<p style="text-align:justify">শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের চার খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে। এগুলো হলো ব্যাংক খাত, জ্বালানি খাত, ভৌত অবকাঠামো ও আইসিটি খাত। এসব খাতের প্রকল্পগুলোতে অতিমূল্যায়ন, অনিয়ম, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তৈরি এবং বড় বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে মতবিনিময়সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের পরিকল্পনা কমিশনের নাজিয়া-সালমা সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p style="text-align:justify">সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. সেলিম রায়হান, ড. নিলর্মী, ড. এনামুল হক, ম. তামিমসহ অন্য সদস্যরা। বক্তব্য দেন ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য সদস্যরা।</p> <p style="text-align:justify">ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা ও সংকটের মূলে রয়েছে স্বেচ্ছাচারী রাজনীতি ও অনাচারী অর্থনীতি। বিগত সরকারের সময় অনাচারী অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাচারী অর্থনীতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। যতটুকু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, তার চেয়ে বেশি (টাকা) বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘শেষ বিচারে রাজনৈতিক সংস্কার ঠিক না হলে আমাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, কর্মদক্ষতা ও সুশাসনের পথে বাধা সৃষ্টি হবে। আমরা বর্তমান যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি, ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তখন কতটা স্বস্তি দিচ্ছে। অর্থাৎ এ সংস্কারগুলোর পরিধি, ধারাবাহিকতা এবং গতি কী হবে, তা নির্ধারিত হবে সরকার বর্তমান অর্থনীতি নিয়ে কতখানি আশ্বস্ত থাকে এবং জনগণ কতখানি স্বস্তিতে থাকে।’</p> <p style="text-align:justify">সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইতিবাচক সংস্কার পদ্ধতি ও কার্যক্রম আমরা লক্ষ্য করছি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ আসছে। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি পলিসি বা দলের ওপর আমরা যখন কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করি, তখন তার অর্থনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের রাজনৈতিক ভূমিকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভূমিকাকেও সংকুচিত করার পথ সৃষ্টি করি। এ বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনার মধ্যে রাখতে হচ্ছে। এসব বিষয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে কাজ করছে।’</p> <p style="text-align:justify">বৈঠকে ইআরএফ নেতারা অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাছে নানা সংস্কার ও সুপারিশ তুলে ধরেন, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিশাল অনিয়ম, তা রোধে করণীয় তুলে ধরতে কমিটিকে অনুরোধ জানান।</p> <p style="text-align:justify">শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য কিছু বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু ব্যাপকতা ও গভীরতা বলে একটা বিষয় আছে। এখন আমরা ব্যাপকতার চেয়ে গভীরতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’</p> <p style="text-align:justify">কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের সার্বিক সংকটের সমস্যাটা মোটা দাগে চিহ্নিত করলে দেখা যাবে যে এটা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৪ সালের একটি অগণতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে।</p> <p style="text-align:justify">শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রাজনৈতিক বিবেচনায় পক্ষপাতদুষ্ট মেগাপ্রকল্প। এসব মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে মেগাচুরি হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে গত ২৮ আগস্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এটি সামষ্টিক অর্থনীতির পাশাপাশি খাতওয়ারি পরিস্থিতিও পর্যালোচনা করছে।</p>