<p>সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবন্দি ও সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করছে বিএনপি। মানববন্ধন শেষে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে যাত্রা শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্বজনরা। এ সময় পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়।</p> <p>আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। কিছু দূর গেলে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। </p> <p>দুই পৃষ্ঠার এই স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে কারাবন্দি বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা বিচার প্রার্থীদের শেষ আশ্রয়স্থল এই সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছে।</p> <p>এতে বলা হয়, ‘আমাদের বিশ্বাস, বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে দেশের বিচার বিভাগকে রক্ষা করা, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আপনি (প্রধান বিচারপতি) অগ্রণী ভূমিাকা রাখবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান দমন-পীড়ন, মিথ্যা, গায়েবি হয়রানিমূলক মামলায় গণগ্রেপ্তার, পুলিশ রিমান্ডে নির্যাতন, ঢালাও সাজা প্রদান, জামিন প্রদানে না করার বিষয়ে আপনার উদ্যোগী ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমাদের অনুরোধ থাকবে, গণগ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধী মতালম্বী রাজনৈতিক বন্দিদের আশু মুক্তির জন্য আপনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও আদালত সমূহের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’</p> <p>এর আগে মাননবন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।</p> <p>এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমনপীড়নের কথা তুলে ধরতে গিয়ে আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘ওরা এত নির্মম, ওরা অত্যাচারী। ছোট ছেলেকে না পেলে বড় ভাইকে ধরে নিয়ে যায়, বড় ছেলেকে না পেলে বাবাকে নিয়ে যায়, বাবাকে না পেলে বোনকে নিয়ে যায়। আমরা এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্যে বসবাস করছি। এটা কেমন দেশ? এখানে এসেছেন এক কারবন্দি নেতার স্ত্রী তাঁর দুটি শিশু নিয়ে। ওই শিশুদের বাবাকে পুলিশ কারাগারের নিয়ে গেছে। তারা আজকে প্রতিবাদ করার ভাষা ভুলে গেছে, প্রতিবাদ করলে দেখা যায় তাকেও ধরে নিয়ে যায় বাসা থেকে।’</p> <p>মানববন্ধনে সমাবেশে কারাবন্দি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগম অসুস্থ থাকায় তাঁর চিঠি পড়ে শোনান মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।</p> <p>সাজাপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ শাহজাহানের স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া বলেন, ‘আমার স্বামীকে সম্পূর্ণ বিনা দোষে বিনা অপরাধে দুই বছরের সাজা দিয়ে জেলে আটক রাখা হয়েছে। এ রকম অনেক বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মী, ভিন্নমতের মানুষের কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশকে একটা কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। এটার অবসান আমি চাই।’</p> <p>স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবুল কালামের শিশু ছেলে ফুয়াদ বলে, ‘আমার বাবাকে ছেড়ে দেন, প্লিজ আমার বাবাকে ছেড়ে দেন।’</p> <p>কারাবন্দি দুই ছেলের (আবদুর রহিম ভুঁইয়া, আবদুর রহমান ভুঁইয়া) বাবা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, ‘আমি একটি নির্যাতিত পরিবারের অভিভাবক। আমি বিএনপি করি। এটাই আমার অপরাধ। আমার ছেলেরা বিএনপির অঙ্গসংগঠন করে। আমার বড় ছেলকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। আজকে আমরা বিএনপি করি বলে আমার পরিবারের ওপর এই ঝড় নেমে এসেছে। আমার প্রশ্ন বিএনপি করা কি অপরাধ?’</p> <p>যুবদলের সাবেক নেতা এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এটা কোন ধরনের জুলুম। যেখান পুলিশ মামলার বাদী, পুলিশ মামলার সাক্ষী দেয়। আমাদের কিছুই বলতে দেয় না। আমাদের উকিলরা যখন কথা বলতে যায় তখন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বলেন, এখানে আইনের কথা বলবেন না। তাহলে আমরা কোথায় যাব, কোথায় বিচার পাব? আমরা আজকে মজলুম পরিবার।’</p> <p>বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘এখানে আপনারা দেখেছেন অনেক মা, অনেক বাবা আজকে কাঁদছেন। তাদের স্বজনরা আজ কেউ কারাগারে, কেউ গুম হয়ে গেছে, কেউ খুন হয়ে গেছে। কিন্তু এই সরকারের হৃদয়ে তাদের কান্না শব্দ নাড়া দেয় না। ওরা অবৈধ ক্ষমতাকে শুধু টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সমানে কারাগারে ঢুকাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমরা অবসান চাই। এই অবস্থার অবসানে আসুন এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা রাজপথে নামি, প্রতিবাদ জানাই।’</p> <p>কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাবিবুর রহমান হাবিবের স্ত্রী শাহানারা মায়া, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে তাসমিনা তাব্বাসুম রাফি, সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহানা ইসলাম, মির্জা আব্বাসের ছোট বোন সাহিদা মির্জা, এস এম জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রাজিয়া জাহাঙ্গীর, ইদ্রিস আলীর স্ত্রী শিউলি বেগম, ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমানের মেয়ে মর্জিয়া আখন্দ, নেসার উদ্দিন রাব্বীর স্ত্রী মীরু, কাউসার হোসেনের স্ত্রী মোসা. মিনু আখতার, পিরোজপুরের কাজী ওয়াদিদুজ্জামান বাবলুর স্ত্রী তামান্না জাহান প্রমুখ।</p>