<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাই, ভাতিজাসহ পরিবারের সদস্যদের লাগামহীন আগ্রাসন, নানা বাহানায় অন্যের জমি-ভিটা দখল, জলমহাল-হাটবাজার ইজারা থেকে শুরু করে দখল-বেদখলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে অতিষ্ঠ কিশোরগঞ্জের হাওরবাসী। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রায় দেড় দশক ধরে এই পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যরা ক্ষমতার দাপটে আর্থিক লুটপাটের পাশাপাশি লাগামহীন দখলবাজিতে মত্ত ছিলেন। সংখ্যালঘু হিন্দুসহ মুসলিম সম্প্রদায়ের জমিজমা, বাড়িঘর, হাওরের অস্থায়ী কৃষক ও জিরাতিদের শত শত একর জমি দখল করে চাষাবাদ করছেন বলে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিঠামইন সদরের গিরিশপুরের বৃদ্ধ কৃষক মো. খসরু মিয়া জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাই আবদুল হক নূরু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অরুয়াইল গ্রামের কয়েকজন কৃষকের প্রায় ১৩ একর জমি দখল করে কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ করছেন। কয়েক বছর ধরেই চলছে এ অনাচার। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি আরো জানান, জমির মালিকদের চাপে নূরুর কাছে দলিল ফেরত চাইলে তিনি দলিল দেননি। বরং তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে নূরু তাঁর বাহিনীর সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। এই বৃদ্ধসহ একাধিক ভুক্তভোগী জানান, আবদুল হক নূরু হাওরের জিরাতিদের অন্তত ২০০ একর জমি একই কায়দায় দখলে নিয়ে চাষাবাদ করছেন। তিনিসহ আরো কয়েকজন কৃষকের ২২ একর বোরো জমি ও ৩ শতাংশ বাড়ি নূরু দখল করে রেখেছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিঠামইনের হাওরে ক্যান্টনমেন্টের জন্য কয়েক বছর আগে অধিগ্রহণ করা প্রায় ৩০০ একর ভূমির বেশির ভাগের মালিক মিঠামইন সদরের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। অভিযোগ রয়েছে, নূরু-শরীফ চক্র জমি অধিগ্রহণ করে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে নিরীহ মালিকদের কাছ থেকে শতাধিক একর জমির বায়নাপত্র নেয়। পরে ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নিয়ে চক্রটি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে নির্ধারিত মূল্যের কয়েক গুণ সরকারি টাকা হাতিয়ে নেয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নলুয়া হাওরে মিঠামইন সদরের মহেন্দ্র চন্দ্র দাসের কোটি টাকা দামের প্রায় সাড়ে আট একর জমি নিরঙ্কুশ মালিকানার কাগজপত্র দেখিয়ে এই পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৬৩ সালে কেনা এই জমি যুগ যুগ ধরে তাঁদের পরিবার ভোগদখল করে আসছে। ভুলবশত জমিটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির (ভিপি) অন্তর্ভুক্তির সুযোগে আব্দুল হক নূরু পরিবার তাঁর আরেক প্রয়াত ভাই আব্দুল হাইয়ের ছেলে শায়েখের নামে জমিটি ইজারা বন্দোবস্ত নেয়। এরপর কয়েক বছর ধরেই জমিটিতে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার চাষাবাদ করে আসছে। এ ছাড়া বাজারে অবস্থিত তাঁদের বাড়ির একাংশের খালি পড়ে থাকা প্রায় পৌনে ২ শতাংশ ভিটা দখল করে নেন রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিঠামইন সদরে আব্দুল আলীর ১০ শতাংশ জায়গা রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে তাঁর পরিবার একাংশ বিক্রি করতে চাইলে আব্দুল হক নূরু কলেজের জন্য জায়গাটি নিতে রাজি হন। পরে ৩ শতাংশ জায়গা তাঁকে সাফ কবলা করে দেয় আব্দুল আলীর পরিবার। আব্দুল আলীর স্ত্রী নূরজাহান চৌধুরী জানান, পরবর্তী সময়ে দলিলের নকল তুলে দেখেন, ক্রেতা নূরু পুরো ১০ শতাংশ জায়গাই লিখে নিয়েছেন। তিনি এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৌলভীপাড়ার আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিনিসহ ছয়জনের মালিকানাধীন ১৫ শতাংশ জায়গা জোর করে দখলে নিয়ে আব্দুল হক নূরু তাঁর ধান রাখার জন্য বিশাল দুটি গুদামঘর বানিয়ে ফেলেছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নদী খননের মাটি ফেলে স্তূপ করে রাখা মিঠামইন সদরের উত্তর পাশের এলাকাটিকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হামিদ পল্লী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নাম দিয়ে বেশুমার লুটপাট চলেছে। জানা গেছে, জায়গাটি ভূমিহীনদের বরাদ্দ দেবে সরকার। কিন্তু শরীফ কামালসহ ওই পরিবারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারি জায়গা প্লট করে বিক্রি করেছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিঠামইন সদর বাজারের ফার্মেসি রোড এলাকায় অন্তত ৫০ কোটি টাকা মূল্যের খাসজমি সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবারের দখলে রয়েছে। কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে আদালতে মামলা দিয়ে নজিরবিহীন ৩৯ দিনে রায় করানো হয়। সূত্রগুলো জানায়, মিঠামইন উপজেলার সাবেক একজন ইউএনও খাসজমি করায়ত্ত করার ঘটনার তদন্ত শুরু করলে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার তড়িঘড়ি করে ওই ইউএনওকে বদলি করায়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিঠামইন সদরের বাসিন্দা ও সাবেক রাষ্ট্রপতির বিয়াই (বোনের দেবর) অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ অভিযোগ করেন, উপজেলা অডিটরিয়াম নির্মাণের কথা বলে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার তাঁর ২৪ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করায়। জমির মূল্য বাবদ সরকারের অধিগ্রহণ শাখা ৬৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করলেও তিনি পুরো টাকা পাননি। সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাই আব্দুল হক নূরু ও ভাতিজা শরীফ কামাল নানা কায়দায় এর অর্ধেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারহাটির অনন্ত দাসের এক একর জমি ১৫-১৬ বছর ধরে জোর করে দখলে রেখেছেন নূরু। বিক্রি না করায় নূরু তাঁর বাহিনী দিয়ে জমির মাটি কেটে পুকুর বানিয়ে ফেলেন। জমির দখল ফিরে পেতে চাইলে নূরু বাহিনীর সন্ত্রাসীরা অনন্ত দাসকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পেটায়। নিজের জমির দখলকারীদের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ এপ্রিল অনন্ত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। অনন্ত কোটি টাকা মূল্যের তাঁর এই জমি পুনরুদ্ধারের দাবি জানান। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৌলভীপাড়ার কলেজছাত্র শাকিল আহমেদ সাইফুল বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার পুরো মিঠামইনকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়না ঘর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বানিয়ে রেখেছেন। একই গ্রামের রেহানা বেগম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শরীফ কামাল ও আব্দুল হক নূরু আমাদের জায়গা দখল করার সব রকম চেষ্টা চালিয়েছেন। বাড়ির নিচু জায়গায় অনুমতি ছাড়াই বালু ফেলে দিয়েছেন। মারধর করেছেন পরিবারের সদস্যদের।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৌলভীপাড়ার বিধবা শিউলী বেগম জানান, শরীফ কামাল ৬ শতাংশ জায়গার লোভ দেখিয়ে তাঁদের ১ শতাংশ ভিটেবাড়ি লিখে নিয়েছেন। পরে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হামিদ পল্লী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তে ৪ শতাংশ জায়গা দিলেও লিখে দেননি। এখন তাঁদের ১ শতাংশ ভিটেমাটিতে শরীফ দোতলা টিনের ঘর তুলে দখল করে নিয়েছেন।</span></span></span></span></span></p>