<p>এক পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় রাস্তা খুব সরু হয়ে পড়েছে। রাস্তার পাশে ভাগাড় না থাকায় সন্ধ্যার পরই রাস্তায় ময়লা জমতে জমতে কোথাও কোথাও তা রাস্তার অর্ধেক অংশ দখল করে ফেলেছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নগরবাসী। লোকজন চলাচল করছেন নাক চেপে। এ রকম দৃশ্যের দেখা মিলছে বরিশাল নগরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়। বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল সিটি করপোরেশন বলছে, সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। </p> <p>নগরবাসীর অভিযোগ, ডাস্টবিন ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন না থাকায় সন্ধ্যা হলেই বরিশাল নগরীর বিভিন্ন অলি-গলি থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে স্তূপ করে রাখা হয় প্রধান প্রধান সড়কে। এসব রাস্তা দিয়ে নাক চেপে হাঁটতে হয়। ময়লায় রাস্তার অর্ধেক দখল হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। আবার যানবাহন ধীরে চলায় বেশি সময় ধরে দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয় যাত্রী ও পথচারীদের।</p> <p>বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রাস্তার পাশে নেই কোনো ভাগাড়। তাই মানুষ ময়লা ফেলছে রাস্তায়। সেই ময়লা করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়ে যাচ্ছেন পরের দিন। এই দীর্ঘ সময়ের আবর্জনাগুলো রাস্তার পাশে জমা হতে হতে রাস্তার মাঝে এসে পড়ছে। নগরীর নাজিরারপুল, বাংলাবাজার মোড়, নবগ্রাম রোড, চৌমাথা খালের পাশে, বিএম কলেজ রাস্তাসহ অন্তত ১৫টি রাস্তায় ময়লা ফেলে তা ভাগাড়ে পরিণত করছে। এতে মূল রাস্তা অর্ধেক হয়ে গেছে।</p> <p>সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগৃহীত ময়লা-আবর্জনা এনে জড়ো করে রাখা হয় এসব রাস্তার পাশে। প্রতিদিন নগর থেকে প্রায় দুই শ মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব ময়লা-আবর্জনা রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে রাখার কথা। কিন্তু ডাস্টবিন না থাকায় স্থানীয়রা সন্ধ্যার পর ময়লা রাস্তায় ফেলে রাখেন। কিন্তু ময়লা অপসারণ করা হয় রাতে। অনেক সময় ধরে ময়লা রাস্তায় থাকায় রাস্তাগুলো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ সময় ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় রাস্তা কোথাও কোথাও ছোট হয়ে গেছে।</p> <p>নগরীর বিএম কলেজ মসজিদ গেট থেকে নতুন বাজারের দিকে হেঁটে আসার সময় নাক চেপে ধরে যাচ্ছিলেন কলেজছাত্রী স্নেহা ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম আর দুর্গন্ধ। নাক চেপে না গেলে মারা পড়তে হবে। সিটি করপোরেশন বিএম কলেজের সামনে ময়লা জমাতে জমাতে পুরো রাস্তাটাই ডাস্টবিন করে ফেলেছে।’</p> <p>সেখান দিয়ে যাওয়া আরিফুর রহমান নামের এক অটোরিকশাচালক যানটি থামিয়ে বলেন, ‘দুপুরের পর থেকেই ময়লা ফেলা শুরু হয়। বিকেল হতে হতেই ময়লা জমে রাস্তায় এসে পড়ে। রাতের দিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা অপসারণ করেন। পরের দিন দুপুরে আবার আবর্জনা একনাগাড়ে রাস্তায়ই পড়তে থাকে, এভাবেই রাস্তাটি ভাগাড়ে পরিণত হয়।’</p> <p>নগরীর নবগ্রাম রোড এলাকায় কথা হয় পথচারী সুজন হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় না। দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তাই নাক-মুখ চেপে চলতে হয়। ভাগাড় নেই, তাই স্থানীয়রা ময়লাগুলো রাস্তায় ফেলে রাখে। রাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা রাস্তায় ফেলে রাখা ময়লা অপসারণ করেন। ভাগাড়গুলো না থাকায় আবর্জনা রাস্তায় ফেলে রাখছে মানুষজন। তাই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।’</p> <p>ক্যাবের বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, ‘বরিশাল নগরীতে প্রতিদিন পাঁচ টন ময়লা-আবর্জনা তৈরি হয়। এসব ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট একটি স্থানে ফেলে সেখান থেকে ভাগাড়ে নিয়ে ফেলা উচিত। কোনোভাবেই রাস্তার ওপর ফেলা যাবে না। তাতে করে পরিবেশ নষ্ট হবে, সংক্রমিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে।’</p> <p>বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘ডাস্টবিন ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন না থাকায় ময়লা-আবর্জনা রাস্তার ওপর ফেলা হয়। রাতের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ডাস্টবিন সরবরাহের জন্য তাগিদ দেওয়ার পরেও ১৫টি ডাস্টবিন দিচ্ছেন না। তাতে করে ভোগান্তি হচ্ছে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিন নগরী থেকে দুই টন ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া শহরে আবর্জনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। কিন্তু রাস্তার পাশে ভাগাড়গুলো আগের মতো ছোটই আছে। তারা শিগগিরই এই ভাগাড়গুলো এমনভাবে পুনর্নির্মাণ করবেন, যাতে আবর্জনা আর রাস্তা পর্যন্ত না যেতে পারে।’</p>