<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলামী সংস্কৃতির একটি বড় অংশ হচ্ছে ইসলামী শিল্পকলা। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামের সূচনার পর এর উৎপত্তি ঘটে। সব শিল্পই মানুষের আত্মপ্রকাশের অদম্য আবেগকে বহন করে। ইসলাম একটি সর্বজনীন পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে শিল্পকলাকে আবেগের যাবতীয় পঙ্কিলতা মুক্ত করে সম্পূর্ণ নতুন একধারার শিল্পকলা উদ্ভাবন করে, যা ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত এড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলামী শিল্পকলায় বিধি-নিষেধ </span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রাচীন শিল্পকলার অন্যতম অংশ ছিল মূর্তি, ভাস্কর্য নির্মাণ ও বিভিন্ন প্রাণীর চিত্রাঙ্কন। ইসলাম এসে এ ধরনের প্রতিকৃতি ও চিত্রাঙ্কন হারাম ঘোষণা করে। আবুল হাইয়াজ আসাদি বলেন, আলী ইবনে আবী তালেব (রা.) আমাকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি কি তোমাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য নবী (সা.) আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা এই যে তুমি সব প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সব সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দেবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে,...এবং সব চিত্র মুছে ফেলবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (মুসলিম, হাদিস : ৯৬৯)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে তাদের, যারা প্রাণীর চিত্র অঙ্কনকারী।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(বুখারি, হাদিস : ৫৬০৬)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে চূড়ান্ত বিচারে চিত্র বা মূর্তির ওপর ইসলামের যে নিষেধাজ্ঞা তা ক্ষতিকারক না হয়ে লাভজনক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কারণ এর ফলে ফুল-পাতার নকশাসহ  (</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">arebisque design)</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বিভিন্ন নতুন বা বিকল্প শিল্পকলার উদ্ভব হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলামী শিল্পকলার দিগদিগন্ত</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উমাইয়া খিলাফতকে বিবেচনা করা হয় ইসলামী শিল্পকলার প্রারম্ভিক যুগ হিসেবে। অতঃপর ১৪০০ বছরের চর্চা ও সাধনায় তা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সম্প্রতি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের দেয়াল গ্রাফিতি ও অ্যারাবিক ক্যালিগ্রাফি আমাদের তা আবারও জানান দিয়ে গেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সমগ্র ইসলামী শিল্পকলার ইতিহাস বিবেচনা করলে নিম্নোক্ত মৌলিক উপাদানগুলো পাওয়া যাবে, যার সমন্বয়ে ইসলামী শিল্পকলা গঠিত হয়েছে : </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১. ক্যালিগ্রাফি<strong> : ক্যালিগ্রাফি</strong> হলো চমৎকার লিখনশিল্প। কোরআন সংরক্ষণ প্রচেষ্টা থেকে ক্যালিগ্রাফি বা সুন্দর হস্তলিখন শিল্পের সূত্রপাত হয়েছে। এ জন্য ইসলামী ক্যালিগ্রাফিকে মাঝে মাঝে কোরআনিক শিল্প বলেও অবহিত করা হয়। অবশ্য শুধু কোরআনের আয়াতই ক্যালিগ্রাফির বিষয়বস্তু ছিল না, বরং কোরআনের আয়াত ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন উক্তি, কবিতার পঙক্তি প্রভৃতি ক্যালিগ্রাফির বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হতো।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিভিন্ন ভবনের অলংকরণে ক্যালিগ্রাফির বিপুল ব্যবহার প্রচলিত ছিল। টাইলসে অলংকরণ, কাঠ খোদাই অথবা কাপড়ে ক্যালিগ্রাফি অঙ্কনের মাধ্যমে বিভিন্ন ভবনে অলংকরণ করা হতো।