<p>বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের রেজিস্টার অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৪। ওই বিদ্যালয়ের চার শিক্ষকের মধ্যে একজন ট্রেনিংয়ে আছেন। বাকি তিন শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে এলেও আসে না শিক্ষার্থীরা। এ দৃশ্য প্রতিদিনের। </p> <p>সোনাতলা উপজেলা সদর থেকে ১০-১১ কিলোমিটার পূর্বে বাঙালি নদীর পূর্ব প্রান্তে নিভৃত পল্লী এলাকায় অবস্থিত পশ্চিম পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির কাগজে-কলমে ৩৩ শতাংশ জায়গা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ১৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৮ সালে স্থাপিত। ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টিতে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যা আট বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর। </p> <p>বিদ্যালয়টিতে অন্য কোনো ভবন না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হয়। বিদ্যালয়ের রেজিস্টার অনুযায়ী ওই বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৯ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে আটজন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে তার উল্টো। </p> <p>ওই বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এমনকি প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়েনি। এমনকি লেখাপড়ার মান নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। তাই ওই বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়ার অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য পার্শ্ববর্তী ৩-৪ কিলোমিটার দূরে হরিখালী, পদ্মপাড়া, সাতবেকী ও পাকুল্লা বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। </p> <p>তবে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন অন্য কথা। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে স্কুলে পাঠান না। </p> <p>মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনজন শিক্ষক ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে শ্রেণি কক্ষে দেখা যায়নি। এ সময় স্থানীয় অভিভাবকরা বলেন, এ দৃশ্য এক দিনের নয়, প্রতিদিনের। </p> <p>স্থানীয় ওয়াহাব সরকার, লিটন মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার এ রকম। শিক্ষকরা আসেন যখন তখন, চলে যান নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী। তাই এই বিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে চান না অভিভাবকরা। </p> <p>তারা আরো জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি। এমনকি শিক্ষা বিভাগের তদারকি নেই।</p> <p>আশপাশের পরিবেশ ও অভিভাবকদের দোষ দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তিনি ২০১৬ সালের জুন মাসে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকে একই অবস্থা দেখছেন তিনি।</p> <p>বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজনীন বেবী বলেন, ‘শুধু আজকে তাদের বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। অন্যদিন ৮-১০ জন করে শিক্ষার্থী আসে।’ তবে তারা নিয়মিত আসেন বলে জানান। </p> <p>সোনাতলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনায়েতুর রশিদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে কম আসে। তবে একেবারেই কেউ বিদ্যালয়ে আসে না, এ সম্পর্কে কেউ অবগত করেনি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির জন্য অভিভাবক সমাবেশ করে অভিভাবকদের সচেতন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’</p>