) তাঁর নিজের খ্যাতি বা সুনামের জন্য কিছুই করেননি, বরং আল্লাহই তাঁকে সম্মানিত করেছেন। তাই তিনি ছিলেন নিষ্কলুষ খ্যাতি ও সম্মানের অধিকারী। আল্লাহ বলেন, ‘এবং আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।’ (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৪)</p> <p>৯. নবুয়তের পবিত্রতা : আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নবুয়তের দাবিকে পূর্ববর্তী সব নবী-রাসুলের মাধ্যমে সত্যায়ন করেছেন। যেন তাদের পরে অনুসারীরা মহানবী (সা.)-এর প্রতি মিথ্যারোপের সুযোগ না পায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ কোরো, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে তোমাদের কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকস্বরূপে যখন একজন রাসুল আসবে তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং এই বিষয়ে আমার অঙ্গীকার কি তোমরা গ্রহণ করলে? তারা বলল, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বলেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষী রইলাম।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮১)</p> <p>১০. সমগ্র জীবনের পবিত্রতা : আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর জীবনকে এমন সব কিছু থেকে পবিত্র রেখেছিলেন, যা তাঁর জীবনকে ভারবহ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অপসারণ করেছি তোমার ভার, যা ছিল তোমার জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক।’ (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ২-৩)</p> <p>হে আল্লাহ! আপনি আপনার প্রিয় নবী, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবি ও অনুসারীদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন। আমিন।</p>