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ক্যালিওগ্রাফি তৈরির সূচনা হয় মূলত আরবীয় অক্ষর দ্বারা। পরবর্তীকালে অন্যান্য ভাষায় এর চর্চা হতে থাকে। বর্তমানে বাংলা ভাষায়ও ক্যালিগ্রাফি তৈরি হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২. জ্যামিতিক<strong> নকশা</strong> : শিল্পকলায় জ্যামিতিক নকশার ব্যবহার সর্বপ্রথম মুসলমানরা আবিষ্কার করে। অনেক মুসলমান বিশ্বাস করে যে মহাবিশ্ব একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা এবং জ্যামিতিক সজ্জা এই ধারণাকে প্রতিফলিত করে। জ্যামিতি ছিল আরব গণিতবিদদের অন্যতম আগ্রহের বিষয়। তারাই শিল্পকলায় জ্যামিতিক নকশার বহুল প্রচলনে অবদাব রাখে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আট কোনাকার তারকা, এ ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। দেয়ালে মোজাইক বা কাঠের কাজের মাধ্যমে এই নকশা অঙ্কিত হতো। বর্তমানে ইসলামী স্থাপনা, পোস্টার এবং ইসলামী গ্রন্থের মোড়ক অলংকরণে জ্যামিতিক নকশার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৩. অ্যারাবিস্ক<strong> বা ফুল-পাতার নকশা : জ্যামিতিক</strong> নকশার মতো ইসলামী শিল্পকলায় নতুন ধারার একটি নকশার উদ্ভব ঘটে। যার নাম অ্যারাবিস্ক  (</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">Arabesque</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">)। এটি মূলত বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, ফুল-পাতা, নদ-নদী ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের চিত্রাঙ্কন, যা বারবার ব্যবহৃত হতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অ্যারাবিস্ক প্রায়ই মসজিদের দেয়ালে, মেঝেতে এবং ছাদে দেখা যায়। বিবিধ বস্ত্রখণ্ড যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পোশাক, মাদুর, কার্পেট, গালিচা প্রভৃতিতে এই প্রকার নকশার বহুল ব্যবহার হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৪. প্রতিকৃতি<strong> নির্মাণ : মূর্তি</strong></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বা ভাস্কর্যের বিকল্প হলো প্রতিকৃতি নির্মাণ। অনেকে মনে করেন, সৌন্দর্যবর্ধন, স্মৃতিচারণা বা জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনে স্তম্ভ, ফলক, মিনার বা অন্য কিছুর প্রতিকৃতি ইসলামী শিল্পকলায় প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণের বিকল্প হতে পারে। ষোড়শ শতাব্দীতে এসে প্রতিকৃতি অঙ্কনের প্রচলন ঘটে। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ভিত্তিক চিত্রের অঙ্কনও এ সময় ব্যাপকহারে প্রচলিত হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৫. স্থাপত্য<strong> ও অলংকরণ : মসজিদ</strong> নির্মাণশৈলী থেকে সৃষ্টি হয়েছে স্থাপত্য ও অলংকরণ শিল্পের। মহান আল্লাহ মসজিদকে সমুন্নত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সেই সব গৃহে যাকে সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন...।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(সুরা : নুর, আয়াত : ৩৬-৩৭)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলামী শিল্পকলায় স্থাপত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা বিস্তৃত হলে এর বিকাশ ঘটে, বিশেষ করে এই সময়ের মধ্যে মসজিদ, মাদরাসা, প্রাসাদ, সেতু ও ক্যারাভানসরাই নির্মাণের মাধ্যমে স্থাপত্যশিল্পে নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৮০০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইসলামী শিল্পকলা পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হয়। এই সময় তা সব সভ্যতা-সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে; ছড়িয়ে পড়ে লোক-লোকান্তরে, শহরে জনপদে। এমনকি আধুনিক শিল্প আন্দোলনের অন্যতম দিকপাল পাবলো পিকাসোর (১৮৮১-১৯৭০) ছবিতেও একসময় জ্যামিতিক নকশার প্রভাব দেখা যেত, যা তার জন্মভূমি স্পেনে দীর্ঘদিন ইসলামী খিলাফতের অধীনে থাকায় সৃষ্টি হয়েছে। সে সময় পুরো পৃথিবী যখন আঁধারে নিমজ্জিত, তখন ইসলাম বিশ্বকে আলোড়িত করেছে উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় সভ্যতায়।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>