<p style="text-align:justify">বাল্টিক সাগরে একের পর এক সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২২ সাল থেকে সমুদ্র তলদেশে থাকা বিভিন্ন অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তবে এসব ঘটনায় কারো ওপর দায় চাপানোর মতো সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নভেম্বর ২০২৪ : বাল্টিক টেলিকম কেবল</strong></p> <p style="text-align:justify">সর্বশেষ চলতি বছরের নভেম্বরে বাল্টিক সাগরে সুইডিশ ফাইবার-অপটিক ক্যাবল নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে নেওয়া দুইটি ফাইবার অপটিক কেবল বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এই ফাইবার অপটিক কেবল ফিনল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানি এবং সুইডেনের সঙ্গে লিথুয়ানিয়ায় সংযোগ তৈরি করেছিল। চারটি দেশই ন্যাটোর সদস্য।</p> <p style="text-align:justify">বাল্টিক সাগরের তলদেশে ১০০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২০০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত সমুদ্রের নিচের দুটি ফাইবার অপটিক কেবল ১৭ ও ১৮ নভেম্বর বিচ্ছিন্ন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">লিথুয়ানিয়া এবং সুইডেনের গটল্যান্ড দ্বীপের মধ্যে সংযোগকারী ২১৮ কিলোমিটারের ফাইবার কেবলটির সংযোগ গত ১৭ নভেম্বর বন্ধ হয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">ফিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রিত সাইবার সিকিউরিটি এবং টেলিকম কম্পানি সিনিয়া জানিয়েছে, হেলসিঙ্কি ও জার্মান বন্দর রোস্টকের মধ্যে সংযোগকারী ১২০০ কিলোমিটারের ফাইবার কেবলের সংযোগ ১৮ নভেম্বর বন্ধ হয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">এ ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তদন্ত শুরু করে। তারা দেখতে পায়, চীনা বাল্ক ক্যারিয়ার ইয়ি পেং ৩ ওই এলাকায় ছিল। বাল্ক ক্যারিয়ারটি ১৫ নভেম্বর রাশিয়ান বন্দর উস্ত-লুগা ছেড়েছিল। রয়টার্সের মেরিন ট্র্যাফিক ডাটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জাহাজটির ওই সময়ে ওই এলাকায় ছিল।</p> <p style="text-align:justify"><strong>অক্টোবর ২০২৩ : বাল্টিক কানেক্টর গ্যাস পাইপ অ্যান্ড কেবলস</strong></p> <p style="text-align:justify">গত বছরের অক্টোবরে ফিনল্যান্ড ও এস্তোনিয়াকে বাল্টিক সাগরের তলদেশে সংযুক্তকারী সাবসি গ্যাস পাইপলাইন বাল্টিক কানেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।</p> <p style="text-align:justify">ফিনল্যান্ডের তদন্তকারীরা জানান, একটি চীনা কনটেইনার জাহাজ ‘নিউনিউ পোলার বিয়ার’ অক্টোবরের প্রথম দিকে সেখান থেকে নোঙর টেনে নিয়ে গেছিল। সে কারণেই কানেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে তারা জানায়।</p> <p style="text-align:justify">এস্তোনিয়ান পুলিশ সন্দেহ করে, জাহাজটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে একটি বন্দরে যাওয়ার পথে গ্যাস পাইপলাইনে আঘাত করে। এর আগে ৭ ও ৮ অক্টোবর এস্তোনিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে সংযোগকারী দুটি পৃথক টেলিকম তারেরও ক্ষতি করে সেটি।</p> <p style="text-align:justify">ওইসময় ফিনল্যান্ড ও এস্তোনিয়াকে এ ঘটনায় তদন্তে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন। তবে পরে তার সামান্যই পূরণ করেছিল দেশটি।</p> <p style="text-align:justify">ফিনল্যান্ড ও এস্তোনিয়ার তদন্তকারীরা এখনও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি যে, হংকংয়ের পতাকাবাহী ওই জাহাজটি দুর্ঘটনাবশত নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে সমুদ্র তলদেশে ক্ষতির কারণ হয়েছে। মামলার তদন্ত এখনও শেষ করা যায়নি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>সেপ্টেম্বর ২০২২ : নর্দ স্ট্রিম বিস্ফোরণ</strong></p> <p style="text-align:justify">রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলার মধ্যেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। কিন্তু কে বা কারা এ ঘটনা ঘটায় তা এক রহস্য হয়ে দেখা দেয়। এ ঘটনার কয়েক মাস পর মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস এক রিপোর্টে বলেছিল, সম্ভবত ইউক্রেন-সমর্থক একটি গ্রুপ ওই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।</p> <p style="text-align:justify">বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস নিয়ে যাওয়ার পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম-ওয়ানের ওপর চালানো হয়েছিল ওই আক্রমণটি। সে সময় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল এ ঘটনা।</p> <p style="text-align:justify">রাশিয়া, ইউক্রেন আর ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের তোড়ের মধ্যেই ঠিক কারা এ আক্রমণ চালিয়ে থাকতে পারে, তা নিয়ে শুরু হয়েছিল ব্যাপক জল্পনা। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন একে ‘সাবোটাজ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">রাশিয়া এজন্য পশ্চিমা বিশ্বকে, বিশেষ করে ব্রিটেনকে দোষারোপ করেছিল, তবে ব্রিটেন এ অভিযোগ অস্বীকার করে। পোল্যান্ড ও ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়াকে ওই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করেছিল, যদিও তারা কোনো প্রমাণ দেয়নি।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র : রয়টার্স</p>