<p>অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সাংবাদিক কিংবা অন্য যে কেউ জড়িত থাকুক না কেন আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। মনে রাখা দরকার, সাংবাদিকদের হাত লম্বা কিন্তু আইনের হাত আরো লম্বা এবং রাষ্ট্রের হাত আরো লম্বা।’</p> <p>বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় এ কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুরে চিন্ময়কাণ্ডে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় গিয়ে তার কবর জিয়ারত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।</p> <p>তিনি আরো বলেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠী, বিশেষ মহল ও একটি বিশেষ রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট জন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। কিন্তু সাইফুলের রক্তের বিনিময়ে এই জাতি আবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলে সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যাবে।</p> <p>অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ন্যায়বিচার পাওয়ার একটা পথ তৈরি হয়েছে। ১৫ বছরে দেশে ৭০০ মতো মানুষ নির্যাতন-জুলুমের শিকার হয়েছে। বিএনপির সাত লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশ বাদী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। </p> <p>তিনি বলেন, ‘নানা অজুহাতে মিথ্যা মামলা হচ্ছে, এটা অস্বীকার করছি না। তবে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের মতো এই মামলা রাষ্ট্র কিংবা পুলিশ করছে না। বরং সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মামলা মানেই গ্রেপ্তার নয়। তদন্ত এবং যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত অপরাধীদের ধরা হবে। ন্যায়বিচারের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছি।’</p> <p>ইসকনের হামলায় চট্টগ্রামের অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা ও সনাতনী জাগরণ মঞ্চের নেতা চিম্ময় বহ্মচারী গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি বড় ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত। অভিযোগটা যেহেতু গুরুতর তাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p> <p>প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বিশেষ একটি গোষ্ঠী উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্নভাবে একটি গোষ্ঠী দেশের সম্প্রতি নষ্ট করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। অথচ দেশে আজানের সময় মন্দিরের ঘণ্টা বাজানো বন্ধ থাকে। তাই এসব প্রপাগান্ডা যারা ছড়াচ্ছে তাদের প্রতিহত করতে হবে।</p> <p>লোহাগাড়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সাইফুল ছিলেন ৭০ হাজার আইনজীবীর একটি বৃহৎ পরিবারের সদস্য। তাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলসহ সমগ্র আইনজীবী সমাজ সাইফুলের পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী এবং গ্রামবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে প্রকৃত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ </p> <p>তিনি বলেন, ‘সাইফুলের হত্যাকারীরা যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন, তারা আইনের বাইরে থাকতে পারবে না। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। সাইফুল শুধু তার পরিবারের নয়, আমাদেরও ভাই ও সহযোদ্ধা। আমরা তার পরিবারের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। খুনিরাও আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে তাদের এই অধিকার বিচারকে প্রভাবিত করবে না। আমরা আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিচার নিশ্চিত করব।’</p> <p>অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আইনজীবীরা সাইফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা জামাল উদ্দিন, মা হোসনে আরা বেগম এবং স্ত্রী ইশরাত জাহানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। এ সময় সাইফুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের হাতে মোট ১১ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা তুলে দেওয়া হয়।</p> <p>চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে ও অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচি, অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম, এনটিভির ব্যুরো প্রধান শামসুল হক হায়দরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান ও ওয়াহিদ জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাসেল আহমদ, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান সাইফুল ইসলাম শিল্পী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বিশেষ প্রতিনিধি মিয়া মোহাম্মদ আরিফ ও শাহনেওয়াজ রিটন।</p> <p>মত বিনিময়কালে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নুরুল আমীন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মারুফ রুমী, নাগরিক ঐক্য চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী নুরুল আফছার মজুমদার স্বপন, পটিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নীলা আফরোজ, রায়হান রাফি, রিদোয়ান সিদ্দিকী, আরিফ মঈনুদ্দীন, মাঈনুল ইসলাম, ইফফাত ফাইরুজ ইফা প্রমুখ।</p>